রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি:
রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ধানী জমিতে পানি না পাওয়ায় রাগে-ক্ষোভে দুই কৃষক বিষপান করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিনাথ মার্ডি (৩০) নামের এক আদিবাসী কৃষক মারা গেছেন।
আর তার চাচাতো ভাই রবি মার্ডিকে (৩২) রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) সকালে এই ঘটনার খবর পেয়ে গোদাগাড়ী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
এর আগে, বুধবার (২৩ মার্চ) রাতে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের নবাইবটতলা গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। মৃত অভিনাথ নিমঘুটু গ্রামের বাবু চাঁদ মার্ডির ছেলে।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে স্থানীয়রা বলছেন, অভিনাথ উপজেলার ঈশ্বরীপুর মাঠে ধানের জমিতে পানি দেওয়ার জন্য বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) ডিপ অপারেটর শাখাওয়াতের কাছে ১২ দিন ধরে ঘুরছিলেন। কিন্তু তাকে পানির জন্য সিরিয়াল দেওয়া হয়নি। এরইমধ্যে পানি শুকিয়ে ধানী জমি বিবর্ণ হতে থাকে। সর্বশেষ বুধবার আবারও ডিপ অপারেটরের কাছে পানির জন্য যান অভিনাথ ও রবি। কিন্তু সিরিয়াল না পেয়ে তারা এক সঙ্গে বিষ পান করেন।
তবে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) ডিপ টিউবওয়েল অপারেটর শাখাওয়াত হোসেন বলেন, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। ওই দুই কৃষককে পানির জন্য সিরিয়াল দেওয়া হয়নি বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সত্য নয়। কারণ ঘটনার একদিন আগেই মঙ্গলবার (২২ মার্চ) তাদের জমিতে পানি দেওয়া হয়েছে। তার প্রমাণও রয়েছে।
তার দাবি- গোদাগাড়ী উপজেলার ইশ্বরীপুরে বিএমডিএর ২নং ডিপ টিউবওয়েলের অধীনে ২৬৫ বিঘা জমি রয়েছে। সেখানে একটি ডিপ টিউবওয়েল সাহায্যেই সেচের পানি বরাদ্দ দেওয়া হয়। বিএমডিএর এই ইশ্বরীপুর-২ ডিপ টিউবওয়েল ছাড়া আশপাশের গ্রামে আর কোনো টিউবওয়েল নেই। এর আওতায় প্রায় ২০০ জন কৃষক রয়েছেন। সবাইকে পর্যায়ক্রমে একদিন করে সেচের পানি দেওয়া হয়। ইচ্ছে থাকলেও একজন পরপর দু’দিন তার জমিতে পানি নেওয়ার সুযোগ পান না। আর একই জমিতে পরপর দু’দিন সেচের প্রয়োজনও পড়েনা।
জানতে চাইলে রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম জানান, ঘটনার খবর পেয়ে তিনি নিজেই সকালে ঘটনাস্থলে গেছেন। এখনও ঘটনাস্থলেই রয়েছেন। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে জামিতে পানি না পেয়ে বিষপানের বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারেছেন না। কারণ বিষপানের আগের দিনই তাদের জমিতে পানি দেওয়া হয়েছে। সেই সত্যতা তারা পেয়েছেন। পানি না পাওয়ার কারণেই তারা বিষপান করেছেন, নাকি এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, মারা যাওয়া কৃষকের মরদেহ তার বাড়িতেই আছে। প্রাথমিক তদন্ত শেষে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে অভিনাথের মরদেহের ময়নাতদন্ত ও মামলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।