রমজানে বাজার স্থিতিশীল রাখার দাবিতে ক্যাব চট্টগ্রামের রিকশা মিছিল

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: সরকার চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুর আমদানির ওপর শুল্ক কমিয়েছে। খাদ্যপণ্য আমদানির ওপর সরকার পাঁচ শতাংশ রাজস্ব কর হ্রাস করেছে। কিন্তু দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে তার কোনো প্রভাব নেই। উল্টো কমার পরিবর্তে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে লিটারে দুই টাকার কাছাকাছি, পেঁয়াজের দামও আগের মতোই অস্থির। কিন্তু মূল্য পরিস্থিতি ভোক্তার কাঙ্ক্ষিত নাগালের কাছে-মধ্যেই আসছে না। ভরা মৌসুমের মধ্যে একদিকে চালের ঊর্ধ্বমূল্য, অন্যদিকে শীতকালীন শাক-সবজির ভালো উৎপাদনের মধ্যে এসবের বাড়তি মূল্য সাধারণের ক্রয়-ক্ষমতাকে সদম্ভে বৃদ্ধাঙ্গগুলি দেখিয়ে যাচ্ছে।

আইন প্রয়োগে শিথিলতা ও স্থানীয় প্রশাসনের আশ্রয়-প্রশ্রয়ের কারণে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীরা বার বার পেয়াঁজসহ নিত্যপণ্যের বাজারে কারসাজি, মজুত ও অতিমুনাফাসহ নানা কারসাজি করছেন। আর যারা এগুলো দেখার দায়িত্ব তারা দেখেনি বা কোন অভিযোগ পাই নাই- এভাবে নানা অজুহাতে বিষয়টিকে পাশ কাটানোর কারণে ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে ভোক্তাদের পকেট কাটছে।

ব্যবসায়ীরা একবার পেয়াঁজ, একবার আলু, একবার আদা-মসলা, আরেকবার স্যালাইন আবার ডাবের মতো পণ্য নিয়ে কারসাজি করে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। আবার আইন প্রয়োগে চেহারা ও রাজনৈতিক পরিচয় দেখে ব্যবস্থা নেবার কারণে আইনের স্বাভাবিক গতি বার বার ব্যাহত হচ্ছে। আর সংকট হলেই প্রশাসন বলেই বেড়ান সাড়াশি অভিযান হবে বলে হুংকার দিলেও শেষ পর্যন্ত খুচরা দোকানে লোক দেখানো কিছু অভিযান পরিচালনা করে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের সদিচ্ছাকে কার্যত ব্যর্থ করে দিচ্ছেন। যার কারণে প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় প্রশাসনকে বার বার বাজার তদারকিতে সম্পৃক্ততা বাড়ানোর নির্দেশনা দিলেও সেগুলো কাগজে কলমেই থেকে যাচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে তার কোন সুফল আসছে না।

মঙ্গলবার কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রামের উদ্যোগে আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে ও সিন্ডিকেট কারসাজি বন্ধের দাবিতে রিকশা মিছিল ও মানববন্ধনে ক্যাব সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এসব মন্তব্য করেন।

ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি আবু হানিফ নোমানের সঞ্চালনায় রিকশা মিছিল ও মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন; পরিবেশবিদ, শিক্ষাবিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. ইদ্রিস আলী, ন্যাপ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিটুল দাস গুপ্ত, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম জাহাঙ্গীর, ক্যাব চান্দগাও থানার সভাপতি মোহাম্মদ জানে আলম, ক্যাব পাহাড়তলীর হারুন গফুর ভূঁইয়া, ক্যাব চকবাজারের আবদুল আলীম, ক্যাব বায়েজিদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবম হুমায়ুন কবির, ক্যাব হাটহাজারীর লায়লা ইয়াছমিন, ক্যাব যুব গ্রুপের রাসেল উদ্দীন, এমদাদুল ইসলাম, আবরারুল করিম নেহাল, আরাফাত হোসেন, সাফার আহমেদ, তানিয়া সুলতানা, রাকিবুল ইসলাম, আতিশ বড়ুয়া, কোবাইস প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, পবিত্র মাহে রমজানে মধ্যপ্রাচ্যসহ অনেক দেশে মূল্য ছাড় হলেও বাংলাদেশে তার বিপরীত। একশ্রেণীর ব্যবসায়ীর যুক্তি রমজানে এক মাস ব্যবসা করবে, ১১ মাস বসে থাকবো। সে কারণে রমাজান মাসে মৌসুমী ব্যবসায়ীর ছাড়াছড়ি, আর হাত বদল হলেই লাভের অংক বাড়ে। কোনো প্রকার কাগজপত্র ছাড়া আমদানিকারকের কমিশন এজেন্ট, আড়তদার পরিচয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আলু, পেঁয়াজসহ ভোগ্যপণ্যের মুজত ও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করছেন। দেশের চাহিদার সিংহ ভাগ দেশীয় উৎপাদন দিয়ে মেটানো সম্ভব হলেও ব্যবসায়ীরা আমদানিকৃত পেঁয়াজ-আলু বিক্রিতে স্বাচ্ছ্যন্দ বোধ করেন। ২০১৯ সালেও ব্যবসায়ীরা একই কায়দায় পেয়াঁজের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিলো। এবারও তারা একই কায়দায় ক্রেতাদের পকেট কাটছে। প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করলেই ধর্মঘটসহ নানা হুমকি প্রদান করছে। অপকর্মের হোতাদের বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তির পরিবর্তে জামাই আদরের কারণে তারা বার বার এ ধরনের অপকর্ম করে যাচ্ছে।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, মানুষের জনদুর্ভোগ লাগবে কার্যকরী ও বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ভ্রাম্যমাণ আদালত, সমন্বিত বাজার তদারকি কার্যক্রম উদ্ভাবনী মডেল হলেও বর্তমানে সেটাকে অকার্যকর করতে নানা চক্রান্ত চলছে। প্রশাসন অভিযান চালালেই ব্যবসায়ীদের প্রত হয়রানি বলে এটা বন্ধে নানা অপতৎপরতা চালান। গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ী খাদ্য সিন্ডিকেট করে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছেন।