দেশের দ্রব্যমূল্য হুটহাট করেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। প্রকৃত দামের চেয়ে বেশি দামে ভোক্তাকে কিনতে হয় পণ্য। স্বস্তি দিতে কম দামে পণ্য নিয়ে মাঠে নামে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা টিসিবি। নিউজ বাংলা টুয়েন্টিফোর থেকে জানা যায়, বাজার নিয়ন্ত্রণে এই প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা খুবই কম। সক্রিয় করতে ২০১৪ সালের ২৮ জুন নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ছয় বছরে বাজারে এই প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ তেমন বাড়েনি।
বাজারের মোট চাহিদার মাত্র ৪-৬ শতাংশ পূরণ করতে পারে টিসিবি। পণ্য কেনার যথেষ্ঠ টাকা তাদের হাতে নেই। জনবল কমতে কমতে ১০৯ জনে এসে ঠেকেছে। মূলত অর্থ এবং জনবল সংকটের কারণে সক্রিয় হয়নি টিসিবি।
প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র হুমায়ন কবীর নিউজবাংলাকে জানান, পণ্য কেনার জন্য কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় অর্থ বরাদ্দ মেলে না। প্রতি বছরই ‘লোন অ্যাগেইনস্ট ট্রাস্ট রিসিপ্ট’ বা এলটিআরের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে অর্থ এনে পণ্য কেনা হয়। তবে বারবার চাহিদা দেয়া হলেও এই প্রতিষ্ঠানে কোনো এককালীন অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়নি। জনবল চেয়ে বারবার চাহিদা দেয়া হলেও পূরণ হয় না শূন্য পদ।
হুমায়ন কবীর জানান, সর্বশেষ ১৩০ জনের জনবল ছিল। সেখান থেকে কমতে কমতে এখন ১০৯ জনে এসে স্থির হয়েছে। বাজারের মোট চাহিদার মাত্র ৪-৬ শতাংশ পূরণ করতে পারে টিসিবি। ফলে বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাড়িয়ে দামের লাগাম টেনে ধরা অনেক কঠিন কাজ।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘টিসিবি যদি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারি প্রক্রিয়া, নিয়মনীতির আওতায় থাকে তাহলে টিসিবিকে গতিশীল করা কঠিন। নিত্যপণ্যের বাজারে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে সেটা মেটানোর জন্য সরকার টিসিবিকে ব্যবহার করছে। প্রতিনিয়ত ব্যবসা করার জন্য টিসিবিকে ব্যবহার করা হচ্ছে না।
‘কোনো পণ্যের দাম বেড়ে গেলে সেটা টিসিবির আওতায় দেয়া হয়। লাভ-লোকসান যাই হোক না কেন, টিসিবিকে স্বাধীনভাবে পণ্য কেনাবেচা করতে দিতে হবে। সরকারি সংস্থা হিসেবে নয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বতন্ত্রভাবে কাজ করতে দিতে হবে। টিসিবির সাংগঠনিক কাঠামো ব্যবসায়িক কাঠামোর মতো করতে হবে, যা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল।’
গোলাম রহমান আরও বলেন, ‘টিসিবির সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য গুদামের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি, আধুনিক মানসম্মত গুদাম নির্মাণ, উৎপাদন মৌসুমে বিদেশ থেকে পণ্য সরবরাহ, সংরক্ষণ এবং যথাসময়ে বাজারজাত করে পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজার ভারসাম্য রক্ষার প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে হবে।’
নিত্যপ্রয়োজনীয় যেকোনো পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাচ্ছে দেখা গেলে সরকারের নির্দেশ মোতাবেক সেই পণ্য টিসিবি সংগ্রহ করে। পরে সাশ্রয়ী দামে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করে। এসব পণ্য কিনতে প্রতিবছর প্রয়োজন হয় এক হাজার কোটি টাকা। এই অর্থ ব্যাংক থেকে এলটিআরের মাধ্যমে নেয়া হয়।
টিসিবির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, উৎপাদন মৌসুমে পণ্য সংগ্রহের জন্য টিসিবি কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে গেল বছরের ৩১ ডিসেম্বর ৩০০০ মেট্রিক টন মশুর ডাল ও ৪০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার জন্য দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। মশুর ডাল কেনার জন্য সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান সিটি অটো রাইস মিলসকে নির্বাচন করা হয়।
বছর বছর পণ্য কেনার জন্য দরপত্র আহবান করা হয়। তবে সেই ৪০ লাখ লিটার সয়াবিন তেলের দুইটি শিডিউল বিক্রি হওয়ার দর সম্পর্কে সঠিক ধারণা না পাওয়ায় পুনঃদর প্রকাশের আহ্বান করা হয়।
চলতি বছর ১৭ জানুয়ারি এডিবল অয়েলের সঙ্গে ৪০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল, সিটি সুপার মিলের সঙ্গে ৭০০০ মেট্রিক টন চিনি এবং সিটি অটো রাইস মিলের সঙ্গে ৩০০০ মেট্রিক টন মশুর ডাল কেনার চুক্তি করা হয়।
১৮ জানুয়ারি সয়াবিন তেল কেনার জন্য পুনঃ দরপত্র উন্মুক্ত করা হয়। ২০ জানুয়ারি দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভায় সর্বনিম্ন দরদাতা মেঘনা এডিবল অয়েল মিলকে তেল সরবরাহের জন্য মনোনীত করা হয়।
২৮ জানুয়ারি ৪০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল, ১৫০০ মেট্রিক টন চিনি ও ৬০০০ মেট্রিক টন মশুর ডালের দরপত্র উন্মুক্ত করা হয়। সংরক্ষণের স্থান সংকুলান না থাকায় পণ্যের বড় মজুদ করতে পারে না টিসিবি।
টিসিবির জনবল
১৯৭২ সালে ১ হাজার ৪০৬টি পদ নিয়ে যাত্রা শুরু করা টিসিবির কর্মীসংখ্যা এখন ১০৯ ।
টিসিবির কর্মকর্তারা জানান, ১৯৯০ সালেও টিসিবির পদসংখ্যা ছিল ১ হাজার ৩শর বেশি। ১৯৯৩ সালে এক দফা গোল্ডেন হ্যান্ডশেক দিয়ে পদসংখ্যা ৭১৪-তে নামিয়ে আনা হয়। এরপর ২০০২ সালের সেপ্টেম্বরে আবার ৩৪০ কর্মীকে অবসরে পাঠানো হয়।
২০১০ সালের পর এক দফায় কয়েকজনকে নিয়োগ দিয়ে ১৩০ জনের জনবল কাঠামো তৈরি হয়। এখন অবসরে গিয়ে মোট জনবল ১০৯ জন। কেবল জনবল সংকটই নয়, টিসিবি কর্মীদের দক্ষতারও অভাব রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে তরুণ কর্মীর অভাব।