সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
‘সিরাজগঞ্জশপ ডটকম’ ও ‘আলাদিনের প্রদীপ’ নামের দুটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান খুলে রাতারাতি আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়ে যান স্থানীয় কয়েকজন যুবক। ইভ্যালি ও ই-অরেঞ্জের মতো চটকদার বিজ্ঞাপন ও বিশাল ছাড়ের অফারের ফাঁদে ফেলে হাজার হাজার গ্রাহকের প্রায় ২২ কোটি টাকা নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন তারা।
গ্রাহকদের টাকা নিয়ে হাওয়া হয়ে যাওয়া ওই যুবকরা হলেন- সিরাজগঞ্জশপ ডটকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জুয়েল রানা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আকরাম হোসেন ও পরিচালক মাসুদ পারভেজ এবং আলাদিনের প্রদীপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেদী হাসান মুন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহমুদ হাসান।
বর্তমানে তালাবদ্ধ রয়েছে তাদের কার্যালয়। তবে, অদৃশ্য কারণে এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না ভুক্তভোগীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সিরাজগঞ্জ শহরের বাহিরগোলা ও এম এ মতিন সড়কে অবস্থিত সিরাজগঞ্জশপ ডটকমের প্রধান ও আঞ্চলিক কার্যালয় দুটি তালাবদ্ধ।
স্থানীয়রা জানান, গত দুই সপ্তাহ ধরে সেখানে কেউ আসেন না। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসহ আসবাবপত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। রহস্যজনকভাবে লাপাত্তা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির পণ্য ডেলিভারি দেওয়া গাড়িগুলো।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি ও ই-অরেঞ্জের মতো ‘সিরাজগঞ্জশপ’ ও ‘আলাদিনের প্রদীপ’ প্রায় সোয়া চার লাখ অর্ডারের বিপরীতে অগ্রিম ২০৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ‘কালো তালিকাভুক্ত’ প্রতিষ্ঠান দুটির কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পণ্য প্রদান ও টাকা রিফান্ডের পরও প্রতিষ্ঠান দুটির কাছে এখনও গ্রাহকদের পাওনা প্রায় ২২ কোটি টাকা। বিপুল অঙ্কের এ অর্থ বকেয়া রেখে প্রতিষ্ঠান দুটির কর্ণধাররা আত্মগোপনে রয়েছেন।
অন্যদিকে, শহরের এস এস রোডের খেতুন সর্দার মোড়ের একটি ভবনের তৃতীয় তলায় অবস্থিত আলাদিনের প্রদীপের কার্যালয়। সেটিও তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। হঠাৎ করে প্রতিষ্ঠান দুটির কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়ায় টাকা হারানোর আশংকা দেখা দিয়েছে গ্রাহকদের মধ্যে। অনেকে আবার অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন অন্তত ‘আসল’ টাকা ফিরে পাবেন।
ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীরা জানান, আত্মগোপনে যাওয়ার আগে প্রতিষ্ঠান দুটির কর্ণধাররা নানা আশ্বাস দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, দেউলিয়া হওয়ার সম্ভাবনা নেই তাদের প্রতিষ্ঠানের। সিরাজগঞ্জশপ ডটকমের ভুক্তভোগী গ্রাহক ও শহরের মুজিব সড়ক এলাকার রেজাউল করিম স্মরণের।
সিরাজগঞ্জ পৌরসভার মাসিমপুর মহল্লার আলিফ রহমান নামের এক গ্রাহক ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিন মাস আগে মোবাইল ফোনের জন্য সিরাজগঞ্জশপে ২০ হাজার টাকা দিই। এখন পর্যন্ত টাকা বা মোবাইল কোনোটাই পাইনি। আসল টাকা পাব কি না, জানি না।
শহরের রহমতগঞ্জ এলাকার মো. তিতাস বলেন, সিরাজগঞ্জশপ ডটকমে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে দুটি মোবাইল ফোনের অর্ডার দিয়েছিলাম। ৪৫ দিনের মধ্যে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দিতে পারেনি। পরে আসল টাকা ফেরত দিতে চাপ দিলে তিন মাস পর তারা টাকা দেয়।
গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়া ‘সিরাজগঞ্জশপ’ ও ‘আলাদিনের প্রদীপ’ নামের দুই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে কিছুই জানে না সিরাজগঞ্জের স্থানীয় প্রশাসন।
প্রতারণার মাধ্যমে ওই দুই প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। ফলে স্বাভাবিক নিয়মে আমরা জানিও না কে, কীভাবে, কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়ে কোনো ব্যক্তি, নাকি কোনো প্রতিষ্ঠান জড়িত, সেটিও আমরা জানি না। আমাদের এখানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর আছে। কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে খুব সহজেই তিনি সেখানে অভিযোগ দিতে পারেন।
সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাছেও সিরাজগঞ্জশপ ও আলাদিনের প্রদীপ বা এমন কোনো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।