ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে চুয়াডাঙ্গায় বেড়েছে শীতজনিত রোগ। গত এক সপ্তাহে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শিশুসহ ২৮৮ জন রোগী ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ শিশু রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত।
এদিকে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে জায়গা না থাকায় বারান্দা, র্যাম সিঁড়িতে এমনকি হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসারের কক্ষের সামনে পর্যন্ত রোগীর ভিড় দেখা গেছে। জায়গা না পেয়ে অনেককে রাতে বাড়ি ফিরে যেতেও দেখা গেছে। রোগীর বাড়তি চাপ সামাল দিতে শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) সকালে খুলে দেওয়া হয়েছে পুরোনো দুই মেডিসিন ওয়ার্ড। রোগীদের সেখানে রেখে দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসা।
শুধু হাসপাতালের আন্তঃবিভাগ নয়, ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর চাপ রয়েছে বহির্বিভাগেও। এখানে প্রতিদিন শীতজনিত কারণে ৩০০-৪০০ শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। রোটা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় অভিভাবক মহল চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। যদিও চিকিৎসকরা বলছেন, অভিভাবকদের সচেতনতা আরও বাড়াতে হবে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে শিশুসহ ২৮৮ রোগী। এর মধ্যে ৮০ শতাংশই শিশু রোগী। শুক্রবার ভোর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নতুন ৩৫ রোগী ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি থেকে ৯১ ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। এছাড়া বহির্বিভাগে প্রতিদিন শীতজনিত কারণে ৩০০-৪০০ শিশু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আসাদুর রহমান মালিক খোকন বলেন, সদর হাসপাতালে রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া রোগী বাড়ছে। বেশির ভাগই শিশু রোগী। বহির্বিভাগে দুই শিশু চিকিৎসক প্রতিদিন প্রায় ৩০০-৪০০ শিশুকে চিকিৎসা দিচ্ছে।
রোটা ভাইরাস প্রতিরোধে চিকিৎসকের পরামর্শ
ডা. আসাদুর রহমান মালিক খোকন বলেন, রোটা ভাইরাস অত্যন্ত মারাত্মক রোগ। এটি শিশুর মৃত্যুরও কারণ হতে পারে। তাই কিছু লক্ষণ দেখামাত্রই দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে। যেসব লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে হবে যে রোগীর পানিশূন্যতা হয়েছে তা হলো উদ্বিগ্নতা, কান্না করলেও চোখে পানি না আসা, প্রস্রাব কমে যাওয়া বা ডায়াপার পরালে তা শুকনো থাকা, ক্লান্তি, ঠোঁট শুকনো থাকা, প্রচুর ঘুম পাওয়া, ত্বক শুষ্ক ও বিবর্ণ হওয়া।
রোটা ভাইরাস ডায়রিয়ার লক্ষণ
সাধারণত কোনো শিশু রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার দুই দিনের মধ্যেও কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। এই রোগে প্রথমে জ্বর আসে, বমি শুরু হয় এবং তারপর পেট ব্যথা শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে পাতলা পায়খানা শুরু হয়। এটি প্রায় ৫-৭ দিন থাকতে পারে। তবে বড়দের ক্ষেত্রে এটা ততটা মারাত্মক হয় না।
চিকিৎসা
ভাইরাসজনিত রোগ হওয়ায় রোটা ভাইরাস রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় না। কারণ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে। রোটা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তাই ওরাল স্যালাইনই আসল হাতিয়ার। বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে। ৬ মাসের বড় বাচ্চাদের অন্যান্য খাবার দিতে হবে। নরম খাবার, কাঁচা কলা ভর্তা, ডাবের পানি খাওয়াতে হবে। প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর স্যালাইন খাওয়াতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই রোগের আসল ঝুঁকি হলো পানিশূন্যতা।
প্রতিরোধ
এক্ষেত্রে ফুটানো পানি পান করা, পায়খানার পর ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, রাস্তাঘাটের খোলা খাবার পরিহার করা, বাচ্চাদের এটা-সেটা মুখে দেওয়া থেকে বিরত রাখা ইত্যাদি রোটা ভাইরাস রোগের সংক্রমণে বাধা দেবে।
যেভাবে রোটা ভাইরাস ছড়ায়
যদি কোনো শিশু রোটা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়, তবে আক্রান্ত হওয়ার দিন থেকে লক্ষণ প্রকাশ হওয়ার আগেই শিশুটির মলে এই ভাইরাসের উপস্থিতি দেখা যায়। কোনো কারণে তা সঠিকভাবে পরিষ্কার করা না হলে বা শিশুটির হাতে-পায়ে মল লেগে থাকলে এর মাধ্যমেই রোটা ভাইরাস ছড়াতে পারে। শিশুটির হাত থেকে রোটা ভাইরাসের জীবাণু তার খেলনা, খাবার প্লেট যেকোনো স্থানে ছড়াতে পারে। এ থেকে অন্য যেকোনো ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারে। তাই শৌচকাজ করার পর ছোট থেকে বড় সবারই ভালোভাবে জীবাণুমুক্তকরণ সাবান দিয়ে হাত ধোয়া অত্যন্ত জরুরি। গ্রামাঞ্চলে যেখানে এখনো টয়লেট নেই, সেখানে এ রোগ ছড়ানোর হার অত্যন্ত বেশি। রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুর মল কারও কাপড়, জুতা বা পায়ে লেগেও ছড়াতে পারে।
যাদের এই রোগের ঝুঁকি বেশি
এই রোগ সাধারণত শিশুদের মধ্যেই বেশি দেখা দেয়। তবে আক্রান্ত শিশুদের সঙ্গে যারা থাকে বিশেষ করে শিশুর মা-বাবা, ভাই-বোন বা অন্যান্য আত্মীয় কিংবা ডে কেয়ারের কর্মচারীদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।