ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: একদিকে তীব্র দাবদাহ অন্যদিকে ভয়াবহ লোডশেডিং। সারাদেশের ন্যায় রাজবাড়ীতেও সীমাহীন এ দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেতে কদর বেড়েছে চার্জার ফ্যান এবং তালপাতা দিয়ে তৈরি হাতপাখার। কিন্তু গত দুদিন ধরে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স শোরুম ও দোকান থেকে বৈদ্যুতিক চার্জার ফ্যান উধাও হয়ে গেছে। টাকা দিয়েও মিলছে না চার্জার ফ্যান। আর তালপাতা দিয়ে তৈরি ৩০ থেকে ৪০ টাকার হাতপাখা বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত।
সরেজমিনে রাজবাড়ী বড় বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দুই থেকে তিনটি দোকানে তালপাতার হাতপাখা বিক্রি করছে। তীব্র গরম ও লোডশেডিং এর কারণে চাহিদা বেড়েছে হাতপাখার। প্রতটি দোকানে তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন প্রকার হাতপাখা। এর মধ্যে ৪০ টাকার তালপাতার পাখা মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়, বাঁশের হাতলের পাখা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
রাজবাড়ী ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ী জেলার পাঁচ উপজেলা মিলে ওজোপাডিকোর গ্রাহক সংখ্যা এক লাখের বেশি। এই এক লাখ গ্রাহকের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা দিতে দিনে প্রয়োজন ৩৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ও রাতে প্রয়োজন ৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সেখানে দিনে ও রাতে মিলে গড়ে পাওয়া যাচ্ছে ২০ থেকে ২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ মিলছে অর্ধেকেরও কম। এ জন্য এলাকা নির্ধারণ করে ক্রমান্বয়ে লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি বিদ্যুৎ বিভাগের।
অন্যদিকে রাজবাড়ী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তথ্যমতে, রাজবাড়ী জেলার পাঁচ উপজেলা মিলে পল্লী বিদ্যুৎ এর গ্রাহক সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ। এই আড়াই লাখ গ্রাহকের জন্য ২৪ ঘণ্টায় বিদ্যুৎ প্রয়োজন ৫০ মেগাওয়াট এর মত। দিনে চাহিদা থাকে ৩৫ মেগাওয়াট, সেখানে পাচ্ছে ২৫ মেগাওয়াট। রাতে চাহিদা থাকে ৫০ মেগাওয়াট, সেখানে বরাদ্দ ৩০ থেকে ৩৫ মেগাওয়াট। চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম থাকায় দিনে রাতে এক ঘণ্টা পর পর লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
ভিশন শোরুমে আসা রাজিবুল ইসলাম বলেন, একে তো প্রচন্ড গরম, তারপর আবার শুরু হয়েছে তীব্র লোডশেডিং। তাই ভিশন শোরুমে চার্জার ফ্যান কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু এসে দেখলাম চার্জার ফ্যান নেই। সব নাকি শেষ হয়ে গেছে। লোডশেডিং ও গরমের কারণে চাহিদা বেড় যাওয়ায় গত দুই দিনে নাকি সব শেষ হয়ে গেছে। এখন হাতপাখাই ভরসা।
পাখা ক্রেতা রকিব হাসান বলেন, তীব্র গরমের সঙ্গে অতিরিক্ত মাত্রায় লোডশেডিং বেড়েছে। এক ঘণ্টা পর পর লোডশেডিং হয়। দিনে কষ্ট সহ্য করে থাকা গেলেও রাতে আর সহ্য হয় না। এছাড়াও রাতে বেশি সমস্যা হয় বাচ্চাদের। তারা গরমে ঘুমাতে পারে না। তাই হাতপাখা কিনতে আসলাম। কিন্তু এসে দেখি গরমের সঙ্গে সঙ্গে হাতপাখার বাজারও আগুন। ৩০ টাকার পাখা চাচ্ছে ৮০ টাকা। দামাদামির সুযোগ নেই। বেশি দাম হলেও বাধ্য হয়ে কিনতে হলো।
আরেক পাখা ক্রেতা কলেজ ছাত্র সুজিত বিশ্বাস বলেন, কলেজের হোস্টেলে থাকি। বিদ্যুৎ না থাকলে রাতে অনেক কষ্ট হয়। তাই পাখা কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু পাখার যে দাম চাচ্ছে তাতে আমি কিনতে পারলাম না। এত দাম দিয়ে পাখা কেনার সামর্থ্য আমার নেই।
আরেক পাখা ক্রেতা কানিজ ফাতেমা বলেন, চার্জার ফ্যান কেনার সামর্থ্য নেই। তাই হাতপাখা কিনতে এসেছি। রাতে বাচ্চাদের ঘুমাতে অনেক কষ্ট হয়। শরীর ঘেমে ঠান্ডা-গরম লেগে যায়। তাই পাখাই শেষ ভরসা। কিন্তু পাখা কিনতে এসে দেখলাম দ্বিগুণ, তিনগুণ দাম। ৪০ টাকার পাখা চাচ্ছে ৮০ টাকা, ২০ টাকার পাখার দাম চাচ্ছে ৬০ টাকা। সুযোগ বুঝে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ি দিয়েছে।
পাখা বিক্রেতা বিজয় দত্ত বলেন, তীব্র গরম ও লোডশেডিং এর কারণে তালপাতার হাতপাখার চাহিদা বেড়েছে। আগে পাখা কম দামে কিনতাম, কম দামে বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কিন্তু ক্রেতারা সেটা বোঝার চেষ্টা করছে না। তারা ভাবছে আমরাই হয়তো সুযোগ বুঝে দাম বাড়িয়েছি।
আরেক পাখা বিক্রেতা সুশান্ত পাল বলেন, পাখার সংকট দেখা দিয়েছে। যারা পাখা বানায় তাদের কাছ থেকে আমরা পাখা পাচ্ছি না। আমরা তো কিনে এনে বিক্রি করি। পাখা পেলেও সেটা তারা বেশি দামে বিক্রি করছে। তাই আমরা যেভাবে কিনছি সেভাবে দাম রেখেই বিক্রি করছি। আমি বগুড়া থেকে পাখা এনেছি খরচসহ প্রত্যকটি পাখা পড়েছে ৫৫ টাকা। একটা পাখা বিক্রি করে ১০ টাকা লাভ না হলে তো চলে না।
ভিশনের ডিলার ইব্রাহিম ইলেকট্রনিক্সের মালিক মো. ইব্রাহিম বলেন, তীব্র গরম ও লোডশেডিং এর কারণে চার্জার ফ্যানের চাহিদা বেড়েছে। আমার স্টকে যা ছিলো সব বিক্রি হয় গেছে। অনেকেই চার্জার ফ্যান কিনতে এসে ফেরত যাচ্ছেন। কোম্পানিতেও মাল নেই।