ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:
সরকারিভাবে হজ পালনের জন্য আপনাকে নির্বাচন করা হয়েছে। আপনি অমুক বা … এর দেয়া নম্বরে যোগাযোগ করুন। এমন নানান প্রড়ারণার মাধ্যমে এক শ্রেনীর মানুষ ধর্ম প্রাণ মুসল্লীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা। সম্প্রতি ধর্ম মন্ত্রণালয়ে এরকম একাধিক অভিযোগ আসায় বিষয়টি গোয়েন্দাদের নজরে আনা হয়েছে।
এমনি এক প্রতাড়ক নিজেকে, পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্যের পিএস (ব্যক্তিগত সহকারী) পরিচয় দিয়ে বলেন সরকারিভাবে হজ পালনের জন্য আপনাকে নির্বাচন করা হয়েছে। খুব কম সংখ্যক মানুষ এই সুযোগ পাচ্ছেন। আপনি অনেক ভাগ্যবান। আপনাকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একজনের ফোন নম্বর দিচ্ছি। আপনি দ্রুত তার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’ গত ৩১ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পাবনার আটঘরিয়া পারখিজিরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফতাব হোসেনকে ফোন করে এসব বলে এমপি’র পিএস পরিচয়ধারী একজন ব্যক্তি।
কিছুক্ষণ পর পিএস পরিচয়ধারী ওই ব্যক্তির পাঠানো নম্বরে ফোন করেন আফতাব হোসেন। তাকে অজ্ঞাত একজন অপর প্রান্ত থেকে বলেন, ‘আপনাকে সরকারিভাবে হজে যাওয়ার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। দ্রুত নিবন্ধনের জন্য সাড়ে ৭ হাজার টাকা বিকাশ করুন।’
আফতাব হোসেন প্রস্তাবটি যাচাইয়ের জন্য পাবনা-৪ আসনের এমপি’র পিএসকে ফোন করে জানতে পারেন এটি প্রতারকদের কাজ। পরে তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি লিখিতভাবে জানান।
আফতাব হোসেনের দাবি, আটঘরিয়ার বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের এভাবে ফোন করে হজে পাঠানোর নামে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে একটি প্রতারক চক্র।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারিভাবে হজে পাঠানোর নামে প্রতারণার একাধিক ঘটনা তারা জানতে পেরেছেন। এ নিয়ে তারাও উদ্বিগ্ন। প্রতারক চক্রের সদস্যদের ধরতে ইতোমধ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিবকে একটি চিঠি (স্মারক নম্বর: ১৬.০০.০০০০.০০০.৫০.০০১.২১.৫৬) দিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে বহির্বিশ্ব থেকে হজ ও ওমরাহ কার্যক্রম দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। ২০২১ সালের আগস্ট থেকে ওমরাহ কার্যক্রম পুনরায় চালু হয়েছে। হজে যাওয়ার নিবন্ধন কার্যক্রম এখনও বন্ধ রয়েছে। এজন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে হজের নিবন্ধন সংক্রান্ত কোনও কাজের অনুমোদন এখনও দেওয়া হয়নি। তবে হজের প্রাক-নিবন্ধন কার্যক্রম চালু রয়েছে। কিন্তু হজে নেওয়ার কথা বলে কতিপয় অসাধু ব্যক্তিরা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় মনে করছে, প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের কারণে সরলপ্রাণ মুসলমানদের মনে পবিত্র হজ এবং ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা জন্ম নিতে পারে এবং নিরীহ সাধারণ জনগণ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই এ ধরনের প্রতারকদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (হজ) আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন বলেন, ‘একটি প্রতারক চক্র সরকারিভাবে হজে পাঠানোর নামে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে প্রতারণা করছে। প্রতারকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। কেউ ফোন করে সরকারিভাবে হজে পাঠানোর জন্য নিবন্ধন করতে টাকা চাইলে তাতে সাড়া না দিয়ে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে হবে।’
জানা গেছে, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের চিঠিটি পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর প্রতারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব ইউনিটকে নির্দেশনা দিয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানায়, তারা ইতোমধ্যে প্রতারকদের দুটি মোবাইল নম্বর হাতে পেয়েছেন। হায়দার পরিচয়ধারী একজন ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু তথ্য মিলেছে। তাকে ও প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের ধরতে অভিযান চলছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, মোবাইল ফোনে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে বিকাশের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া এই চক্রের সঙ্গে মূলত ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও মধুখালী এবং মাদারীপুরের একটি এলাকার লোকজন জড়িত। বিকাশে প্রতারণার কারণে গ্রেফতার হওয়া বেশিরভাগ আসামি মাদারীপুরের একটি এলাকার। সরকারিভাবে হজে পাঠানোর নামে প্রতারক চক্রটি ভাঙ্গা-মধুখালী এলাকার বলে ধারণা করা হচ্ছে।