ট্রলারের ওপর বসে জেলেরা মাছ ধরার জাল গুছিয়ে নিচ্ছেন। কেউ মাছ সংরক্ষণের জন্য ট্রলারে বরফ ভরছেন। চাল, তেল, তরকারি, জ্বালানিসহ কয়েক দিনের খাদ্যসামগ্রীও মজুত করছেন কেউ কেউ। কিছুক্ষণ পরেই ইলিশের সন্ধানে বঙ্গোপসাগরে নেমে পড়বে ট্রলারগুলো।
আজ মঙ্গলবার সকালে কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর নুনিয়াছটা ফিশারিঘাট এলাকার দৃশ্য এটি। নদীর কয়েকটি অংশে কয়েক শ মাছ ধরার ট্রলার গভীর সমুদ্রে যাওয়ার অপেক্ষায় আছে।
ট্রলারের জেলে সোনা আলী বলেন, টানা ২২ দিন নিষেধাজ্ঞার পর আজ সকাল থেকে শত শত ট্রলার ইলিশ ধরতে সাগরে নেমেছে। একটু পর তাঁদের ট্রলারটিও রওনা দেবে। গত সেপ্টেম্বর মাসে সেন্ট মার্টিন উপকূলে বিপুল ইলিশ ধরা পড়েছিল। তাই তাঁরা মাছ ধরতে ওই দিকেই যাচ্ছেন।
আরেক জেলে সেলিম উল্লাহ জানান, জেলেরা সাগরের পানি দেখলে বুঝতে পারেন, ইলিশ আছে, না নেই। ইলিশ যেখানে থাকবে, সেখানকার পানির লালচে রং ধারণ করে। ইলিশ ঝাঁক বেঁধে চলাচলের সময় মাঝেমধ্যে পানির ওপরে মাথা তুলে দেয়, তখন সাগরের পানি লালচে দেখায়। ডিম ছেড়ে ইলিশগুলো এখন সেন্ট মার্টিন, টেকনাফ, সোনাদিয়ার উপকূলের কাছাকাছি সাগরে অবস্থান করতে পারে। তাই তাঁরা ট্রলার নিয়ে ঘুরেফিরে এসব স্থানে ইলিশের সন্ধান চালাবেন।
কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত দেড় হাজারের মতো ট্রলার সাগরে নেমে গেছে। সন্ধ্যার আগে আরও কয়েক হাজার ট্রলার সাগরে নামবে। জেলার টেকনাফ, কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া ও চকরিয়া উপজেলা মিলিয়ে প্রায় ৬ হাজার মাছ ধরার ছোট–বড় ট্রলার আছে।
মহেশখালীর গোরকঘাটা জেটিঘাট থেকেও আজ শতাধিক ট্রলার সাগরে নেমেছে। ট্রলারগুলো সোনাদিয়া চ্যানেল হয়ে পশ্চিম দিকে গভীর বঙ্গোপসাগরের দিকে ছুটছে। ট্রলারমালিক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ২১ জন জেলে নিয়ে তাঁর ট্রলারটি বঙ্গোপসাগরের ৮০ কিলোমিটার গভীরে যাচ্ছে, সেখানে ইলিশের নাগাল পাওয়া যেতে পারে। সেখানে ইলিশের সন্ধান না পেলে ট্রলারটি সেন্ট মার্টিন উপকূলের দিকে যাবে।
এদিকে সেন্ট মার্টিন থেকেও প্রায় ৩০০টি ট্রলার ইলিশ ধরতে সাগরে নেমেছে। সেন্ট মার্টিনের ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, দ্বীপ থেকে পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকে ১২–১৫ কিলোমিটার গভীরে গিয়ে জাল ফেললে ইলিশের নাগাল পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, পটুয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার হাজারো ট্রলার সেন্ট মার্টিনে এসে ইলিশ ধরায় স্থানীয় জেলেরা বিপাকে পড়েন। কারণ, এখানকার ট্রলারগুলো আকারে ছোট। এই ট্রলারগুলো সকালে গিয়ে রাতে জাল ফেলে মাছ ধরে আবার পরের দিন সকালে ঘাটে ফিরে আসে। কিন্তু দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বড় ট্রলারগুলো আগেই জাল ফেলে রাখে বলে সকালে গিয়ে স্থানীয় জেলেরা জাল ফেলার জায়গা পাননা।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম খালেকুজ্জামান বলেন, দুই দফায় ৮৭ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ থাকায় ইলিশের প্রজনন কয়েক গুণ বেড়েছে। ইলিশের আকার ও ওজনও বাড়তি পাওয়া যাবে। কক্সবাজারে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ইলিশ আহরণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। গত সেপ্টেম্বর মাসে ২ হাজার ২৬৩ মেট্রিক টন ইলিশ ধরা পড়েছিল। চলতি মৌসুমে জেলায় ইলিশ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৭ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর ইলিশ আহরণ হয়েছিল ১৫ হাজার ২৫৬ মেট্রিক টন।