করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আসন্ন বাজেটে খাদ্যশস্য সংগ্রহের জন্য বরাদ্দ থাকছে ১৬ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা। এই অর্থ ব্যয় করা হবে আমদানি ও অভ্যন্তরীণভাবে খাদ্যশস্য সংগ্রহ এবং ভর্তুকিতে।
চলতি অর্থবছরের তুলনায় এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে পৌনে তিনশ কোটি টাকা। সংগ্রহকৃত খাদ্যশস্যের বড় একটি অংশ বিতরণ করা হবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পেছনে। খাদ্য সংগ্রহ, পরিচালনা ও উন্নয়ন ব্যয়সহ আগামী বাজেটে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মোট বরাদ্দ থাকছে ১৯ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে উন্নয়ন খাতে ৬৭৯ কোটি টাকা এবং পরিচালনা ব্যয় ২ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। অর্থ ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
সার্বিক বরাদ্দ বাড়লেও খাদ্য খাতে ভর্তুকি কমছে আগামী বাজেটে। ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ থাকছে ৪ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা। চলতি বছর এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। খাদ্য ভর্তুকি খাতে আগামী বাজেটে কমছে ৪০১ কোটি টাকা। সাধারণত সরকার বেশি মূল্যে খাদ্যশস্য কিনে দরিদ্র মানুষের মধ্যে স্বল্পমূল্যে খোলা বাজারে বিক্রি করে থাকে। এতে যে লোকসান হয় সেটি ভর্তুকি হিসাবে গণনা করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী বছর ১০ টাকা মূল্যের খাদ্যশস্য বিতরণ কর্মসূচি চালু করা হচ্ছে না। ফলে ভর্তুকি খাতে একটি বড় সাশ্রয় হচ্ছে। যে কারণে আগামীতে ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ কমছে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ‘৩৩৩’ নম্বরে ফোন করে খাদ্য সহায়তা পাওয়ার যে হটলাইনটি চালু করা হয়েছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।
এতে অনেক নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার খাদ্য সহায়তা পাচ্ছে। গত এক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে শিখে তাদের জন্য খাদ্য, নগদ সহায়তার আকার ও পরিমাণ- দুইই বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। এ জন্য আসন্ন বাজেটে খাদ্য খাতকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে।
জানা গেছে, ৩ জুন জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হবে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট। প্রস্তাবিত এ বাজেটে আটটি অগ্রাধিকার খাতের মধ্যে একটি হচ্ছে ‘নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে স্বল্প ও বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ’ করা। এ জন্য খাদ্যশস্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে।
মূলত চলমান করোনাভাইরাসের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। ধারণা করা হচ্ছে, এ মহামারি আগামী অর্থবছরেও অব্যাহত থাকবে। ফলে তাদের প্রয়োজন হবে ত্রাণ ও স্বল্পমূল্যে খাদ্যশস্য। সেদিক বিবেচনা করে খাদ্যশস্য বিতরণ কর্মসূচি দরিদ্রদের সহায়তার ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্রমতে, দেশের খাদ্যশস্যের নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা এবং সে লক্ষ্যে আমদানি ও অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ কার্যক্রমের মাধ্যমে আগামী অর্থবছরেও প্রায় ৩৩ লাখ টন খাদ্যশস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এরমধ্যে চাল সংগ্রহ করা হবে প্রায় ২৬ লাখ টন এবং বাকি ৭ লাখ টন গম। চলতি বছরের সংশোধিত বাজেটে ২৪ লাখ ৫৫ হাজার টন খাদ্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।