ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: বোতলজাত পানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শান্তিপূর্ণ এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ক্যাবের কো-অর্ডিনেটর (রিসার্চ) সাংবাদিক ও কলামিস্ট শুভ কিবরিয়া।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া বলেন, ‘দেশে ডাব নিয়েও সিন্ডিকেট হচ্ছে। শুধু বাদ আছে জাম্বুরা আর আমড়া। আর এটা নিয়েও হয়তোবা হয়ে যাবে। কারণ যেহেতু ডাব, তেল, ডিম নিয়ে সিন্ডিকেট করে, মনে হয় কয় দিন পর পুইশাক নিয়েও সিন্ডিকেট হয়ে যেতে পারে। তাই আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার, আমরা শুধু সরকারকে দোষারোপ করতে চাই না। সরকার অনেক চেষ্টা করছে। কিন্তু সরকারের কোনো চেষ্টাই কাজে আসছে না। সরকারের মন্ত্রী বলেছেন, আমরা আইন করে দাম নির্ধারণ করে দিলেও ব্যবসায়ীরা মানে না। তাই মন্ত্রী মহোদয়কে বিনয়ের সঙ্গে বলছি- আপনি যখন পারছেন না, তখন বিদায় নেন। এর জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুমতির দরকার নেই। আপনি পদত্যাগ করুন, আমাদের ভোক্তাদের রেহাই দিন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে ভীষণ ভাবে। মানুষ নানা ভাবে বিপদগ্রস্ত। দেশে চলছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। এমন সময় হঠাৎ করে বাজারে বোতলজাত পানির দাম বেড়ে গেছে কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই। নিত্যপণ্যের বাড়তি দামের সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে বোতলজাত পানির দাম। বেশ কয়েকটি কোম্পানি প্রতি বোতল পানির দাম বাড়িয়েছে। আধা লিটার পানির দাম বোতল এখন বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। হঠাৎ কেন পানির দাম এত বাড়ানো হয়েছে এর কোনো সদুত্তর মিলছে না।
বাজারে যেসব বোতলজাত পানি বিক্রি হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে পরিচিতি ব্যান্ডের ৫০০ মি. লি. পানি সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য এখন ২০ টাকা। কয়েকদিন আগে এসব ব্র্যান্ডের ৫০০ মি. লি. পানির সর্বোচ্চ মূল্য ছিল ১৫ টাকা। এছাড়া খাবারের পানির পাইকারি মূল্য ১১ থেকে ১২ টাকা অর্থাৎ ৫০০ মি. লি. পরিমাণের প্রতি বোতল পানি খুচরা পর্যায়ে ৮/৯ টাকা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বোতল জাতীয় সকল ধরনের পানির হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধি যা অন্যায়, অযৌক্তিক ও ভোক্তা স্বার্থবিরোধী তার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
আমরা জানি জনগণকে সুরক্ষা দিতে প্রতিযোগিতা আইন ২০১২ প্রণীত হয়েছে। এই আইনের লক্ষ্য হিসাবে বলা হয়েছে, ‘যেহেতু দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে ব্যবসা-বাণিজ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ উৎসাহিত করার, নিশ্চিত ও বজায় করার উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রমূলক যোগসাজশ ,মনোপলি ও ওলিগপলি অবস্থা, জোটবদ্ধতা অথবা কর্তৃত্বময় অবস্থানের অপব্যবহার সংক্রান্ত প্রতিযোগিতা বিরোধী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ বা নির্মূলের লক্ষ্যে আইন প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয় বিধায় প্রতিযোগিতা আইন ২০১২ প্রণীত হয়েছে।’ কিন্তু আমরা সাধারণ ভোক্তারা এই আইনের সুফল পাচ্ছি না। সকল ধরনের বোতলজাত পানির হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধিও এরই ধারাবাহিকতা।
এর প্রতিবাদে মানববন্ধন থেকে কয়েকটি দাবি জানানো হয়-
১. অবিলম্বে সকল ধরনের বোতলজাত পানির এই অযৌক্তিক, অন্যায় ও অন্যায্য মূল্যবৃদ্ধি বাতিল করতে হবে।
২. ভোক্তাদের সাশ্রয়ী মূল্যে নিরাপদ স্বাস্থ্যকর পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
৩. বোতলজাত পানির মূল্য স্বাভাবিক করতে প্রতিযোগিতা কমিশন, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়ের সক্রিয় পদক্ষেপ দাবি করছি।
৪. যেসব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান যুক্তভাবে হঠাৎ করে বোতলজাত পানির দাম অযৌক্তিক ভাবে বাড়িয়ে ভোক্তাসাধারণকে কষ্টে ফেলেছে তাদের আইনানুগ বিচার ও শাস্তি দাবি করছি।
মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন ক্যাবের কোষাধ্যক্ষ ড. মো. মঞ্জুর-ই-খোদা তরফদার, বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ, ক্যাব রাজশাহী জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম মোস্তফা মামুন, ক্যাবের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর একরাম উল্লাহ আহমেদ, গ্রীন ভয়েসের সহ-সভাপতি হুমায়ুন কবির সুমন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য নিখিল রঞ্জন প্রমুখ।
-এসএম