ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: অস্বাস্থকর, অনিরাপদ ও ফুডগ্রেডবিহীন ড্রামে ভোজ্যতেল ব্যবহারের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে ও গ্রীন ভয়েসের কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক হুমায়ুন কবির সুমনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সাবেক যুগ্ম সচিব ও ক্যাব কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহা. শওকত আলী খান, ক্যাবের সম্মানিত সদস্য আবুল কালাম আজাদ, আনোয়ার হোসেন ও শাহজাহান মুন্সী এবং বাংলাদেশ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক ও মহিউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, আমরা জানি ভোজ্যতেল সংরক্ষণ বা সরবরাহের ক্ষেত্রে নীল রঙের কেমিক্যালের ড্রাম ব্যবহার করা হয়। যার ফলে ভোজ্যতেল বিষাক্ত হয়ে যেতে পারে। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন কোনো উপকরণ দিয়ে তৈরি প্যাকেট বা পাত্রে ভোজ্যতেল বাজারজাত করা যাবে না।
তারা বলেন, ড্রামে বাজারজাতকৃত ৫৯ শতাংশ ভোজ্যতেলেই সঠিক মাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ নেই। ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে- অপরিণত শিশুর জন্ম, মহিলাদের গর্ভধারণে সমস্যা, শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস, জন্মগত ত্রুটি, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ, রাতকানা, চোখ শুষ্ক হয়ে অন্ধত্বের সৃষ্টি হয়, শিশু মৃত্যু বৃদ্ধি এবং চামড়া শুষ্ক হয়ে যাওয়াসহ নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে হৃদরোগ, কিডনি রোগসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের প্রকোপ বেড়ে চলেছে। ড্রামের অস্বাস্থ্যকর এসব তেল গ্রহণের কারণে এই পরিস্থিতি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
তারা আরও বলেন, সরকার ২০২২ সালের ১৬ মার্চের মধ্যে অস্বাস্থ্যকর ননফুড গ্রেডেড ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাত ও পরিবহন বন্ধ করার জন্য নির্দেশ জারি করেন। কিন্তু কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতি এবং অন্যান্য সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সময়সীমা আরও বাড়ানো হয়। সয়াবিন তেল বাজারজাতকরণের সময়সীমা ওই বছরের ৩১ জুলাই এবং খোলা পাম অয়েল বাজারজাতকরণের সময়সীমা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এই সময়সীমার পর অস্বাস্থ্যকর, অনিরাপদ ও ফুডগ্রেডবিহীন ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাত বন্ধকরণ শতভাগ নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও সরকার এটি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
মানববন্ধনে বেশকিছু দাবি জানিয়েছে ক্যাব। সেগুলো হলো-
১. সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান (জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বিএসটিআই) কর্তৃক ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মার্কেট মনিটরিং করা হয় কিন্তু কোনো মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে না। মার্কেট মনিটরিং এ কোনো ধরনের জরিমানা করা হয় না। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে আইন অমান্যকারী ব্যবসায়ীদের সরকারি নিষেধাজ্ঞা মান্য করতে বাধ্য করতে হবে।
২. আইন প্রতিপালনে ব্যবসায়ীদেরকে কেমিক্যাল ড্রামের পরিবর্তে ফুড গ্রেডেড বোতল/প্যাকে ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণে বাধ্য করতে হবে।
৩. রিফাইনারি কোম্পানিগুলো যেসব ড্রামে তেল সরবরাহ করে সেগুলোতে লেবেল এবং উৎস শনাক্তকরণ তথ্য যুক্ত করতে হবে।
৪. সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারী রিফাইনারি ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কঠোর আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি প্রদান করতে হবে। প্রয়োজনে তাদের খাদ্য ব্যবসার লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করতে হবে।
৫. অস্বাস্থ্যকর, অনিরাপদ ও ফুডগ্রেডবিহীন ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাত বন্ধকরণে ব্যবসায়ীদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
৬. ড্রামের অস্বাস্থ্যকর তেলের স্বাস্থ্য ক্ষতি সম্পর্কে নীতিনির্ধারক, উৎপাদক, সরবরাহকারী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
৭. সরকার, জনস্বাস্থ্যবিদ, সুশীল সমাজ, জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যম, উন্নয়ন সহযোগীসহ সংশ্লিষ্ট সকলে মিলে ভোক্তাদের খোলা ভোজ্যতেলের পরিবর্তে বোতল/প্যাকেটজাত ভোজ্যতেল গ্রহণের জন্য উৎসাহিত করতে হবে।