ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: ‘জীবন বাঁচাও, সিন্ডিকেট থামাও’ এমন প্রতিপাদ্যে চট্টগ্রামে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর বাজারভিত্তিক প্রচারণা শুরু হয়েছে।
শনিবার বিকেল ৪টার দিকে নগরীর ২ নং গেইট কর্ণফুলী কমপ্লেক্স চত্বরে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন।
ক্যাব চট্টগ্রাম ও ক্যাব যুব গ্রুপের উদ্যোগে আয়োজিত কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বেশ কয়েক বছর আগে বন্যায় পেঁয়াজ উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হলে পেয়াঁজের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়েছিল। ভারতীয় ক্রেতারা তখন পেঁয়াজ কেনা কমিয়ে দিয়েছিল। পরবর্তীতে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ বিক্রি করতে না পেরে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে পঁচে যায়। আমাদের দেশেও বছর দু’এক আগে অতি লাভের আশায় পেঁয়াজ মজুত করলে পরে বিক্রি করতে না পেরে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা বিপুল পরিমাণ লোকসান দেন। ঠিক একই ভাবে ছোলা আমদানি করে বেশি দামে বিক্রি করার জন্য ব্যবসায়ীরা ছোলা মজুত করলেও রমজানের মৌসুমে ছোলা বিক্রি করতে না পেরে লোকসান গুনতে হয়েছিল। এ বছর দেশীয় খামারীরা ঈদ-উল-আজহায় বেশী দামের আশায় গরু বিক্রি না করে দাম ধরে রাখেন, পরবর্তীতে ক্রেতারা যখন বেশি দামে কেনা কমিয়ে দেন ফলে বিপুল পরিমাণ গরু অবিক্রিত থেকে যায়।
বক্তারা আরও বলেন, আবার দেশে পর্যাপ্ত উৎপাদন সত্ত্বেও কাঁচা মরিচ ইতিহাসের সব চেয়ে বেশী দামে কিনতে হয়েছে। সরকার দাম কমানোর জন্য ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দিলে কয়েকদিন দাম কম ছিল। চাহিদা বাড়তে থাকায় ব্যবসায়ীরা দাম আবার বাড়িয়ে দেন। এ অবস্থায় সাধারণ ক্রেতারা বাজার তদারকিতে সরকারের গাফলতিকে দায়ী করলেও ভোক্তা হিসেবে আমাদের কি কোনো দায় দায়িত্ব নেই? ভোক্তা হিসেবে জাতিসংঘ স্বীকৃত ভোক্তা অধিকারগুলো যে রকম আমরা উপভোগ করবো ঠিক তেমনই আমাদের দায়িত্বগুলো সম্পর্কে আমাদের দায়িত্ববান হতে হবে। বিশেষ করে পণ্য বা সেবার মান ও গুনাগুন সম্পর্কে সচেতন ও জিজ্ঞাসু হওয়া, দর-দাম যাচাই করে সঠিক পণ্যটি বাছাই করা, আপনার আচরণে অন্য ক্রেতা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন সে ব্যাপারে সচেতন থাকা, ক্রেতা-ভোক্তা হিসেবে অধিকার সংরক্ষণে সোচ্চার ও সংগঠিত হওয়া।
ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, তাই দাম বাড়লে হুড়াহুড়ি করে হুমড়ি খেয়ে খাদ্যপণ্য ক্রয় না করা, মাসের বাজার একসঙ্গে না কিনে সপ্তাহের বাজার করে নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করা দরকার। বাজারে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের বলে থাকেন একসঙ্গে মাসের বাজার করেন, নইলে কিন্তু দাম বেড়ে যাবে? কিছু স্টক করে রাখেন ইত্যাদি করে সরবরাহ লাইনে সংকট তৈরী করে কিছু ব্যবসায়ী দাম বাড়ানোর সুযোগ নেন। তাই ব্যবসায়ীদের এই অপতৎপরতায় পা না দিয়ে মাসের বাজার একসঙ্গে না করে সপ্তাহের বাজার করা হলে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ লাইনে সংকট তৈরী হবে না।
একইসঙ্গে অতিমুনাফাকারী, মজুতদার ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা করা ও তাদেরকে সামাজিক ভাবে বয়কট করার আহ্বান জানান তিনি।
ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি আবু হানিফ নোমানের সঞ্চালনায় সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান, বিশিষ্ট নারী নেত্রী ও ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, ন্যাশনাল আওয়ামী লীগ (ন্যাপ)’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিটুল দাস গুপ্ত, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ জানে আলম, ক্যাব বায়েজিদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবম হুমায়ুন কবির, বায়েজিদ থানা মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী জোহরা বেগম, সদরঘাট থানা থানা ক্যাবের সভাপতি শাহীন চৌধুরী, কিন্ডার গার্ডেন ঐক্য পরিষদের নেতা অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান দুর্জয়, ক্যাব পাহাড়তলীর হারুন গফুর ভূঁইয়া, ক্যাব চান্দগাঁও এর আবদুর রহমান, এডাব’র চট্টগ্রামের বিভাগীয় সমন্বয়কারী ফোরকান মাহমুদ, মানবাধিকার কর্মী লায়লা ইয়াছমিন, ক্যাব যুব গ্রুপের সিনিয়র সহ-সভাপতি নিলয় বর্মন, আইন সম্পাদক মিনা আকতার, সহ-সম্পাদক আমজাদুল হক আয়াজ, মো. খাইরুল ইসলাম, ফজলে রাব্বি তৌহিদ, পলি দাস, চিং মা মারমা প্রমুখ।
চট্টগ্রাম মহানগরীর ২১টি বাজারে এ ধরনের প্রচারাভিযানের উদ্যোগ নেয়া হবে।