ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: আজ থেকে এলপিজির (তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস) ১২ কেজি সিলিন্ডারের সরকার নির্ধারিত দর ১২২৮ টাকা ৷ তবে গ্রাহক পর্যায়ে তা ১২২০ টাকা থেকে ১২৫০ টাকায় বিক্রি করছে খুচরা বিক্রেতারা ৷ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়ে এ তথ্য জানা গেছে ৷
টানা পাঁচ দফা বৃদ্ধির পর শুক্রবার গ্রাহক পর্যায়ে এলপিজি গ্যাসের দাম কমায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। ডিসেম্বর মাসের জন্য বেসরকারি খাতে ১২ কেজি সিলিন্ডারের এলপিজির দাম ১ হাজার ৩১৩ টাকা থেকে কমিয়ে ১ হাজার ২২৮ টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ দাম কমে ৮৫ টাকা। আজ শুক্রবার সকাল থেকে সারাদেশে এই দর কার্যকর হয়।
১২ কেজি এলপিজির দাম বেড়ে ১৩১৩ টাকা
কমিশনের চেয়ারম্যান আবদুল জলিল বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, এখন আমাদের নির্ধারিত দামে দেশের সব জায়গায় এলপিজি বিক্রি হচ্ছে। কোথাও দর যথাযথভাবে পালন না হলে বা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবে কমিশন।
তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন ৷ আজ সকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্রাহক পর্যায়ে তা ১২২০ টাকা থেকে ১২৫০ টাকায় বিক্রি করছে খুচরা বিক্রেতারা৷
শুক্রবার দুপুর ১২টায় ফোনে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন কোম্পানির ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম রাখা হচ্ছে ১২৩০ টাকা ৷
ঢাকার মতিঝিল ও মৌচাকের একাধিক খুচরা বিক্রেতা জানান, তারা সকাল থেকে ১২৪০ থেকে ১২৫০ টাকায় ১২ কেজি এলপিজি বিক্রি করছেন ৷ মোহাম্মদপুর, বছিলা, শ্যামলি, মিরপুরে খুচরা বিক্রেতাদের কাছ জানতে চাইলে কেউ ১২২০ টাকায়, কেউ ১২৫০ টাকায় ১২ কেজি এলপি গ্যাস বিক্রির তথ্য দেয়৷
বৃহস্পতিবার গাড়িতে ব্যবহৃত এলপিজির (অটো গ্যাস) নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি লিটার ৫৭ টাকা ২৪ পয়সা যা আগে ছিল ৬১ টাকা ১৮ পয়সা। অটোগ্যাস স্টেশনগুলো জানায়, তারা নির্ধারিত দামেই গ্যাস বিক্রি করছেন ৷ বেসরকারি এলপিজির দাম কমলেও সরকারি সাড়ে ১২ কেজি এলপিজির দাম ৫৯১ টাকাই থাকছে।
এলপিজির দাম কমলো
এই ঘোষণা অনুসারে বেসরকারি খাতে প্রতি কেজি এলপিজির নতুন দাম ১০২ টাকা ৩২ পয়সা, এটি সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য। এ হিসেবে সাড়ে ৫ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৬০২ টাকা থেকে কমিয়ে ৫৬৩ টাকা করা হয়েছে। একইভাবে সাড়ে ১২ কেজি ১ হাজার ৩৬৮ টাকা থেকে কমিয়ে ১ হাজার ২৮০ টাকা, ১৫ কেজি এক হাজার ৬৪১ থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৫৩৫ টাকা, ১৬ কেজি এক হাজার ৭৫১ থেকে কমিয়ে এক হাজার ৬৩৭ টাকা, ১৮ কেজি এক হাজার ৯৭০ থেকে কমিয়ে এক হাজার ৮৮২ টাকা, ২০ কেজি ২ হাজার ১৮৮ থেকে কমিয়ে ২ হাজার ৪৭ টাকা, ২২ কেজি ২ হাজার ৪০৭ থেকে কমিয়ে ২ হাজার ২৫১ টাকা, ২৫ কেজি দুই হাজার ৭৩৫ থেকে কমিয়ে ২ হাজার ৫৮৮ টাকা, ৩০ কেজি ৩ হাজার ২৮৩ থেকে কমিয়ে ৩ হাজার ৭০ টাকা, ৩৩ কেজি ৩ হাজার ৬১১ থেকে কমিয়ে ৩ হাজার ৩৭৭ টাকা, ৩৫ কেজি তিন হাজার ৮২৯ টাকা থেকে কমিয়ে ৩ হাজার ৫৮১ এবং ৪৫ কেজি ৪ হাজার ৯২৪ টাকা থেকে কমিয়ে ৪ হাজার ৬০৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এলপিজি তৈরির মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। প্রতি মাসে এলপিজির এ দুই উপাদানের মূল্য প্রকাশ করে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান আরামকো। এটি সৌদি কার্গোমূল্য (সিপি) নামে পরিচিত। এই সৌদি সিপিকে ভিত্তিমূল্য ধরে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করে বিইআরসি। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সৌদি সিপি অনুসারে ডিসেম্বরে প্রোপেন ও বিউটেনের দাম ছিল প্রতিটন যথাক্রমে ৭৯৫ ও ৭৫০ ডলার যা নভেম্বরে ছিল যথাক্রমে ৮৭০ এবং ৮৩০ ডলার। ডিসেম্বরের দামকে ভিত্তি ধরে মিশ্রণ অনুপাত ৩৫:৬৫ বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশের ভোক্তাদের জন্য এলপিজির নতুন দর ঘোষণা করা হয়েছে।
গত ডিসেম্বরে বিইআরসিতে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করে এলপিজি সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো। গত ১৪ জানুয়ারি এলপিজির দাম নির্ধারণ নিয়ে প্রথম গণশুনানি করে বিইআরসি। ১২ এপ্রিল প্রথমবারের মতো এলপিজির দর বেধে দেয় বিইআরসি ৷ কিন্তু এলপিজি বিক্রেতারা সরকারের এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয় নি ৷ তারা নুজেদের মতো করেই এলপি গ্যাস বিক্রি করে যাচ্ছিল ৷
ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে নতুন করে গত সেপ্টেম্বরে আবার গণশুনানি করে কমিশন। এরপর অক্টোবরে এলপিজির নতুন দর ঘোষণা করে কমিশন যা বাজারের প্রচলিত দরের চেয়ে বেশি হয় ৷ এতে ব্যবসায়ীরা খুশি হলেও ক্রেতারা ভোগান্তিতে পড়ে ৷