ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: ফেনীর সীমান্তবর্তী এলাকায় স্থাপিত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত হাট দীর্ঘ তিন বছর বন্ধ থাকার পর পুনরায় চালু হলো। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বাজার চালু হওয়ার কথা থাকলেও মালামাল পৌঁছাতে সময় লাগায় বেলা ১১টায় বাজারের কার্যক্রম শুরু হয়।
সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সীমান্ত হাট চালু থাকবে।
বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান ফেনী জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অভিষেক দাস ও ভারতের শ্রীনগরের এডিএম ধনবাবু রিয়ন আনুষ্ঠানিক ভাবে ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময় করে সীমান্ত হাট চালু করেন।
কর্তৃপক্ষ জানায়, সীমান্ত হাট সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার জন্য এবার কিছু নীতিমালা পরিবর্তন করা হয়েছে। এ বিষয়ে ০২ মে ফেনীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান অভিষেক দাস সই করা এক গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ছাগলনাইয়া উপজেলার পূর্ব মধুগ্রাম ও ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরার শ্রীনগরে স্থাপিত সীমান্ত হাটটি পুনরায় চালু হচ্ছে। হাটে প্রবেশের জন্য প্রতি টিকিটের মূল্য ২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়ানোর জন্য প্রতি সপ্তাহের হাটবারের আগের দিন ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রবেশ টিকিট সংগ্রহ করা যাবে। বাজারের দিন টিকিট সংগ্রহ করা যাবে না।
নির্ধারিত হাটের দিন টিকিট বিক্রি করা হবে না। হাটে প্রবেশের সময় ক্রেতার জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভেন্ডি কার্ড প্রদর্শন করতে হবে। হাটে কোনো জালিয়াতি ধরা পড়লে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দৈনন্দিন পণ্যের অতিরিক্ত পণ্য ক্রয় করা যাবে না।
সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়ানো এবং বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি দেশের তৃতীয় সীমান্ত হাট হিসেবে চালু হয় ফেনীর বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত হাটটি। ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার পূর্ব মধুগ্রাম ও ভারতের ত্রিপুরার শ্রীনগর এলাকার মাঝামাঝি স্থানে বাজারটি স্থাপন করা হয়। এখানে ২৬টি করে ৫২টি দোকান সমান ভাগে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব দোকানে সীমান্ত এলাকার পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে উৎপাদিত পণ্য বেচাকেনা করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, এ বাজারের বাংলাদেশি ক্রেতাদের কাছে ভারতীয় মসলা, কসমেটিকস, দুধ, হরলিক্সসহ বিভিন্ন পণ্যের কদর বেশি। অন্যদিকে ভারতীয় ক্রেতাদের বাংলাদেশি শুঁটকি, মুদিমাল, বেকারি, ফল ও প্লাস্টিকের পণ্যের প্রতি ঝোঁক বেশি। সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার এ হাটে ভারতীয় দোকানিদের বিক্রির তুলনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা হতো মাত্র ২০-২৫ শতাংশ।
স্থানীয় বাসিন্দা আলতাফ মিয়া বলেন, সীমান্ত হাট থেকে বাংলাদেশি ক্রেতারা বস্তা ভরে মালামাল ক্রয় করেন। কিন্তু ভারতীয় ক্রেতারা যৎ সামান্য বাজার করে বাজার ত্যাগ করেন। মূলত এ বাজারে বাংলাদেশিরা আসেন বাজার করতে। আর ভারতীয়রা আসেন বাংলাদেশে থাকা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে।
ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌমিতা দাশ বলেন, সীমান্ত হাটে এবার কিছু নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে। সেই আলোকে সুষ্ঠু ভাবে বাজার ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সীমান্ত হাট চালু থাকবে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও বর্ডার হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান অভিষেক দাস বলেন, বাংলাদেশ অংশে প্রতি সপ্তাহের সোমবার অর্থাৎ হাটের আগের দিন ইউএনও কার্যালয়ে সীমান্ত হাটে প্রবেশের টিকিট বিক্রি করা হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত, চোরাচালান প্রতিরোধ ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের হয়রানি বন্ধে হাটে কঠোর নজরদারি অব্যাহত রাখবে প্রশাসন।
এর আগে ২০২০ সালের ০৩ মার্চ করোনা পরিস্থিতিতে উভয় দেশের কর্তাদের সম্মতিতে হাটটি বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে ২৬ এপ্রিল বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে ০৯ মে থেকে বাজারটি চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।