মধ্যপ্রাচ্য থেকে দেশে ফিরে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন প্রবাসীরা। করোনার কারণে আটকে যাওয়া এসব প্রবাসী না পারছেন ফিরে যেতে না পারছেন দেশে থাকতে। কেউ ৩ মাস কেউ বা ৬ মাসের ছুটিতে আসা এসব প্রবাসী টাকা-পয়সা সব শেষ হয়ে যাওয়ায় যেমন চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে আছেন তেমনি অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা আর ফিরতে পারছেন না।
তার উপর যুক্ত হয়েছে করোনার নেগেটিভ সনদ সংগ্রহ করা। এখনো পর্যন্ত চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে র্যাপিড পিসিআর ল্যাব না বসায় চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে দেশের রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের। চট্টগ্রাম বিমান অফিসে গিয়েও পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে তাদের।
করোনায় বেশ কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর গত ৩ অক্টোবর থেকে ঢাকা থেকে আবুধাবি ও দুবাই ফ্লাইট চালু করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। ঢাকা-আবুধাবি রুটে সপ্তাহে ৪টি এবং ঢাকা-দুবাই রুটে সপ্তাহে ৫টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে দেশের রাষ্ট্রীয় এই বিমান সংস্থা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পিসিআর টেস্ট ল্যাব না থাকায় ঢাকা দিয়েই মধ্যপ্রাচ্যে যেতে হচ্ছে প্রবাসীদের। এ ক্ষেত্রে টিকিট রি-কনফার্ম করার জন্য বিমান অফিসে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে টোকেন নেওয়ার জন্য। আবার টোকেন পেলেও কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করার সময় পাচ্ছেন ১০ দিন পর। উদাহরণস্বরূপ ১০ অক্টোবর টোকেন প্রাপ্তরা কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করারা সুযোগ পাবেন আগামী ১৯ অক্টোবর।
চট্টগ্রাম নগরের ষোলশহর ২ নম্বর গেইটস্থ বিমান অফিসের সামনে রোববার (১০ অক্টোবর) দুপুরে প্রতিদিনের মতো প্রবাসীদের জটলা বেঁধে থাকতে দেখা যায়। কয়েজন প্রবাসী জানান, বিমান অফিসে এসেই নানা হয়রানির কথা। রাউজান উপজেলা থেকে এসেছেন দুবাই প্রবাসী মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। ৬ মাসের ছুটি নিয়ে দুবাই থেকে দেশে এসেই আটকে যান করোনার ফাঁদে। তিনি বলেন, সকালে বিমান অফিসে এসেছি দুবাই যাওয়ার টিকিট রি-কনফার্ম করার জন্য। কিন্তু আমাদের টোকেন দিচ্ছে আগামী ১৯ তারিখের। এ টোকেন দিয়ে বলছেন ১৯ তারিখ দেখা করতে হবে।
এদিকে ১৯ তারিখের আগেই আমাকে চলে যেতে হবে দুবাইয়ে। আমার ভিসার মেয়ার শেষ হয়ে যাওয়ার আর মাত্র কয়েকদিন সময় আছে। আমাকে বিমান অফিসে দেখা করতেই হবে। তাই আমি বসে আছি।
হাটহাজারী উপজেলা থেকে সকালে এসেছেন আরেক দুবাই প্রবাসী আনোয়ার হোসেন। তাকে দেখা যায় বিমান অফিসের বাইরে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। তিনি বলেন, সকাল থেকে বসে আছি। কি করবো কিছুই বলতে পারছি না। দুবাই তো যেতে হবেই। কিন্তু আমাদের দেশের মতো হয়রানি আর কোথাও দেখি না। বিমান অফিসে থেকেই আমাদেরকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিতে চাইছে। অথচ বিদেশে আমাদেরকে যতটুকু মর্যাদা দেয় তার সিকি পরিমাণও যদি এখানে দিত তাহলে এত সমস্যা হতো না।
বাঁশখালীর আমিনুল ইসলাম বলেন, আমাদেরকে বিমান অফিসে বাইরেই দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। অথচ আমাদের সেবা দেওয়ার কথা অতিথির মতো। অনেকেই অনৈতিক ভাবে সুবিধা নিয়ে কাজ আগে করে দিচ্ছেন। টাকার বিনিময়ে টিকিট আগে-পরে করে দিচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ আন্দোলনের পর ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বসেছে র্যাপিড পিসিআর ল্যাব। বিমানবন্দরে ফ্লাইট ছাড়ার ৬ ঘণ্টা আগে র্যাপিড পিসিআর পদ্ধতিতে করোনা পরীক্ষা করে নেগেটিভ রিপোর্টপ্রাপ্ত যাত্রীরা আরব আমিরাতে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে তাদের আরব আমিরাতে প্রবেশ করার পর আবার ২য় দফা করোনা টেস্ট করা হবে।
বিমান অফিসের চট্টগ্রাম কাযালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ফ্লাইট চালু হওয়ার পর হুমড়ি খেয়ে পড়েছে সব প্রবাসীরা। ফলে আমাদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমরা প্রতিদিন তিনশো প্রবাসীকে তাদের সমস্যা সমাধান করে দিতে সেবা দিচ্ছি। অতিরিক্ত প্রবাসীদের পরবর্তী সেবার জন্য সময় দিয়ে টোকেন দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উপ-মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার বলেন, ‘চট্টগ্রাম শাহ আমানতন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে আবুধাবি-দুবাইতে বা মধ্যপ্রাচ্যে যাদের সরাসরি ফ্লাইট শিডিউল করা ছিল তাদের ঢাকা হয়ে যেতে হচ্ছে। ফলে একটু বাড়তি কাজের চাপ পড়েছে। আটকে থাকা প্রবাসীরা চলে গেলেই এ চাপ আর থাকবে না।’