স্বার্থের সংঘাত সৃষ্টি হওয়ায় আইন দ্বারা সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ভোক্তা অধিকার সুরক্ষার কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে শনিবার কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব ও ভোক্তাকণ্ঠ আয়োজিত ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় ক্যাব শীর্ষক এক ওয়েবিনারে আলোচকরা মত দেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমানের সভাপতিত্বে এবং ক্যাব সংগঠক সৈয়দ মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার জোর্তিময় বড়ুয়া।
লিখিত প্রবন্ধে ব্যারিস্টার জোর্তিময় বড়ুয়া বলেন, জনস্বার্থ রক্ষায় ক্যাব-এর ভূমিকার কারণে এমন সব প্রশ্ন উত্থাপন করা সম্ভব হয়েছে যা বাংলাদেশের আইনি কাঠামোয় কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। ক্যাব সরাসরি প্রশ্ন তুলেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এবং ব্যর্থ হলে পরে আদালতেও একই প্রশ্ন তুলেছে।
তিনি উল্লেখ করেন, গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ সংক্রান্ত বিইআরসি’র সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্যাব উচ্চ আদালতে রীট মামলা দায়ের করে যৌক্তিকভাবে দেখিয়েছে যে গ্যাসের মূল্য পূনঃনির্ধারণের পূর্বে ইতিপূর্বে ভোক্তাদের নিকট থেকে অর্থ নিয়ে যে গ্যাস নিরাপত্তা তহবিল গঠন করেছে সেখানে যা অর্থ আছে এবং পেট্রোবাংলাসহ অন্যান্য লাইসেন্সীরা ভোক্তাদের কাছ থেকে যে অর্থ আদায় করেছে তা সমন্বয় করলে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির পরিবর্তে মূল্য কমানো সম্ভব।
তিনি বলেন, আমলাতন্ত্রের সঙ্গে ভোক্তাস্বার্থ একটি দ্বান্দ্বিক অবস্থানে রয়েছে। প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিইআরসি’র যিনি চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন তিনিও মূলত ইতিপূর্বে কোন না কোন লাইসেন্সী’র প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতা থাকার কারণে নিযুক্ত হন। ফলে এটি অনুমান করে নেওয়া যায় যে, এখানে প্রকটভাবে স্বার্থের দ্বন্দ্ব রয়েছে যার ফলে আইন থাকা সত্ত্বেও ভোক্তাস্বার্থ রক্ষা হয় না।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, প্রক্রিয়াগতভাবে আমরা পরাধীন হয়ে যাচ্ছি, এখান থেকে বের হতে হলে সারাদেশে প্রতিবাদী সমাজ গড়ে তুলেতে হবে।
ক্যাবের এই জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, জ্বালানি সেক্টরের অব্যবস্থাপনার চিত্র শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ সকল জনগুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে বিদ্যমান এ দূরাবস্থা থেকে বের হওয়ার লক্ষ্যে প্রতিবাদ গড়ে তুলতে ক্যাবের সঙ্গে কাজ করার আহবান জানান।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মলয় ভৌমিক বলেন, সামাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাগরণ তৈরি করতে না পারলে শুধু আইনি পদক্ষেপ নিয়ে ফল হবে না। তাঁর মতে, জাগরণ সৃষ্টির জন্য জনসংযোগ ও জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, সমাজ দিনে দিনে নির্লিপ্ত, স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। আজকের দিনে সন্দেহ জাগে, আজ যদি বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিতেন তবে মানুষ সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়তো কিনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি ও অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, বাজারকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের একটি সমঝোতায় আসতে হবে। তিনি ব্যবসায়ী ও আমলাদের স্বার্থের সম্পর্কের কথা তুলে ধরে স্বার্থের সংঘাত দূরীকরণে আইন সংশোধনের আহবান জানান।
শ্রমিক নেতা রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, আইন, আলোচনা ও আন্দোলন দিয়ে ভোক্তা অধিকারে সুরক্ষা দিতে হবে। জবাবদিহিতার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে স্বচ্ছতা আসবে না। অধিকার প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন আন্দোলনের সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রতিশ্রুতি থাকলেও কাজের ধারাবাহিকতা না থাকলেও সুফল ঘরে তোলা সম্ভব হয় না। মূলত লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
দৈনিক বণিক বার্তার উপব্যবস্থাপনা সম্পাদক মুসা মিয়া বলেন, জনস্বার্থে ক্যাবের কার্যক্রমকে বিদ্যালয় পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে কারণ আজকের শিক্ষার্থীরা আগামী দিনে সম্ভাবনাময় ভোক্তা হয়ে উঠবেন। তিনি ক্যাবকে অন্যান্য দেশের ভোক্তাসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের পরামর্শ দেন।
সভাপতির বক্তব্যে গোলাম রহমান বলেন, আমরা সকলেই যেহেতু ভোক্তা, সেহেতু ক্যাবের কার্যক্রমকে আরো বিস্তৃত করার প্রয়োজন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এদেশে যত মানুষ রয়েছে তার মধ্যে কত শতাংশ মানুষ ভোক্তা অধিকার নিয়ে সচেতন?
তিনি বলেন, অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে সোচ্চার হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
ওয়েবিনারে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও উন্নয়নকর্মি ছাড়াও ক্যাবের জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
লিংক: https://www.facebook.com/voktakantho/videos/801169757456505/