রংপুর নিজস্ব প্রতিবেদক,
বেতন-ভাতা বৃদ্ধি ও সড়কে পুলিশি হয়রানি বন্ধসহ পাঁচ দফা দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো রংপুর থেকে ঢাকাগামী দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ধর্মঘট শুরুর ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় পার হলেও এখন পর্যন্ত মালিক ও শ্রমিক পক্ষের মধ্যে দাবি-দাওয়া নিয়ে কোনো সমঝোতা হয়নি।
বুধবার (০৬ এপ্রিল) দুপুরে রংপুর নগরীর কামারপাড়া ঢাকা কোচস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকরা অলস সময় পার করছেন। তাদের মধ্যে টিকিট বিক্রি নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে হাঁকডাক নেই। দুই একটি কাউন্টার খোলা থাকলেও বন্ধ রাখা হয়েছে বেশির ভাগ কাউন্টার।
সরেজমিনে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কামারপাড়া ঢাকা কোচস্ট্যান্ড থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি। ধর্মঘট শুরুর দিন মঙ্গলবার এনা ও শাহ্ ফতেহ আলী পরিবহনের কয়েকটি বাস চলাচল করলেও আজ তা বন্ধ রয়েছে।
এদিকে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ শুরু হওয়া ধর্মঘটে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। তবে চলমান এই ধর্মঘট শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে ডাকা হয়নি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন রংপুর বিভাগের সাধারণ সম্পাদক এম এ মজিদ। শ্রমিকরা বলছেন, মালিক পক্ষ থেকে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এ নিয়ে পরিবহন মালিক সমিতির কেউই কথা বলতে রাজি হননি।
শ্রমিকদের দাবি- ২-৩টি পরিবহনের চালকদের বেতন ১ হাজার ৯৫০ টাকা, সুপারভাইজারের বেতন ৯০০ টাকা আর হেল্পারের বেতন ৮০০ টাকা করে দেওয়া হয়। সেখানে অন্য সব পরিবহনের স্টাফদের প্রায় এর অর্ধেক বেতন-ভাতা প্রদান করা হয়। এই বৈষম্য দূর করে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির জন্য তারা মালিক পক্ষের কাছে দীর্ঘ দিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের কোনো দাবি মেনে নেওয়া হয়নি।
এছাড়া সড়কে পুলিশি হয়রানি ও চাঁদাবাজি বন্ধ, বিভিন্ন সময়ে মামলায় আটক শ্রমিকদের মুক্তিসহ পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নে পরিবহন মালিকসহ প্রশাসনের সহযোগিতা দাবি করেন তারা।
হানিফ পরিবহনের কাউন্টার সহযোগী লিটন মিয়া বলেন, মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে আমরা কর্মবিরতি পালন করছি। গতকাল ঢাকায় নেতাদের বৈঠকে বসার কথা ছিল। কিন্তু বৈঠক হয়নি। আজ বিকেলে বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান মুমিন, সোহেল, তপুসহ আরও অনেকে।
তবে হানিফ পরিবহনের বাসচালক আব্দুল হান্নান ভিন্ন কথা বলেন। তার দাবি মালিক পক্ষের লোকজন শুধুমাত্র রংপুর থেকে ঢাকাগামী বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে। এই ধর্মঘটের সঙ্গে শ্রমিক ইউনিয়ন জড়িত নয়। বরং শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে বাস চলাচলের জন্য বলা হয়েছে।
ধর্মঘট ডেকে মাহে রমজান মাসে যাত্রী সাধারণের ভোগান্তি বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ডিপজল পরিবহনের কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রুস্তম আলী নামে এক যাত্রী। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সকাল থেকে ঘুরছি। কোনো বাস যাচ্ছে না। গ্রামে অসুস্থ বাবাকে দেখতে ছুটিতে এসেছিলাম। এখন ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরতে এসে ছুটোছুটি করতে হচ্ছে। এইভাবে হঠাৎ করেই ধর্মঘট ডেকে আমাদের দুর্ভোগে ফেলানোটা অন্যায়।
কামারপাড়া ঢাকা কোচ স্ট্যান্ড উপকমিটির সাধারণ সম্পাদক মিঠু বলেন, এই স্ট্যান্ডে আমার জানা মতে শ্রমিকরা পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়নি। তবে মালিকরা কী কারণে পরিবহনগুলো বন্ধ রেখেছে, সেটি আমরা জানি না। শুধু শুনেছি, ঢাকায় বিকেল ৩টায় নাকি একটা বৈঠক হবে। সেখান থেকে বাসমালিকরা তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে।
এদিকে কামারপাড়া ঢাকা কোচস্ট্যান্ডে থেকে ঢাকাগামী দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও নগরীর অন্যসব জায়গা থেকে বাস চলাচল করছে। দুপুরে নগরীর মেডিকেল মোড় এবং মডার্ণ মোড় থেকে বিভিন্ন পরিবহনের আন্তঃজেলার বাসসহ বগুড়া, ময়মনসিংহ, বরিশাল, ঢাকা, চট্টগ্রামের বাস চলাচল করতে দেখা যায়।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের রংপুর বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক এম এ মজিদ বলেন, বাস চলাচল বন্ধ রাখার সঠিক কারণ আমার জানা নেই। কাদের নির্দেশে এই ধর্মঘটের ডাক দিয়ে মালিক পরিবহনের লোকেরা পরিবহন বন্ধ রেখে যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়িয়েছে, তাদের খুঁজে বের করা উচিত। শ্রমিকদের দাবি-দাওয়ার সঙ্গে আমরা একমত। কিন্তু এই ধর্মঘট ইউনিয়নের ডাকা ধর্মঘট নয়।