মো. নজরুল ইসলাম, ময়মনসিংহ: দীনেশচন্দ্র সেন সংকলিত মৈমনসিংহ গীতিকা বাঙালি জাতির সম্পদ। এই মহাসম্পদ বিশ্বে বাংলা, বাঙালি, বাংলার সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও সাহিত্যকে বিশ্বব্যাপী যে পরিচিতি দিয়েছে তা অভাবনীয়। এটাকে ডিজিটাল রূপান্তরের মাধ্যমে ডিজিটাল যুগের উপযোগী করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেবার প্রয়োজনীয়তার ওপর মন্ত্রী গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, জারি-সারী, ভাওয়াইয়া-ভাটিয়ালী, বাউল গান, পালা গান, পুঁথিপাঠ জুড়ে আছে বাঙালির আত্মপরিচয়ের সঙ্গে। বাঙালির এই প্রাচীন সম্পদকে রক্ষায় এগুলো চর্চা করতে হবে । বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরাম সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে এই কাজটি করে যাচ্ছে।
মন্ত্রী ৮ মার্চ ঢাকায় বাংলা একাডেমীর ভাষা শহিদ মুক্ত মঞ্চে বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের উদ্যোগে মৈমনসিংহ গীতিকার তৃতীয় সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক জাতিসত্তার কবি নূরুল হুদা, সাবেক সচিব জনাব আব্দুস সামাদ, বিশিষ্ট শিশু সাহিত্যিক কবি রফিকুর রশিদ এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের সেক্রেটারি রাশেদুল হাসান শেলী বক্তৃতা করেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের সভাপতি জনাব মোস্তাফা জব্বার বাংলাদেশে মৈমনসিংহ গীতিকার তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশনাকে একটি অত্যন্ত সময়োপযোগী কাজ উল্লেখ করে বলেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিশেষ করে গারো পাহাড়ের পাদদেশ থেকে প্রবাহিত হাওরাঞ্চলের প্রাচীন জীবন গাঁথা মৈমনসিংহ গীতকায় উঠে এসেছে। এটার যেমন সাহিত্য মূল্য আছে তেমনি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে রয়েছে এর নিবিঢ় সম্পর্ক। এই সম্পদ আমাদের রক্ষা করতে হবে। “পরাবাস্তবতার যুগে বাংলার সাহিত্য সংস্কৃতি বা ময়মনসিংহ গীতিকাকে পিছিয়ে রাখতে চাইনা” বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন। পৃথিবীতে বাঙালির পরিচয় সুদৃঢ় করতে যে পরিচয়টা পেয়েছি সেটা হলো ভাষা। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছেন বলেই বাংলাদেশ এখন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের রাজধানী বলে উল্লেখ করেন ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার এই উদ্ভাবক। তিনি বলেন আগামী দশ বছরে বাংলা ভাষা হবে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহ্ত্তম মাতৃভাষা। তিনি বৃহ্ত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের উদ্যোগে মৈমনসিংহ গীতিকার মতই পূর্ববঙ্গ গীতিকার সংস্করণ প্রকাশ করার ঘোষণা দেন।
বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলায় তার বিশেষ অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে বিজয় বাংলা কীবোর্ড ও সফটওয়্যারের জনক জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমি সারা বিশ্বের একজন অনন্য গর্বের গর্বিত মানুষ এজন্য যে এই মেলার সকল বাংলা বই-এর সকল অক্ষর আমি নিজের হাতে ডিজিটাল অক্ষরে রূপান্তর করেছি। বিশ্বের আর কোন মানুষের এমন সৌভাগ্য হয়েছে বলে আমার জানা নেই। হাওরের কাদামাটি পায়ে মাখিয়ে এতোটা সৌভাগ্য অর্জন করা আমার জন্য এক অসাধারণ অর্জন। এক জীবনে একজন মানুষের এর চাইতে আর বেশি কিছু চাইবার থাকেনা।
অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি নূরুল হুদা বলেন, মৈমনসিংহ গীতিকা নতুন যুগের চাহিদা অনুযায়ী রিপ্রোডাক্ট করতে পারলে কেবল বাণিজ্যিকভাবেই নয় এর মাধ্যমে মানুষে মানুষে বন্ধন সমুন্নত রাখা সম্ভব। তিনি কবি সাহিত্যিকদের এক্ষেত্রে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি লোকজ সাহিত্যকে বাংলাদেশের প্রাণ বলে উল্লেক করেন। কবি হুদা মৈমনসিংহ গীতিকার লোককবিদের রচনার অংশ বিশেষ শ্রোতাদেরকে পাঠ করেও শোনান।
পরে মন্ত্রী মৈমনসিংহ গীতিকার তৃতীয় সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন করেন। একুশের বই মেলায় চয়ন প্রকাশন ষ্টল নং১৫৮ এবং অন্যান্য স্টল নং ৪৩৯,৪৪০ ও ৪৪১ পাওয়া যাবে।