ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: বাংলাদেশে সব ধরনের পণ্য সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে বিক্রি হলেও তামাকজাত দ্রব্য বিশেষত সিগারেট সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। দশকের পর দশক ধরে এভাবে অবৈধ ভাবে ব্যবসা করে তামাক কোম্পানিগুলো এবং ভোক্তার অধিকার হরণ করে আসছে। একইসঙ্গে ব্যবসায়িক নীতি না মেনে অবৈধ ভাবে ব্যবসার মাধ্যমে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে।
মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায় কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদন, এনবিআরের তদন্ত প্রতিবেদন থেকে প্রমাণ হয়েছে বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো নিজেদের ইচ্ছেমতো প্যাকেটে মুদ্রিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সিগারেট বিক্রি করছে। তামাক কোম্পনির প্রতিনিধিরা খুচরা বিক্রেতাদের কোনো ধরনের ট্রেড মার্জিন না দিয়ে সিগারেট বাজারজাত করে এবং ভোক্তাদের কাছে বাড়তি দামে বিক্রি করতে খুচরা বিক্রেতাদের প্ররোচিত করে। বাড়তি খুচরা বিক্রয় মূল্যটিও তামাক কোম্পনির প্রতিনিধিরাই নির্ধারণ করে দেয়। এভাবে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সিগারেট বিক্রি করে তারা ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন ভঙ্গ করছে, একইসঙ্গে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে।
বিভিন্ন গবেষণা ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে সিগারেট বিক্রির পেছনে সবচেয়ে বড় বাধা তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ। চলতি বছরের বাজেটে সিগারেটের চারটি স্তরে মূল্য বৃদ্ধি ও করহার বৃদ্ধি করা হয়েছে। দেশে সিগারেট সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় খুচরা সলাকায়। এ জন্য সরকার সিগারেটের মূল্য এমন ভাবে নির্ধারণ করেছে যাতে ১ শলাকা সিগারেটের মূল্যে খুচরা পয়সা না থাকে। যা অত্যন্ত ইতিবাচক ছিলো। কিন্তু বরাবরের মতো এবারও তামাক কোম্পানিগুলো ১ শলাকা সিগারেটের মূল্যে ভাঙতি পয়সা রেখে মূল্য নির্ধারণ করেছে ভাঙতি পয়সার অংশটুকু বাড়িয়ে নিয়ে পূর্ণ টাকায় বিক্রি করছে। এর মাধ্যমে সরকারের নীতিকে আরও একবার লঙ্ঘন করে রাজস্ব ফাঁকির পাশাপাশি ভোক্তাদের অধিকার হরণ করা হচ্ছে।
জাতীয় বাজেটে সিগারেটের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে এবং সিগারেটের মূল্য নির্ধারণ করে জাতীয় রাজস্ব বোড সিগারেটের প্যাকেটে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য মুদ্রণ এবং সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের অধিক মূল্যে কোনো পর্যায়েই সিগারেট বিক্র না করা নিশ্চিত করতে আদেশ জারি করেছে। তারপরও তামাক কোম্পানির ভোক্তা অধিকার বিরোধি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর গবেষণায় উঠে এসেছে কোম্পানিগুলো সিগারেটের প্যাকেটে একটি মূল্য (এসআরপি) লেখে, কিন্তু খুচরা বিক্রির সময় ৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি করে। সিগারেটে খুচরা বিক্রয় মূল্যের ওপর কর পরিশোধিত হয়। প্যাকেটে লেখা এমআরপি’র ওপর কর পরিশোধ করে ভোক্তা পর্যায়ে বেশি দামে বিক্রি করলে বাড়তি দামের ওপর সরকার কোনো রাজস্ব পায় না, এর পুরোটাই তামাক কোম্পানির মুনাফা হিসাবে জমা হয়। এভাবে তারা বছরে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে।
আবার জাতীয় বাজেটে সরকার যখন সিগারেটের মূল্য বৃদ্ধি করে তখন তারা আগের অর্থবছরের মূল্য লিখিত (এবং আগের অর্থবছরের মূল্যে কর পরিশোধিত) সিগারেট নতুন বর্ধিত মূল্যে বিক্রি করে। এভাবে তারা আরো একবার ভোক্তা-অধিকার হরণ করে এবং রাজস্ব ফাঁকি দেয়।
তামাক কোম্পানিগুলো দেশের আইন মেনে ব্যবসা পরিচালনা করবে বলেই প্রত্যাশা করি। কিন্তু দশকের পর দশক এভাবে আইন ভেঙ্গে অবৈধ ভাবে ব্যবসা করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি এবং ভোক্তাদের অধিকার লঙ্ঘন করছে। যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে এসব তামাক কোম্পানি বিগত দিনে ফাঁকি দেয়া অর্থ ফেরত নেয়ার পাশাপাশি দ্রুত আইনের বাস্তবায়ন করা জরুরি। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়, এনবিআর ও জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে এবং পারস্পরিক সমন্বয় বাড়াতে হবে বলে আমরা মনে করি।