ক্যাবের বরিশাল বিভাগের জেলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর বরিশাল বিভাগের বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরিশাল জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার বেলা ১২টার দিকে ভার্চ্যুয়ালী অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন ক্যাব বরিশাল জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রণজিৎ দত্ত।

সভায় যুক্ত ছিলেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. শাহনেওয়াজ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সৈয়দ মিজানুর রহমান (রাজু) ও প্রচার সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম।

ক্যাবের রিসার্চ কো-অর্ডিনেটর প্রকৌশলী শুভ কিবরিয়ার সঞ্চালনায় সভায় আরও যুক্ত ছিলেন ক্যাবের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর আহমেদ একরামুল্লাহ, ভোক্তা অভিযোগ নিস্পত্তি জাতীয় কমিটি ও ক্যাব সদস্য রোজিনা পারভীন।

সভায় বক্তব্য রাখেন ক্যাব পিরোজপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পান্না, বরগুনা জেলা কমিটির সভাপতি জাকির হোসেন মিরাজ, বরগুনা জেলা কমিটির সহ-সভাপতি আবু জাফর সালেহ, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ আলম, বেতাগী উপজেলা (বরগুনা) কমিটির সভাপতি শামিম শিকদার ও বরিশাল জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক এ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহে মাহবুব।

সভায় ক্যাব বরিশাল জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রণজিৎ দত্ত বলেন, ‘বাজারে নানা রকম পণ্যদ্রব্যের পাইকারি ও খুচরা মূল্যের মধ্যে যে পার্থক্য তা অস্বাভাবিক। ভোক্তারা এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ নিয়ে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নানা মিটিং হলেও তার কোনো সুফল সাধারণ ভোক্তা পাচ্ছেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘পাইকারি পণ্য বিক্রেতারা কোনো রিসিট না দেবার কারণে খুচরা বিক্রেতারা অযৌক্তিক মূল্যে পণ্য বিক্রি
করছেন। ভোক্তা স্বার্থে এ বিষয়ের সমাধান হওয়া দরকার।’

বরগুনার বেতাগীর জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এলপি গ্যাসের যে দাম নির্ধারিত হয়, বাজারে তার চেয়ে বেশি দামে কিনতে হয়। এ বিষয়ে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনে অভিযোগ করেও কোনো সুফল মেলেনি।’

পিরোজপুরের ফাহিমা সুলতানা বলেন, ‘বিদ্যুতের মিটার ভাড়া ক্রমাগত ভাবে দিয়ে যেতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ভোক্তাদের স্বার্থ ও অধিকার ক্ষুণ্ণ হলেও কোনো প্রতিকার মিলছে না।’

মতবিনিময় সভায় ক্যাবের নেতৃবৃন্দরা বলেন, আমদানীকৃত পণ্যের সঙ্গে স্থানীয় বাজারে পণ্যের দামের যুক্তিসংগত পার্থক্য থাকছে না। ফলে ভোক্তারা ঠকছেন।

আমের বিষয়ে তারা বলেন, বাজারে নির্ধারিত সময়ের আগেই অপুষ্ট আম পাকিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে ভোক্তারা ঠকছেন।

ভোক্তা-অধিকার আইন অনুযায়ী জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন অবধি ভোক্তা কমিটি গঠন করে ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করার কথা থাকলেও বাস্তবে জেলা পর্যায়েও ঠিকমত ও গুরুত্ব সহকারে মিটিংগুলো হয় না। মিটিং হলেও মিটিংয়ে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয় না। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে তো এর বালাই নেই বলেও জানান নেতৃবৃন্দরা।

সভায় অংশ নিয়ে মানিকগঞ্জ, যশোর, ঝিনাইদহের তিনটি অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেন ক্যাবের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি অধ্যাপক এম শামসুল আলম।

তিনি বলেন, ‘মানিকগঞ্জে গ্যাসের দাবিতে আন্দোলনরত ক্যাবের কমিটি তাদের প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রমাণাদিসহ এসেছেন। তাদের আরও কিছু তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। এখন সেসব বিষয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়া যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভোলায় স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত গ্যাস তারা পাচ্ছেন না। সে বিষয়ে স্থানীয় আন্দোলনকে সংগঠিত করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তারপর এ বিষয়ে ঢাকায় ক্যাবের পক্ষ থেকে কর্মসূচি নেয়া হবে।’

শামসুল আলম বলেন, ‘ঝিনাইদহে বিদ্যুতের সমস্যা সমাধানের বিষয়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে অভিযোগ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। স্থানীয় ভাবে সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হলে ক্যাব সেই সমস্যা সেই দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের গোচরে এনে সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে।’

সমস্যাকে লিখিত আকারে উত্থাপন, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ তোলা এবং সমস্যাকে জনদাবিতে রূপান্তরের পরামর্শ দেন ক্যাবের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি।

এছাড়াও, সভায় নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে ক্যাবের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি যেসব পরামর্শ দেন। সেগুলো হলো-

  • আজকের সভায় ভোক্তাস্বার্থে যেসব সমস্যার কথা আলোচনায় এসেছে সেগুলো এই মিটিংয়ের রেজুলেশনে লিখিত ভাবে গৃহীত হবে। ক্যাব বরিশাল জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদকের উদ্যোগে বরিশাল বিভাগের সকল জেলার সঙ্গে আলোচনা করে এই রেজুলেশন চূড়ান্ত করে স্থানীয় যথাযথ কর্তৃপক্ষকে তা পাঠানো হবে। এর অনুলিপি ক্যাবের সভাপতি বরাবর পাঠাতে হবে।
  • সকল রকম ভোক্তা অভিযোগ ক্যাবের ডিজিটাল প্লাটফর্ম ‘ভোক্তাকণ্ঠে’ লিখিত ভাবে পাঠানোর জন্য সবাইকে বিশেষ ভাবে অনুরোধ করা হলো।
https://youtu.be/HxmELwOY5pI