ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: ভোক্তার জ্বালানি অধিকার সংরক্ষণে ও জ্বালানি নিরাপত্তায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়নের লক্ষ্যে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) উদ্যোগে ‘জ্বালানি বিষয়ক সংসদীয় প্রদর্শনী বিতর্ক-২০২৪’এর ২য় পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (০৩ অক্টোবর) রাতে ভার্চুয়ালী এই বিতর্কের আয়োজন করে ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনটি।
বিতর্কের প্রস্তাবনা ছিল ‘এই সংসদ মনে করে, কার্যকর পলিসিই ন্যায্য জ্বালানি রুপান্তর নিশ্চিত করতে পারে’।
এতে সরকার দলের প্রতিযোগী ছিলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ই্ংরেজি ডিপার্টমেন্ট ডিবেটিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান, হাজি মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম খোকন এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং এর (নৈয়ায়িক) সহ-সভাপতি মো: মোহিদুর হাসান মঈন।
বিরোধী দলে ছিলেন, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফাহিম মোন্তাসির রহমান, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক সভাপতি মো: নাজমুস শাকীব সিজান এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল বিতর্ক পাঠশালার সহ-সভাপতি মো: সাগর ইসলাম।
প্রতিযোগীতায় বিচারক ছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি রক্তিম মিলন এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং অর্গানাইজেশনের সাবেক সহ-সভাপতি জাফর সাদিক।
রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং এসোসিয়েশনের সাবেক বিতার্কিক মো: সোহানুর রহমান সোহানের সঞ্চালনায় এতে স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক সহ-সভাপতি উত্তম রায়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপার (কক্সবাজার অঞ্চল) আল আসাদ মো: মাহফুজুল ইসলাম, একশনএইড বাংলাদেশ’র জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশনের প্রোগ্রাম অফিসার নাজিয়া ইয়াসমিন, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইইই বিভাগের লেকচারার (ল্যাব) মো. শিহাব উদ্দিন এবং সিপিডি’র জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তী।
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ক্যাবের কো-অর্ডিনেটর (রিসার্চ) প্রকৌশলী শুভ কিবরিয়া।
বির্তক আয়োজনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন ক্যাবের জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশনের প্রকল্প সমন্বয়ক মারুফা আক্তার৷
বিতর্ক প্রতিযোগীতায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়নের মাধ্যমে জ্বালানির সুবিচার নিশ্চিত করতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পলিসি নির্ধারণের আহবান জানান সরকার দল।
এছাড়াও জ্বালানির সুবিচার সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা কার্যক্রম বাড়ানোর পাশাপাশি, জ্বালানি সেক্টরে নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিরও পরামর্শ দেয়া হয়।
অন্যদিকে, শুধু পলিসি নির্ধারণ করে ভোক্তার জ্বালানি অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না বলে মত দিয়েছেন বিরোধী দল।
এছাড়াও জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিত করতে প্রযুক্তির উন্নয়ন, সুশাসন নিশ্চিত এবং দক্ষ জনবলের পাশাপাশি ডিমান্ড এবং সাপ্লাই চেইনের মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার আহবান জানান তারা।
এ সময় জাফর সাদিক বলেন, বিতার্কিকরা চাইলেই যেকোন একটা বিষয়ের পক্ষে বা বিপক্ষে তর্ক করতে পারে। যেহেতু এটা একটা ছায়া সংসদ, কাজেই একটা পক্ষকে এর পক্ষে বলতে হবে, আর আরেকটি পক্ষকে বিপক্ষে। কিন্তু বাস্তব জীবনে বিতার্কিকদের অবশ্যই ভালো বিষয়টাকেই গ্রহণ করতে হবে। এখানে কিছু বিষয় নিয়ে অস্পষ্টা থাকলেও সামগ্রিক দিক থেকে ভালো বিতর্ক হয়েছে।
এমন আয়োজনে ক্যাবকে ধন্যবাদ জানিয়ে রক্তিম মিলন বলেন, জ্বালানিখাত নিয়ে বিতার্কিকদের আরও পড়াশোনা করা দরকার। এর মাধ্যমে যাতে সাধারণ মানুষ তাদের জ্বালানি অধিকার সম্পর্কে আরও জানতে পারে। তাই এই বিতর্কের মাধ্যমে যাতে ভোক্তার জ্বালানি অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়, সেই বিষয়ে আমাদের ভাবতে হবে।
নাজিয়া ইয়াসমিন বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে প্যারিস চুক্তির পর থেকেই জ্বালানি অধিকার আন্দোলন জোরালো হচ্ছে। তবে, জ্বালানি নিয়ে দেশের বর্তমান পলিসি কি আছে এবং আগামীর জন্য কি পলিসি নেয়া দরকার, সেই বিষয়ে আরও বেশি ক্লিয়ার ম্যাসেজ বা আলোকপাত করার দরকার ছিল। কিন্তু এগুলো অনুপস্থিত ছিল বিতর্কে। উদাহরণস্বরূপ, বিগত সরকারের নেয়া মুজিব ক্লাইমেট প্রোসপারেটি প্লানসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে। সেগুলোর বর্তমান অবস্থা কি এবং ভবিষ্যতের জন্যে কি করা যেতে পারে, সেই বিষয়গুলো তুলে আনা দরকার ছিল বিতর্কে।
শিহাব উদ্দিন বলেন, জ্বালানি আমাদের জাতীয় সমস্যার পাশাপাশি একটি গ্লোবাল সমস্যা। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম নিয়ে ভাবতে হলে জ্বালানি সুবিচার নিয়েও ভাবতে হবে। বিতর্ক সবসময় তথ্য নির্ভর হতে হয়, এখানেও অনেক তথ্য এসেছে। তবে এই সকল বিষয়ে আরও তথ্য এলে ভালো হতো।
এ সময় অন্যদের সাথে একমত প্রকাশ করে হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তী বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়নের জন্যে জ্বালানি রুপান্তর প্রয়োজন এবং এটা অবশ্যই সম্ভব। তবে, শুধু পলিসি বা নীতি দিয়ে জ্বালানী রুপান্তর সম্ভব নয়। আর এই বিষয়ে বিরোধী দলও বলেছে। কিন্তু এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরতে পারলে আরও ভালো হতো, যাতে এর মাধ্যমে ভোক্তা তথা দেশ উপকৃত হতে পারে।
বিতর্কের প্রস্তাবনা ছিল ‘এই সংসদ মনে করে, কার্যকর পলিসিই ন্যায্য জ্বালানি রুপান্তর নিশ্চিত করতে পারে’।
এতে সেরা বক্তা নির্বাচিত হয়েছেন সরকারি দলের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিতর্ক করা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান।