একে-অপরকে কটুক্তির মধ্যে দিয়ে উদযাপিত ৭ ই মার্চ
মুকুল কান্তি দাশ, চকরিয়া-পেকুয়া (কক্সবাজার): কক্সবাজারের চকরিয়ায় আওয়ামীলীগের গ্রুপিং এখন তুঙ্গে। মুলত চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনের পর থেকে বিভক্তি প্রকাশ্যে এসেছে। একারণে আওয়ামীলীগ,অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। কোন জাতীয় প্রোগ্রাম আসলেই আওয়ামীলীগের মধ্যে গ্রæপিংটা প্রকাশ্যে চলে আসে।
চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনের পর থেকে উপজেলা আওয়ামীলীগ ও পৌরসভা আওয়ামীলীগ যৌথভাবে কোন সভা-সমাবেশও করতে পারেনি। সর্বশেষ ৭ই মার্চ’র অনুষ্টানটিও পৃথকভাবে অনুষ্টিত হয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা, মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা ও পৌরসভা এবং পেকুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের যৌথ উদ্যোগে পৌরশহরের সিস্টেম কমপ্লেক্সের সামনে আয়োজিত ৭ই মার্চের সমাবেশের একটি পক্ষে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব জাফর আলম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাংসদ আলহাজ্ব জাফর আলম বলেন, আমরা যারা আওয়ামীলীগের রাজনীতি করেছি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে কেউ ঘরে থাকতে পারিনি। দিনের পর দিন পালিয়ে বেড়িয়েছি, জেল কেটেছি। শত জুলুম-নির্যাতন সহ্য করার পরও আওয়ামীলীগের সভাপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তণয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসে।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাফর আলম আওয়ামীলীগের অন্য পক্ষের নেতাদের নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেন। তিনি এসময় জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপিকে নিয়েও মন্তব্য করে বলেন। ওই নেতাকে আওয়ামীলীগ থেকে তিনতিন বার নৌকার প্রার্থী করা হলেও তিনি বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ ও তার সহধর্মীনি হাসিনা আহমদের কাছেও পরাজয় বরণ করেন।
এসময় তিনি চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফজলুল করিম সাঈদী, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম এবং চকরিয়া পৌরসভার মেয়র মো.আলমগীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিষধগার করেন। তিনি এসব নেতাদের বিরুদ্ধে কটুক্তিমুলক মন্তব্যও করেন।
এতে আরও বক্তব্য রাখেন- চকরিয়া মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলাম বাবলা, মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বুলবুল, পেকুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু, চকরিয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কাউছার উদ্দিন কছিরসহ আওয়ামীলীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা।
অপরদিকে, চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের হল রুমে ৭ই মার্চ উপলক্ষে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেন চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগ ও পৌরসভা আওয়ামীলীগ।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন- চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী। আলোচনা সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন- জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এটিএম জিয়া উদ্দিন চৌধুরী জিয়া।
এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফজলুল করিম সাঈদী, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন-সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র মো.আলমগীর চৌধুরী, আওয়ামীলীগ নেতা জামাল উদ্দিন জয়নাল, আওয়ামীলীগ নেতা অধ্যাপক আকম গিয়াস উদ্দিন, চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি অধ্যাপক মোসলেহ উদ্দিন মানিক, চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা আতিক উদ্দিন চৌধুরী, উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জসীম উদ্দিন, চকরিয়া উপজেলা সেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি শওকত হোসেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক মিজবাউল হকসহ উপজেলা, পৌরসভা এবং আওয়ামীলীগের অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতারা।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ৭ই মার্চে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া ভাষন আজ বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় ভাষন। এই ভাষনের মধ্য দিয়ে বাঙ্গালী জাতি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নিজেদের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে যাপিয়ে পড়েছিলো।
এসময় চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব জাফর আলমকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন মন্তব্যও করেন।
তারা বলেন, গত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে তাকে নিবাচিত করেন। কিন্তু তিনি সংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে শুধু আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, আমরা রাজনীতি করি মানুষের জন্য। নিজের আখের গোছানোর জন্য রাজনীতি করি নাই। আজকে যদি নিজের আখের গোছানোর জন্য রাজনীতি করতাম তাহলে কয়েকটা সিস্টেম কমপ্লেক্সের মালিক হতে পারতাম।
তিনি আরও বলেন, লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে বিশাল জনসভা করা যায়। কিন্তু এই টাকা দিয়ে মানুষের মন জয় করা যাবেনা। এসময় তিনি সংসদ জাফর আলমকে কটুক্তি করে বলেন, চকরিয়া পৌরশহরে সিস্টেম কমপ্লেক্স নামের একটি মার্কেট রয়েছে। ওই মার্কেটে মানুষদের সিস্টেমে ফেলে টাকা আদায় করা হয় বলেও অভিযোগ করেন।
এর আগে গত ২১ শে ফেব্রæয়ারি মহান ভাষা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের এক অনুষ্টানে সাবেক জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপি চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব জাফর আলমকে উদ্দেশ্য করে নানা ধরনের বক্তব্য রাখেন। তার ওই বক্তব্যে এমপি জাফর আলমের টাকার উৎস নিয়েও প্রশ্ন তুলেন।
তিনি ওই সভায় বলেন, জাফর আলম এক সময় খুব গরীব ছিলো। কিন্তু গত নির্বাচনে নৌকা প্রতিকে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে রাতারাতি তিনি কোটিপতি বনে যান। চকরিয়া-পেকুয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় নামে-বেনামে প্রচুর সম্পদের পাহাড় গড়েন।
তবে, চকরিয়ায় আওয়ামীলীগের এই বিরোধকে ভালো চোখে দেখছেন না দলের তৃণমুল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। তারাও আক্ষেপের সুরে বলেন, তারা সবাই ক্ষমতার দ্বন্ধে অন্ধ হয়ে গেছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ এবং দলকে সুসংহত করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্ত কিছু কিছু নেতা তৃণমুল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বিভক্ত করে ফায়দা হাছিল করছেন। কোন জাতীয় দিবসের অনুষ্টান হলেই একজন-অপরজনকে কটুক্তি করে বক্তব্য রাখছেন। এসব নেতাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র সহণশীল আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছেনা। তারা যেখানে বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরে যুব সমাজের সামনে বক্তব্য রাখবেন সেখানে তারা একজন-অপরজনকে অশ্রাভ্য ভাষা প্রয়োগের মাধ্যমে বক্তব্য রাখছেন । যা দল এবং নিজেদের জন্য মোটেও সুখকর নয়। তাই তৃণমুল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা এসব নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলের জন্য কাজ করার আহবান জানান।