ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: বরিশালে মাছের বাজার অনেকটাই ঊর্ধ্বমুখী। হাঁক-ডাক আর ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় মুখর থাকা বরিশালের সবচেয়ে বড় মাছের মোকাম ‘পোর্টরোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র’ ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে মাছের আমদানি অনেকটাই কম। তেমন ভাবে ইলিশের আমদানিও নেই। তবে বাজার সয়লাব চাষের রুই, কাতল, তেলাপিয়া, চিংড়ি ও পাঙাসে।
মাছ ব্যবসায়ী হাবিব জানান, অক্টোবরে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে মোকামগুলোতে মাছের আমদানি কিছুটা বেড়েছিল। বিশেষ করে নদীতে ইলিশের থেকেও বেশি পাঙাস মাছ ধরা পড়ছিল। ফলে কয়েকদিন নদীর পাঙাসের দখলে পাইকারি ও খুচরা বাজার ছিল। কিন্তু স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এখন বাজারে খাল-বিল, নদ-নদীর তেমন একটা মাছের দেখা মিলছে না। যে মাছ পাওয়া যাচ্ছে তার মধ্যে বেশির ভাগই পুকুর ও ঘেরের চাষের মাছ।
তবে শুধু খাবারের দাম বাড়ার কারণে গত কয়েক বছরে চাষের মাছের দামও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী সজীব।
তিনি বলেন, চাষের মাছ হলেও রুই-কাতলসহ এ জাতীয় মাছের দাম অঞ্চল ভেদে কম-বেশি হয়ে থাকে। যেমন একটি বাজারে চাষের রুই মাছ কেজিপ্রতি ২৮০ টাকায় পাওয়া গেলেও সেখানে ৪০০ টাকা কেজি দরের চাষের রুই-কাতলও পাওয়া যায়। আর এ দুই দরের মাছ খেতে স্বাদ ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে সব মিলিয়ে এখন আর চাষের মাছও সস্তায় মেলে বলা যায় না। আর আমদানি বাড়লে দাম কমে যে সেটা স্বাভাবিক।
যদিও দাম কমার বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে ক্রেতাদের। মাইনুল ইসলাম নামে একজন ক্রেতা বলেন, গত কয়েক বছরে আমদানি কমের সময় যদি মাছের দাম বাড়ে ২০ টাকা কেজিপ্রতি। তাহলে আমদানি ঠিক হলেও সেই দর কমে মাত্র ১০ টাকা। অর্থাৎ আগের থেকে ১০ টাকা বাড়তি দরই থেকে গেল। আবার এখন তো চাষের মাছ, বিলের মাছ, নদীর মাছ ও সাগরের মাছের নামে ভেদাভেদ রয়েছে। আবার চাষের মাছের মধ্যে বাগেরহাট, ফরিদপুরের পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গ-উত্তরবঙ্গেরও ভেদাভেদ রয়েছে। আর এ ভেদাভেদেই মাছের দরও ভিন্ন ভিন্ন রকমের হয়।
তিনি বলেন, এতকিছুর পরও প্রতারণাও তো রয়েছে। যেমন- কোরাল, শিং, চিংড়ি, কাতল, পাঙাসসহ অনেক চাষের মাছই দেখলে বোঝার উপায় থাকে না এটি নদীর না চাষের। কিন্তু দেখা যায় চাষের মাছের থেকে নদীর মাছের দাম বেশি হওয়ায় চাষের মাছও নদীর বলে বিক্রি করা হয়। অর্থাৎ বাড়তি দামের খড়গ সব সময় ক্রেতাদেরই বইতে হয়।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সপ্তাহের ব্যবধানে চাষের মাছেও কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৫০ টাকা।
বাজার ঘুরে জানা গেছে, ফরিদপুর-শরীয়তপুর থেকে আসা চাষের রুই ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এছাড়া বাগেরহাট, মোড়লগঞ্জের চাষের চিংড়ি প্রকারভেদে ৮০০ থেকে দেড় হাজার টাকা, চাষের কই ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, শিং ৪০০ টাকা, টেংরা ৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ টাকা, গ্লাস কাপ ২০০ টাকা, সিলভারকাপ ১৫০ টাকা, কোরাল ৬০০ টাকা, পাঙাস ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর নদীর পোয়া আকার ভেদে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, নদীর পাঙাস ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, কেজি সাইজের ইলিশ ২০০০ হাজার টাকা দরে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে।
রফিক নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে মাছের আমদানি কমের দোহাই দিয়ে দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। চাষের মাছের দাম বেশি হলে আমরা সাধারণ মানুষ যাবো কোথায়। আবার যে ধরনের মাছের প্রতি মানুষের চাহিদা কম তার দাম কম। কিন্তু যেটার ওপর চাহিদা আছে সেটার দাম বেশি চাওয়া হচ্ছে। তার মানে ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট বা পলিসির কারণে মাছের দাম বাড়ে। এখানে আমদানির কথা মানেই একটা অজুহাত মাত্র।
প্রতিনিয়ত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানিয়েছেন মেহেদি হাসান নামে অপর ক্রেতা।
যদিও সরবরাহ বাড়লে দামও কমে যাবে বলে জানিয়েছেন পোর্টরোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আড়তদার সমিতির সাবেক অর্থ সম্পাদক ইয়ার হোসেন শিকদার। তিনি বলেন, শীত শুরু হওয়ায় নদী ও সাগরে কাঙ্ক্ষিত মাছের দেখা মিলছে না বিধায় বর্তমান পরিস্থিতি সৃষ্ট হয়েছে। এটি দ্রুত কেটে যাবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিম) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, শীতের এ সময়টাতে মাছের আমদানি কম থাকাটা স্বাভাবিক। কারণ প্রাকৃতিক কারণেই এ সময়টাতে নদ-নদীতেও তেমন একটা মাছ ধরা পড়ে না।