ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:
ঘরে বসে হিসাব খুলতে লাগে না কোনো খরচ। শহর কিংবা গ্রাম— যেকোনো মুহূর্তেই লেনদেন। রয়েছে ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা তোলার সুযোগ। এছাড়া বিভিন্ন পরিষেবা যেমন- কেনাকাটার বিল, বেতন কিংবা টিউশন ফি পরিশোধ, মোবাইল ফোনের রিচার্জ, প্রত্যন্ত অঞ্চলে টাকা পাঠানো— সবই হচ্ছে মুঠোফোনে। এ কারণে দেশে মোবাইলে আর্থিক সেবার (এমএফএস) জনপ্রিয়তা দিনদিন বাড়ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে গ্রাহকদের মধ্যে ডিজিটাল লেনদেনের আগ্রহ বেড়েছে। মানুষ এখন ভিড় এড়াতে বিকাশ, রকেট, নগদের মতো এমএফএস প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা রাখছে। যাদের হাতে এখন মোবাইল ফোন আছে, তাদের অধিকাংশেরই মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব রয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বড় করপোরেট বা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, এমনকি শিল্পমালিকরাও মুঠোফোনে লেনদেন করছেন।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৩টি এমএফএস সেবার হালনাগাদ তথ্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা যায়, করোনাভাইরাসের কারণে মানুষ এখন মুঠোফোনে বেশি লেনদেন করছেন। বাড়ছে এজেন্ট ও গ্রাহকের সংখ্যাও। এর বাইরে ডাক বিভাগের সেবা নগদেও নতুন নতুন গ্রাহক ও লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ১৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬৬৯-এ। এর মধ্যে গ্রামে ছয় কোটি ২৩ লাখ এবং শহরের গ্রাহক সংখ্যা চার কোটি ৯২ লাখ। নিবন্ধিতদের মধ্যে পুরুষ ছয় কোটি ৩০ লাখ এবং মহিলা গ্রাহক প্রায় পাঁচ কোটি। আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ২৩ হাজার ৫৫৮ জনে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১ সালে এমএফএস সেবায় এক কোটি ২১ লাখ ৬২ হাজার গ্রাহক বেড়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এ সংখ্যা ছিল নয় কোটি ৯৩ লাখ ৩৬ হাজার। একই সময়ে বেড়েছে ৬৪ হাজার ৫৬১ এজেন্ট।
মোবাইল ব্যাংকিং এখন শুধু টাকা পাঠানোর মাধ্যম নয়। এর মাধ্যমে পরিষেবা বিল পরিশোধ, কেনাকাটা, সরকারি ভাতা গ্রহণ, টিকিট ক্রয়, স্কুলের বেতন ও বিমার প্রিমিয়াম পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ এবং সরকারি অনুদানও প্রদান করা যাচ্ছে।
গত ডিসেম্বর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন হয়েছে ৭১ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। যা একক মাস হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন। এর আগে সর্বোচ্চ লেনদেন হয় গত বছরের (২০২১ সাল) মে মাসে। ওই মাসে ৭১ হাজার ২৪৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়
এ মাধ্যমে টাকা জমা করতে এখন আর এজেন্টের কাছে যেতে হয় না। ব্যাংক বা কার্ড থেকে সহজেই টাকা আনা যাচ্ছে এ হিসাবে। আবার এ হিসাব থেকে ব্যাংকেও টাকা জমা দেওয়া যাচ্ছে। ক্রেডিট কার্ড বা সঞ্চয়ী আমানতের কিস্তিও জমা দেওয়া যাচ্ছে। ফলে একটি মুঠোফোন একেকজনের কাছে একটি ব্যাংক হিসেবেই পরিচিতি পাচ্ছে।
দেশের সবচেয়ে বড় এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হলো ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’। এমএফএসের লেনদেন বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন অ্যান্ড পিআর শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, কয়েকটি কারণে এমএফএস সেবার ব্যাপক বিস্তার ঘটছে। বিকাশের মতো প্রতিষ্ঠান গ্রাহককে ডিজিটাল লেনদেনের সুযোগ করে দিয়েছে। মানুষ এখন ঘরে বসেই মোবাইলে সবধরনের লেনদেন করতে পারছে।
২০২১ সালে এমএফএস সেবায় এক কোটি ২১ লাখ ৬২ হাজার গ্রাহক বেড়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এ সংখ্যা ছিল নয় কোটি ৯৩ লাখ ৩৬ হাজার। একই সময়ে বেড়েছে ৬৪ হাজার ৫৬১ এজেন্ট
শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, করোনার এ মহামারির সময় গ্রাহক ব্যাংকের শাখায় না গিয়ে এমএফএসের মাধ্যমে লেনদেন বেশি নিরাপদ মনে করছে। এছাড়া কোভিডের ক্যাশলেস লেনদেনের বিষয়ে অনেকে পরিচিত হয়েছেন। ফলে মানুষ এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ঝুঁকছেন। লেনদেনও বাড়ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১ সালে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে রেকর্ড পরিমাণ লেনদেন হয়েছে। লেনদেনের পরিমাণ সাত লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। যা আগের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের চেয়ে ৩৭ শতাংশ, দুই লাখ আট হাজার ৭৭০ কোটি টাকা বেশি। গত বছর লেনদেন হয়েছিল পাঁচ লাখ ৬১ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা।
তবে এখানে ডাক বিভাগের সেবা ‘নগদ’-এর তথ্য সংযুক্ত হয়নি। ২০২১ সালে নগদে দুই লাখ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। সে হিসাবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ২০২১ সালে মোট লেনদেন হয়েছে প্রায় ১০ লাখ কোটি টাকা। নগদসহ এ সেবায় নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ কোটি ৫৪ লাখে।