ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:
দেশের ই-কমার্স খাতের ওপর মানুষেন আস্থা ফেরাতে কাজ করছে সরকার। এখন থেকে বড় কোনও অনিয়ম না হলে এবং মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছাড়া আকস্মিক অভিযানে যাবে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ইতোমধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সেগুলোর তদন্ত শেষ করে দ্রুত অভিযোগপত্র প্রদানের তাগিদও দিচ্ছে সরকার। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনতে কাজ করছে বাণিজ্য, অর্থ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া ই-কমার্স নীতিমালার বিষয়ে বিভিন্ন সেক্টর থেকে মতামত চাওয়া হচ্ছে। এ বিষয়েও দ্রুত একটি সিদ্ধান্তে আসার কথা জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একযোগে অভিযান চালায় দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেগুলোর বিরুদ্ধে প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিং-এর মামলা হয়। বেশ কয়েকটির বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতাও পেয়েছে তদন্তকারী সংস্থাগুলো। এতে দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আস্থাহীনতা প্রকট আকারে দেখা দেয়। তবে সরকার চাচ্ছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি এ খাতে দেশি-বিদেশি বিনোয়োগ বাড়ুক।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে অন্তত আরও ৬০টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আছে। এটাকে ই-পেট্রোলিং বলছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা সকল ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে নজরদারিতে এনেছি। কারা কোথায় কী করছে সব মনিটরিং হচ্ছে। সাইবার ইউনিট কাজ করছে। যখন অনিয়ম দেখবো তখনই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে তাদের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। তাদের লেনদেনের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিতে হবে। ইতোমধ্যে তলব করা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে—ইনফিনিটি মার্কেটিং, দারাজ, প্রিয়শপ, অ্যামস বিডি, শপআপ ই-লোন, স্বাধীন, শ্রেষ্ঠ ডটকম, গেজেট মার্ট ডটকম, অ্যানেক্স ওয়ার্ল্ড, ওয়ালমার্ট, ব্রাইট ক্যাশ, আকাশ নীল, বাড়ি দোকান ডটকম, টিকটিকি, আলিফ ওয়ার্ল্ড, বাংলাদেশ ডিল, আস্থার প্রতীক, ই-শপ ইন্ডিয়া, সুপম প্রোডাক্ট, বিডি লাইক, সানটুন, চলন্তিকা ও নিউ নাভানা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য, অর্থ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছাড়া এ মুহূর্তে বড় কোনও অভিযানে না যেতে বলা হয়েছে পুলিশের সকল ইউনিটকে। গোয়েন্দা রিপোর্টের মাধ্যমে কোনও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ এলে করণীয় ঠিক করে নির্দেশনা দেবে মন্ত্রণালয়গুলো।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার বেশিরভাগই তদন্ত করছে সিআইডি। মামলার তদারককারী এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কোনও একটি সংস্থার সিদ্ধান্তে অভিযান হয় না। সরকার চায় এই খাতে জবাবদিহিতা ফিরে আসুক। সেভাবেই কাজ চলছে। যখন প্রয়োজন মনে করা হবে, তখনই অভিযান হবে।’
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি নীতিমালার কথা ভাবছে সরকার। এ কাজে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সেক্টরের কাছে মতামত চাওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সম্প্রতি একটি সভাও হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো দ্রুত নীতিমালা তৈরি করবে। ততদিন আগের পদ্ধতিতে কিছু নির্দেশনা মেনে ব্যবসা করতে হবে ই-কমার্সগুলোকে।
অভিযানের পর ই-কমার্স খাতে প্রতারণা কমছে বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। দিনে দিনে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা আরও কমবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘যারা এখন ব্যবসা করছেন, তারা ভালোই করছেন। আমরা চাই এ খাতে স্বচ্ছতা ও আস্থা বাড়ুক। সেজন্য কাজ করছি। ইতোমধ্যে বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’