ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:
অল্প দামে প্লট-ফ্ল্যাট, তিন বছরে দিগুণ লাভ ও মাসে ১৮ থেকে ৩০ শতাংশ হারে মুনাফা দেওয়ার কথা বলেছিল চেতনা মাল্টিপারপাস। গ্রাকদের আস্থা অর্জনে প্রতিষ্ঠানটি আশুলিয়া ও ধামরাইসহ দেশের বিভিন্নস্থানে জমি, গাছের বাগান, ডেইরি ফার্ম, ফ্ল্যাট ও একাধিক প্রজেক্ট গড়ে তুলেছিল। পরে কয়েকশ’ গ্রাহকের প্রায় তিনশ’ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে সমিতির লোকজন। এদিকে সমিতির ফাঁদে পড়ে পথে বসেছে কয়েকশ’ পরিবার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১০ বছরেরও বেশি সময় আগে ৩০ জন সদস্য নিয়ে চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর পরে তারা অন্যান্য সাধারণ মাল্টিপারপাসের মতোই স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও স্বল্প আয়ের মানুষকে ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে আসছিল। এর পর ধীরে ধীরে তারা এফডিআর, ডিপিএস ও সঞ্চয় রাখার জন্য গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে থাকে। আর গ্রাহকদের আস্থা অর্জনের জন্য আশুলিয়া ও ধামরাই এলাকার বিভিন্ন জায়গায় জমি, পর্যায়ক্রমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিজস্ব জমি, গাছের বাগান, ডেইরি ফার্ম ও বিভিন্ন প্রজেক্ট গড়ে তোলে সমিতি। এমনকি টাকা জমা রাখার বিপরীতে প্রথম দিকে প্রতি লাখে এক থেকে তিন হাজার টাকা মুনাফাও দেওয়া হয়েছে। আর তাদের মুনাফা দেওয়া দেখে অন্যরাও টাকা জমা রাখতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই কৌশলকে কাজে লাগিয়ে কয়েকশ’ গ্রাককের প্রায় তিনশ’ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে সমিতির লোকজন।
এমনকি উধাও হয়ে যাওয়ার আগে সমিতির নামে আশুলিয়ার ঘোড়াপীর মাজার ও জামগড়া এলাকায় থাকা সোয়া আট শতাংশের জমিটিও বিক্রি করে দেওয়া হয়।
জামগড়া এলাকার স্থানীয় যুবক নাজমুল হক হিমু বলেন, আমার মা ছয় মাস আগে ওই সমিতির অফিসে গিয়ে ৩০ লাখ টাকা জমা রাখেন। প্রতি লাখে এক হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলে সমিতির মালিক তাইজুল ইসলাম প্রথম তিন মাস টাকাও পরিশোধ করে। এর পর থেকেই টাকা দিতে গড়িমসি শুরু করে। এদিকে তাদের সব টাকা ফেরত চাইলে ১৫ মার্চে তাদের মুনাফা বুঝিয়ে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু এর পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছে সমিতির লোকজন। এমনকি সমিতির কার্যালয়ের নামে থাকা জায়গাটাও গোপনে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলে জেনেছি।
জামগড়া এলাকার মুদি দোকানি আনিসুজ্জামান বলেন, এক বছর আগে ৫ বছর মেয়াদে ৩০ লাখ টাকা এফডিআর হিসেবে জমা রাখি। পরে আমার আরও দুই ভাই মনিরুজ্জামান ও ওহিদুজ্জামান এই সমিতিতে আরো ৪৮ লাখ টাকা রাখেন। ১৫ মার্চ জানতে পারি জায়গা ও স্থাপনা বিক্রি করে সমিতির মালিকপক্ষ পালিয়েছে। পরে ভাইস চেয়ারম্যান রেজা কিবরিয়ার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি দিনাজপুরে তাদের প্রজেক্ট বিক্রি করে টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু গত শনিবার (১৯ মার্চ) তার সঙ্গেও আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় কোথায় যাবেন, কি করবেন আর পরিবারকেই বা কি জবাব দেবেন এমন চিন্তায় দিশেহারা তিনি।
জামগড়া এলাকার মোসলেমা আক্তার বলেন, তিনি অনেক কষ্টে জমানো পাঁচ লাখ টাকা রেখেছিলেন সমিতিতে। কিন্তু সমিতিতে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছে লোকজন। এখন তাদের মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতারও করেছে র্যাব। তবে টাকা কীভাবে ফেরত পাবেন, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি।
এদিকে আব্দুল জলিল জমা রাখা ২৯ লাখ ও আবুল কালাম ৪০ লাখ টাকা কীভাবে ফেরত পাবেন সে নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন। তারাও সমিতির সব লোকজনকে গ্রেফতার করে টাকা উদ্ধারের দাবি জানিয়েছে।
এদিকে সমিতিতে তালা ঝুলিয়ে মালিকপক্ষ পালিয়ে যাওয়ার পর গ্রাহকরা র্যাবের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরই প্রেক্ষিতে র্যাব অভিযান চালিয়ে সমিতির ১০ কর্তাব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। তবে চেতনা মাল্টিপারপাসের মুহাম্মদ উল্লাহ ও তাইজুল ইসলামসহ এখনও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন।