মোঃ আহসান উল হক তুহিন: সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার আয়োজিত বাণিজ্য মেলায় অভিযান পরিচালনা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রংপুর জেলা কার্যালয়।
বাণিজ্য মেলার ভেতরের বাম পাশে ‘মা এন্টারপ্রাইজ’ এবং মাঠের উত্তর পাশে অবস্থিত ‘মা ক্রোকারিজ’ নামক প্রতিষ্ঠান দুটি একটি ইলেকট্রনিক্স পণ্য কিনলে সঙ্গে ইলেকট্রনিক্স ও সিরামিকসসহ আরও ১০টি পণ্য বিনামূল্যে পাওয়া যাবে মর্মে মেলায় প্রবেশকারী ভোক্তাদের নিম্নমানের নকল পণ্য গছিয়ে দেয়া হচ্ছিল।
এক্ষেত্রে নগরীর স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় সনি ব্রাভিয়া টেলিভিশন, ওয়ালটন ওয়াশিং মেশিন, প্রেস্টিজ প্রেশার কুকার ও ওভেনসহ নানা কোম্পানির নকল ও কপি পণ্য চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মেলায় আগত ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করে আসছিল।
বিভিন্ন সময়ে প্রতারণার শিকার হওয়া ভোক্তারা স্থানীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে এ বিষয়ে উপযুক্ত প্রমাণসহ লিখিত অভিযোগ দাখিল করে। পরে ওই দপ্তরের সহকারী পরিচালক আফসানা পারভীন চেম্বার, ক্যাবের প্রতিনিধি ও অভিযোগকারীদের সঙ্গে নিয়ে সরেজমিনে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে তদারকি অভিযান চালায়। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় মেলা মাঠে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠান দুটিকে ভোক্তা অধিকার আইনের ৪৪ ধারায় ২৫ হাজার টাকা করে মোট ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ করে আদায় করা হয়।
এছাড়াও, ভুক্তভোগী ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা সকল পণ্য জমা নিয়ে সমস্ত টাকা তাদের ফেরত দিয়ে দেয়ার আদেশ জারি করেন। এ সময় রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক আতিকুল্লাহ আতিক প্রদত্ত আদেশটি নিজ জিম্মায় নিস্পত্তির দায়িত্ব নিলে দায়েরকৃত অভিযোগের সুরাহা হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এ মেলায় এরূপ প্রতারণাকারী পাঁচটি প্রতিষ্ঠান নির্ভয়ে এমন প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা এভাবেই পুনাক (পুলিশ নারী কল্যাণ) মেলা, বাণিজ্য মেলাসহ সারাদেশে প্রায় সকল বৃহৎ পরিসরের মেলায় ষ্টল ভাড়া নিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রায় প্রতিটি ক্রেতাকেই একপ্রকার জোর করেই ৫০ হাজার টাকার নষ্ট পণ্য তারা নিতে বাধ্য করেছে। পণ্যগুলোয় কোন নির্দিষ্ট শো-রুমের যথার্থ ঠিকানা না থাকায় সেগুলো নষ্ট হলে কিম্বা সার্ভিসিং এর প্রয়োজন হলেও তা সার্ভিসিং করা সম্ভব নয়।
অভিযান চলাকালে যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করা হয়েছে, সেই সব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদে তারা তাদের প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতা সরাসরি অস্বীকার করেন।
এই মেলা মাঠের পশ্চিম পাশে মাত্র ২০০ গজের মধ্যে রংপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পূর্ব পাশে ওই একই দূরত্বে রংপুর জেলা পুলিশের রিজার্ভ ফোর্স রেঞ্জ, উত্তর পাশে জেলা ক্রীড়া সংস্থা এবং দক্ষিণ পাশে মাত্র ৫০০ গজের মধ্যে জেলা ও বিভাগীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ের অবস্থান। এককথায় প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রতারণার আসর পেতে এমন ব্যবসা করে আসছিল এ প্রতিষ্ঠানগুলো।
এক প্রশ্নের উত্তরে সহকারী পরিচালক আফসানা পারভীন জানান, ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ‘মা ক্রোকারিজ’ নামক প্রতিষ্ঠানকে এর আগেও রংপুর পুলিশ লাইন্স মাঠে ‘পুনাক’ আয়োজিত মেলায় অনুরূপ প্রতারণার দায়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেন তিনি।
অভিযান শেষে সহকারী পরিচালক আফসানা পারভীন উপস্থিত সাংবাদিক ও মেলায় আগত দর্শণার্থীদের সুনির্দিষ্ট শো-রুম ব্যতীত সকল প্রকার পণ্য ক্রয় করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন।