টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ, মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে প্রায় অচল হয়ে পড়েছে পর্যটন শহর কক্সবাজার। এতে শহরবাসীর সঙ্গে বিপাকে পড়েছেন সেখানে ভ্রমণ করতে আসা ৫০ হাজার পর্যটক।
রোববার (৩১ অক্টোবর) বিকেল থেকে শহরের প্রধান সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে কয়েকশ’ মানুষ। এতে করে সড়কটিতে থাকা দুই পাশের কয়েক হাজার দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যার পর সৈকত এলাকার সব হোটেল-মোটেল ও দোকানপাটও বন্ধ হয়ে যায়।
কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও জেলা যুবলীগ নেতা মোনাফ সিকদারকে গুলি করার নির্দেশদাতা হিসেবে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভা মেয়র মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে সদর থানায় একটি হত্যা প্রচেষ্টা মামলা হয়েছে।
রোববার বেলা ১২টায় মেয়র মুজিবকে প্রধান আসামি করে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি দায়ের করেন গুলিবিদ্ধ মোনাফের বড় ভাই। ওই মামলায় আরও আটজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।
মামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে বিকেলের দিকে কলাতলী ডলফিন মোড়ে সড়ক অবরোধ করেন মেয়র মুজিবের অনুসারীরা। এ সময় তারা প্রধান সড়কের মাঝখানে টায়ার জ্বালিয়ে, পৌরসভার ময়লা আবর্জনাবাহী ট্রাক রাস্তার ওপর রেখে যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করেন।
এছাড়াও বিক্ষুব্ধ অনুসারীরা কক্সবাজার শহরের বিভিন্নস্থানে দোকানপাট, বাস কাউন্টারও বন্ধ করে দিয়েছেন। এ ঘটনায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে শহরবাসী ও পর্যটকদের মাঝে।
গত বুধবার (২৭ অক্টোবর) রাতে শহরের কলাতলীর সুগন্ধা পয়েন্টে মোনাফ সিকদারকে গুলি করা হয়। পরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে সেখানে তিনি চিকৎসাধীন রয়েছেন।
এ ঘটনার পর আহত মুনাফ সিকদার এক ভিডিও বার্তায় বলেন, আমাকে মুজিবুর রহমান মেয়রের নির্দেশে গুলি করা হয়েছে। ওরা গুলি করার সময় বলছিল—তুই মুজিব চেয়ারম্যানের সাথে লাগছিস? মুজিব চেয়ারম্যানের সাথে আর লাগবি? এই বলে পিছন থেকে গুলি করে পালিয়ে যায়।
তার বক্তব্যের ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এ বিষয়ে জানার জন্য মেয়র মুজিবুর রহমানকে কয়েকদফা ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত) রফিকুল ইসলাম বলেন, হত্যাচেষ্টা ধারায় মেয়র মুজিবকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আতঙ্কে পর্যটক ও শহরবাসী
মেয়র মুজিবুরের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পরপরই সন্ধ্যা থেকে পুরো শহর আতঙ্কের শহরে পরিণত হয়েছে। মেয়রের অনুসারীদের নানা উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষ ও পর্যটকদের মাঝে ভীতির সৃষ্টি হয়। ঘটনাস্থলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি দেখা যায়নি।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীরুল গিয়াস বলেন, অপরাধীদের চিহ্নিত ও গ্রেফতার করতে মাঠে নেমেছে পুলিশ। কারও ইন্ধনে এ ঘটনা হলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।