ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: খুলনায় ওএমএসের চাল পাচারে কারা জড়িত সে বিষয়ে ওয়াকিবহাল নন খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও এ বিভাগের কোন তৎপরতা দেখা যায় না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীই গোয়েন্দা তৎপরতা চালিয়ে চাল উদ্ধার করছে বার বার।
মঙ্গলবার চাল উদ্ধারের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে খুলনা জেলা খাদ্য বিভাগ।
অন্যদিকে, র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আটক দুই ব্যক্তি খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাসহ আট জন ডিলারের নাম জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, মঙ্গলবার খুলনায় ওএমএসের সরকারি চাল বিক্রির উদ্দেশ্যে নিজেদের বস্তায় ভরার সময় দু’জনকে গ্রেফতার করে র্যাব-৬। এ সময় তাদের নিকট থেকে প্রায় ১৪ টন চাল উদ্ধার করে সরকারের এ সংস্থাটি। আটক ওই দুই ব্যবসায়ী হচ্ছে সোনাডাঙ্গা থানা এলাকার হাশেম শেখের ছেলে নাদিম আহমেদ ও পশ্চিম বানিয়াখামার এলাকার আবুল খালেকের ছেলে রবিউল ইসলাম। তাদের মধ্যে নাদিম আহমেদ উদ্ধার হওয়া চালের গোডাউন মালিক। তারা দীর্ঘদিন ধরে গরিবের চাল কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করে আসছিল। তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হয়েছে।
অভিযানে নেতৃত্বদানকারী র্যাব-৬ খুলনার সিনিয়র এএসপি পহন চাকমা বলেন, আমরা দীর্ঘদিন গোয়েন্দা নজরদারি চালিয়ে আসছিলাম। আমাদের কাছে তথ্য ছিল চোরাকারবারিরা নিয়মিত গরিবের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি চাল বাইরের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে আসছিল। এর ভিত্তিতে আমরা মঙ্গলবার অভিযান চালাই বড় বাজারে। সেখান থেকেই এ বিপুল পরিমাণ চাল জব্দ করা হয়।
তিনি বলেন, আমরা তদন্তের স্বার্থে এখনই কারা এ চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িত তা বলতে পারছি না। তবে আটক হওয়া ওই দুই ব্যবসায়ী আট জন ডিলারের নাম বলেছে। এছাড়া খাদ্য বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী এ কাজে সহযোগিতা করে বলেও উল্লেখ করেছে। এখন তাদের দেওয়া নামগুলো নিয়ে যাচাই-বাছাই করছি।
খুলনায় খাদ্য বিভাগ থেকে চাল পাচারের বিষয়টি নতুন কোন ঘটনা নয়। এর আগে ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে খুলনা মহানগরীর বৈকালীস্থ সরকারি খাদ্যগুদাম (সিএসডি) থেকে চাল পাচারের সময় শিরোমনি পুলিশ ক্যাম্প এলাকা থেকে এক ট্রাক ওএমএস’র চাল জব্দ করে র্যাব। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দৌলতপুর চালপট্টি থেকে খলিলুর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়।
ওই সূত্রের তথ্য ধরেই তারা রাতে খুলনা সিএসডি গোডাউনে প্রথম দফা অভিযান চালান। তার পর দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আবারও সিএসডি গোডাউনে অভিযান চালানো হয়। এ সময় কেন্দ্রীয় এ গুদামের ১৮ এবং ৩২ নং গোডাউনে থাকা চালের বেশির ভাগই খাওয়ার অনুপযোগী, নিম্নমান ও পঁচা ছিল। এ সময় ৯৯ দশমিক ৮৮০ মেট্রিক টন চালসহ ১৮ নং গুদাম এবং ৬৬ দশমিক ৬২০ মেট্রিক টন চালসহ ৩২ নম্বর গুদাম সিলগালা করা হয়।
এছাড়া, মঙ্গলবার পাচার হওয়া চাল গোডাউনের ২৬ নং গুদাম থেকে বের হওয়ায় সেটিও সিলগালা করে দেওয়া হয়। এ সময় চাল পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সিএসডি খাদ্যগুদাম হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আলী আসগর সরদারকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় আট জনকে আসামি করে র্যাব।
মামলায় সিএসডির ম্যানেজার, ২৬ নম্বর গোডাউন ইনচার্জ ইলিয়াস হোসেন, ১৭ নম্বর গোডাউন ইনচার্জ নূর নবী এবং গুদাম হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি নাসির উদ্দিন সরদার, সাধারণ সম্পাদক আলী আসগর সরদার, মোস্তফা কামাল ভুট্ট, চোরাই চাল ব্যবসায়ী খলিল ও ট্রাকচালককে আসামি করা হয়। মামলাটি বর্তমানে দুদকের তদন্তাধীন রয়েছে।
এদিকে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সূত্র জানিয়েছে, নগরীতে ৯২ জন ডিলারের মাধ্যমে চাল বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন ৩৭ জন ডিলার চাল তুলতে পারেন। এর মধ্যে ১৩টি ট্রাকে বিক্রি করা হয় এবং বাকিগুলো দোকানে বিক্রি করা হয়। প্রত্যেকটি স্পটে খাদ্য বিভাগের একজন কর্মকর্তা ট্যাগ অফিসার হিসাবে চাল বিক্রি তদারকি করেন। একজন ডিলার দুই টন করে চাল পান। কোন ডিলার কতটুকু চাল বিক্রি করল এবং কতটুকু বাকি থাকল তার হিসাব সংরক্ষণ করা হয়। এতসব নিয়মের মধ্যে ডিলাররা চাল বিক্রি করলে সরকারি চাল বাইরে যাওয়ার কথা নয়। তাহলে এই চাল কীভাবে সাধারণ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হলো। এমন প্রশ্ন এখন ঘুরে ফিরেই আসছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর সঙ্গে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জড়িত না থাকলে কোন ভাবেই চাল বাইরে যেতে পারে না।
এ বিষয়ে খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. বাবুল হোসেন বলেন, আমরা পত্রিকার মাধ্যমে ওএমএসের চাল উদ্ধারের বিষয়টি জানতে পেরেছি। সেটির তদন্তে জেলা সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক শেখ মো. জাহিদুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি কোন প্রতিবেদন না দিলে আমরা কিছুই বলতে পারছি না।
তদন্ত কমিটির প্রধান শেখ মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, চাল উদ্ধারের দিন খবর পেয়ে আমি থানায় যাই। সেটি ওএমএসের চাল কি না জানি না। তবে বস্তাগুলো ছিল খাদ্য বিভাগের। আমি চাল দেখিনি।
তদন্তের বিষয়ে তিনি বলেন, এখনো কোন চিঠি পাইনি। দায়িত্ব এলে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেব।