নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে স্কুল পর্যায়ে ক্যাবের ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: সবার জন্য নিরাপদ এবং পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজধানীতে স্কুল পর্যায়ে নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি সচেতনতা বিষয়ক ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ইউনিভার্সিটি অব ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজে এ ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেয় প্রতিষ্ঠানটির ষষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণীর শতাধিক শিক্ষার্থী।

কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এবং ফ্রেন্ডস ইন ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশ’র (এফআইভিডিবি) যৌথ উদ্যোগে ক্যাম্পেইনে কারিগরী ও আর্থিক সহায়তা করে ওয়েল্টহাঙ্গারহিলফি।

‘স্ট্রেন্দেনিং স্মলহোলডার ফার্মস এন্ড রুরাল এন্টারপ্রাইসেস টু বেটার কোপ উইথ ক্লাইমেট চেঞ্জ ইন দ্য ভালনারেবল হাওর রিজিওনস অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ ক্যাম্পেইনে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (আইন ও নীতি) মো: ওয়াহিদুজ্জামান।

বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো: সাইদুল আরেফিন এবং ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো: জামিল উদ্দিন।

ক্যাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জামিল চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রোগ্রাম কোর্ডিনেটর আহমেদ একরাম উল্লাহ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো: ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘দেশে যে পরিমাণে প্রসেস ফুড বাড়ছে, তা ভয়ংকর আকার ধারণ করছে। এখন বাচ্চারা বাসার রান্না করা খাবার খেতে চায় না। তারা প্যাকেট ফুড বা স্ট্রিট ফুড খেতে বেশি পছন্দ করে। যার কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।’

তিনি বলেন, ‘দেশে প্রতিদিন ৩০ কোটি টাকার গ্যাস্টিকের ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। এর জন্য প্রধান কারণ বাসার খাবার বাদ দিয়ে ফুটপাত বা হোটেলের (ভাঁজাপোড়া) খাবার খাওয়া। যার কারণে কিডনি সমস্যা বা চোখের সমস্যাসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। তাই শিশুদের ফাস্ট ফুড পরিহার করে শাক সবজি বা দুধ-ডিম খেতে হবে।’

এ সময় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘শুধু তোমরা সচেতন হলে হবে না। তোমার পরিবার এবং পরিচিতজনদেরও এই বিষয়ে সচেতন করতে হবে এবং এর মাধ্যমে আমরা একটি সুস্থ জাতি পাবো। যে জাতিকে আর হাসপাতালমুখি হতে হবে না।’

মূল আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. আলী আব্বাস মোহাম্মদ খোরশেদ বলেন, আমরা যখন প্রসেস ফুড বা প্যাকেট ফুড ক্রয় করি, তখন সেখানে ফুডের পরিমাণ ও গুণগত মান সম্পর্কে লেখা থাকে। খাদ্যটির মধ্যে কি কি উপাদান আছে, তাও লেখা থাকে। তাই খাওয়ার আগে অবশ্যই দেখে নিতে হবে, সেখানে কি কি উপাদান রয়েছে এবং এর মধ্যে কোন উপাদানটি আপনার শরীরের জন্য উপকার এবং কোনটি ক্ষতিকর। সেটা নিশ্চিত হয়েই সেই খাবারটি খেতে হবে।’

আলোচনায় এফআইভিডিবি-আরইসিসি প্রজেক্টের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মো: হাসনাইন বলেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের লক্ষ্যে দেশজুড়ে আমার কাজ করছি। আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশের মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা। সেই লক্ষ্যে হাওয়ার এলাকাসহ প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের মধ্যে সচেতনতা মূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আমাদের লক্ষ্য- দেশের জনগণের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করা। আর সেই লক্ষ্যেই আজকের এই ক্যাম্পেইন। আমরা চাই, এর মাধ্যমে তোমরা সচেতন হও।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মোঃ সাইদুল আরেফিন বলেন, ‘বিগত কয়েক বছরে দেশের খাদ্যের উৎপাদন কয়েক গুণ বেড়েছে। তারপরও খাদ্য সংকট রয়েছে। এর কারণ হলো- আমরা খাবারের উপযুক্ত ব্যবহার করতে পারছি না। আমরা যদি নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের পাশাপাশি খাদ্য অপচয় রোধ করতে পারি, তাহলেই আমরা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবো।’

মো: জামিল উদ্দিন বলেন, ‘সুস্থ থাকার জন্য নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নেই। নিরাপদ খাদ্য না খেলে সুস্থ থাকা সম্ভব নয়। আর সুস্থ না থাকলে লেখাপড়া করাও সম্ভব নয়। তাই জীবনের প্রয়োজনে স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করতে হবে। তাই স্ট্রিট ফুড পরিহার করে তোমরা সবাই বাসার রান্না করা খাবার খাবে, সেটাই আহবান।’

সভাপতির বক্তব্যে জামিল চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দেশে গড় আয়ু ৭২ বছর, আর আমার বয়স ৮৪ বছর। আমার এখনো সুস্থ থাকার কারণ হচ্ছে, আমি সব সময় বাসায় রান্না করা খাবার খাই, স্বাস্থ্যকর খাবার খাই, আমি অস্বাস্থ্যকর খাবার খাই না। তাই আমি গড় আয়ু পার করতে পেরেছি। তাই তোমরাও যদি সুস্থ থাকতে চাও আমার মতো নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করো। এতে তোমার ভবিষ্যত আরও উজ্জ্বল হবে।’

শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন বক্তব্যে ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূইয়া বলেন, তোমরা আগামীর ভবিষ্যত। তাই ভবিষ্যত বাংলাদেশের জন্য তোমাদের সুস্থ ভাবে বেড়ে উঠতে হবে। কারণ নতুন প্রজন্ম সুস্থ ধারায় বেড়ে উঠলে, সুন্দর হবে আগামীর বাংলাদেশ। তাই, সুস্থতার জন্য তোমাদের অবশ্যই অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার করে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করতে হবে।

পরে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবারের রান্না শেখান জনপ্রিয় রন্ধন শিল্পী তাপসী মরিয়ম এবং আফলাতুন নাহার।

এ সময় বাসা থেকে রান্না করে আনা বিভিন্ন খাবার প্রদর্শন করেন শিক্ষার্থীরা।

এসএম