ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: চলমান দাবদাহে বরগুনায় বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ওষুধের পাশাপাশি রোগীদের শরীরের পানির ঘাটতি পূরণে দেওয়া হচ্ছে ডাবের পানি। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বরগুনায় একেকটি ডাব বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ২২০ টাকায়। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এখন প্রায় দ্বিগুণ দামে ডাব কিনতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতা ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর স্বজনরা।
বৈশাখের শুরু থেকেই সারাদেশে চলছে তাপপ্রবাহ। দেশের অনেক জায়গায় বৃষ্টির দেখা মিললেও বরগুনায় এখনো দেখা মেলেনি বৃষ্টির। এতে গরমের তীব্রতা না কমায় সাধারণ মানুষের তৃষ্ণা মেটাতে চাহিদা বেড়েছে বিভিন্ন ধরনের তরল পানীয়র। এছাড়া তীব্র গরমে ডায়রিয়ার প্রকোপে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে অতিরিক্ত রোগী ভর্তি হওয়ায় চিকিৎসা সেবা দিতে বেগ পেতে হচ্ছে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের। এসব রোগীদের শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ করতে ডাব কিনে খাওয়াচ্ছেন বেশির ভাগ রোগীর স্বজনরা। তবে ডাবের দাম বেশি হওয়ায় চাহিদা থাকলেও দু/একটির বেশি ক্রয় করতে পারছেন না অনেকেই।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিল মাসে এক হাজার ৩৩৫ জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। এতে গড়ে প্রতিদিন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন ৪৫ থেকে ৫০ জন রোগী। এসব রোগীদের তরল খাবার হিসেবে ডাব কিনে খাওয়াতে হাসপাতালের সামনের ডাব বিক্রির দোকানে ভিড় করছেন স্বজনরা। তবে আকারভেদে প্রতিটি ডাব কিনতে হচ্ছে ১৩০ টাকা থেকে ২২০ টাকায়।
বরগুনার ঢলুয়া নামক এলাকার বাসিন্দা ফয়সাল ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ছেলেকে নিয়ে ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। তিনি বলেন, ডাক্তার বলছে ছেলেকে ডাব খাওয়াতে। এখন ডাব কেনা ছাড়া কোনো উপায় নেই। তবে ডাবের দাম যে এতো বেশি তা বুঝতে পারিনি। ডাক্তার বলায় বাধ্য হয়ে বেশি দামে ডাব কিনে ছেলেকে খাওয়াতে হচ্ছে। এছাড়া আমাদের কিছু করার নেই।
দোকানে ডাবের দাম বেশি হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি ছেলের জন্য গ্রাম থেকে কম দামে ডাব কিনে নিয়ে এসেছেন আবুল বাসার। তিনি বলেন, দোকানে ডাব কিনতে গিয়ে দেখি বড় আকারের একটি ডাবের দাম ২২০ টাকা। এ দামে আমি একটি ডাব না কিনে কিছু টাকা খরচ করে গ্রামের বাড়ি থেকে কম দামে অনেকগুলো ডাব কিনে এনেছি। বেশি টাকায় দোকান থেকে ডাব কেনার সামর্থ্য আমার নেই।
হাসপাতালের সামনের দোকানগুলোর মতো একই চিত্র শহরের সব অলিগলির ডাবের দোকানে। অসুস্থ বাচ্চার জন্য বাজার থেকে ডাব কিনতে এসে অ্যাডভোকেট সঞ্চয় বলেন, আমার বাচ্চা অসুস্থ থাকায় ডাক্তার পরামর্শ দিয়েছেন ডাব খাওয়াতে। বাজারে এসে দেখি অনেক বেশি দামে ডাব বিক্রি হচ্ছে। এখন আমাদের কিছু করার নেই। বাচ্চা অসুস্থ বাধ্য হয়ে বেশি দামে ডাব কিনতে হচ্ছে।
বরগুনার বিভিন্ন গ্রামে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, গাছ থেকে একেকটি ডাব আকারভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় পাইকারদের কাছে বিক্রি হয়। পরে ওই ডাবই খুচরা ব্যবসায়ীরা সাধারণ ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকায়।
দামের এমন তারতম্যের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের সামনে সোহাগ নামের এক খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, আমরা সরাসরি গ্রাম থেকে ডাব সংগ্রহ করতে পারি না। যারা ভ্যানগাড়ি দিয়ে গ্রাম থেকে ডাব সংগ্রহ করে তাদের থেকে বেশি দামে ডাব কিনে বিক্রি করি। এছাড়া গ্রাম থেকে পাইকাররা ডাব কিনে ঢাকায় বিক্রি করায় চাহিদা অনুযায়ী আমরা ডাব পাই না। যা পাই তা প্রায় ৭০ থেকে ৮০ টাকায় কিনতে হয়। এর মধ্যে দুই একটা নষ্ট বের হয়। এ কারণেই আমাদের বেশি দামে ডাব বিক্রি করতে হয়।
বরগুনা পাইকারি ব্যবসায়ী সাদ্দাম বলেন, বর্তমানে গরমের সময়ে গ্রাম থেকে ৫০ টাকা করে ডাব কিনে আমাদের পর্যন্ত নিয়ে আসতে প্রায় ৬৫ টাকার মতো খরচ হয়। পরে ৭০ টাকা দরে আমরা ঢাকায় পাঠাই। তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা ৭০ টাকা থেকে ৭৫ টাকা দরে গ্রাম থেকে ডাব কিনে ১৫০ টাকায়ও বিক্রি করেন। যা মোটেও ঠিক না।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বরগুনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বিপুল বিশ্বাস বলেন, আমরা কয়েক দফায় অভিযান চালিয়েছি। ব্যবসায়ীদের নির্দেশনা দেওয়া আছে যেখান থেকে ডাব ক্রয় করবে সেখান থেকে যেন ক্রয় রশিদ সংগ্রহ করে। যাতে আমরা বুঝতে পারি সঠিক দামে তারা বিক্রি করছেন কি না। খবর পেয়েছি বাজারে ডাবের দাম বেড়েছে। দাম নিয়ন্ত্রণে আগেও অভিযান চালিয়েছি, আবারও আমরা পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে যাব এবং কী কারণে ডাবের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বিষয়টি দেখব।