ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট। যদি কোথাও বা মেলে, তাহলে গুনতে হয় বাড়তি টাকা। ফলে সাশ্রয়ী দামে তেল নিতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাকের পেছনে ছুটছে মানুষ। এখন সেই লাইন আগের থেকে হয়েছে দীর্ঘ। পণ্য পেতে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অনেকে আবার পণ্য না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে।
কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর রোববার (৬ মার্চ) থেকে রাজধানীতে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি। সকাল থেকে মৌচাক, মেরুল বাড্ডা ও মধ্য বাড্ডায় পণ্য বিক্রি করতে দেখা যায়।
এর মধ্যে মেরুল বাড্ডায় সকাল ১০টায় টিসিবির ট্রাক আসে। সেখানে আগে থেকেই কয়েকশো লোক অপেক্ষা করছিল। ফলে ট্রাক আসার সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হয় দীর্ঘ লাইন। তাদের মধ্যে কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক হয়ে সিরিয়াল তৈরি করেন। সিরিয়াল তৈরির শুরুতে সংখ্যা দাঁড়ায় দেড়শোর বেশি। এরপর কিছু সময় যেতেই সেখানে প্রায় তিন শতাধিক মানুষ উপস্থিত হয়। অথচ বরাদ্দের তেল দেওয়া সম্ভব সর্বোচ্চ আড়াইশো জনকে।
ডিলার আনু এন্টারপ্রাইজের নিযুক্ত বিক্রয়কর্মী শরিফ হোসেন বলেন, তেল ৫০০ লিটার বরাদ্দ পেয়েছি। অর্থাৎ মাথাপিছু দুই লিটার হিসেবে আড়াইশো মানুষ পাবে। সেখানে মানুষ রয়েছে দ্বিগুণের বেশি। এ ট্রাকসেলে আড়াইশো মানুষের কাছে পণ্য বিক্রি দুই ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু তখনও শতাধিক মানুষ লাইনে পণ্যের জন্য অপেক্ষা করছিল।
ঘণ্টাখানেক লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর মর্জিনা বেগম বলেন, রোদে দাঁড়িয়ে আছি। এখন শুনছি তেল শেষ। এতক্ষণ দাঁড়িয়ে খালি হাতে যাবো। সকাল থেকে কোনো কাজই করতে পারলাম না এ টিসিবির আশায়।
এদিকে মধ্য বাড্ডা প্রাইমারি স্কুলের সামনে টিসিবির ট্রাক আসে দুপুর ১২টার দিকে। দেরি করে ট্রাক আসায় সেখানে লাইনের জন্য হুড়াহুড়ি পড়ে যায়।
ডিলার মানালা এন্টারপ্রাইজের বিক্রয়কর্মী রশিদ বলেন, শুরুতে আড়াইশো মানুষকে সিরিয়াল দেওয়া হয়েছে। এখন এর থেকে এসেছে কয়েকগুণ বেশি মানুষ। তাদের সিরিয়াল দিচ্ছি না। কারণ তারা পণ্য পাবে না। বরাদ্দ শেষ হয়ে যাবে।
সেখানে উপস্থিত স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি বলেন, এ ব্যবস্থাকে সুশৃঙ্খল করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রয়োজন। মানুষ কেউ কারও কথা শোনে না। প্রায় সময় গণ্ডগোল হয়। এর মধ্যে রোদে দাঁড়িয়ে খুব কষ্ট পায় নারী ও বৃদ্ধরা।
এদিকে বাজারে তেলের সংকট টিসিবির ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করেছে বলে জানিয়েছেন ডিলার ও ক্রেতারা।
ক্রেতারা বলছেন, বিশেষ করে তেলের জন্য তারা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েছেন। কারণ টিসিবি থেকে দুই লিটার তেল কিনতে পারলে সেটা বাজার থেকে প্রায় দেড়শো টাকা কমে পাওয়া যায়।
টিসিবি জানিয়েছে, পবিত্র রমজান উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এক কোটি নিম্ন আয়ের পরিবারকে দুবার করে সুলভ মূল্যে পণ্য দেবে টিসিবি।
চলতি বছরের নবম দফায় টিসিবির এ কার্যক্রম ৬ মার্চ থেকে শুরু হয়ে ২৪ মার্চ পর্যন্ত চলবে। পরে ২৭ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ফের পণ্য বিক্রি করা হবে দশম দফায়। শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন বিক্রি হবে টিসিবির পণ্য।
ঢাকা ছাড়া অন্য সব মহানগর, জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে উপকারভোগী পরিবারের মধ্যে বিক্রি কার্যক্রম ১৫ মার্চ থেকে শুরু হবে।