নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে চাঁদপুরে ক্যাবের স্মারকলিপি প্রদান

মোহাম্মদ বিপ্লব সরকার: দেশে আলু, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চাঁদপুর জেলা শাখা।

বুধবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিনের মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান করেন ক্যাব নেতৃবৃন্দ।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, সাম্প্রতিক সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে। বিশেষত আলু, পেঁয়াজ এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ জনগণের নাভিশ্বাস অবস্থা। বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে যে, বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু মানভেদে এখনো ৭৫-৮০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১১৫-১৩০ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬৫-১৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নভেম্বর মাসে এমন চড়া দামে আলু বিক্রি হতে দেখা যায়নি। মূলত সিন্ডিকেটের কারণেই এবার আলুর দামের এমন অবস্থা। বিপুল পরিমাণ আলু হিমাগারে মজুদ থাকায় ও আমদানি জটিলতার কারণে এবার আলুর দাম ভোগাচ্ছে ক্রেতাদের। অবশ্য দাম নিয়ন্ত্রণে বা আলুর সরবরাহ স্বাভাবিক করতে নেই যথাযথ তদারকি। আলুর মতো নিয়ন্ত্রণে আসেনি পেঁয়াজের দাম। দীর্ঘদিন থেকে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি থাকা পেঁয়াজের দামও এখনও কেজি প্রতি ৭০-৮০ টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মজুদকারীরা কোনো কারণ ছাড়াই আলুর দাম বৃদ্ধি করেছেন। চলতি বছর আলু উত্তোলন মৌসুমের শুরুতে কৃষকের হাত থেকে পাইকারি দামে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ২৫-২৮ টাকা। আর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হতো ৩০-৩৫ টাকা। সেই আলুর দাম বাড়তে বাড়তে এখন প্রতি কেজি ৮০ টাকায় পৌঁছেছে। কৃষক পর্যায় থেকে নামমাত্র মূল্যে আলু কিনে মজুদ করে অতিরিক্ত মুনাফা লুটছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘদিন থেকে এসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় এসব ঘটনা বার বার ঘটছে। এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্য সরকারি সংস্থাগুলোকে আরও বেশি সজাগ ও সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে উদ্যোগী হতে হবে।

জেলার হিমাগারগুলো ও হাতে গোনা বড় ব্যবসায়ীদের হাতেই এখনো আলু মজুদ রয়েছে। আর এই সিন্ডিকেটই আলুর দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। এতে পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও চড়া দামেই ভোক্তাদের আলু কিনতে হচ্ছে।

খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, হিমাগার পর্যায়ে আলুর দাম এখনো বেশি। এ কারণে খুচরা বাজারেও পণ্যটির দাম কমেনি। হিমাগার পর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর তদারকি না থাকায় আলুর দাম কমানো সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। এতে পণ্যটির দাম কমেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০-১৫ টাকা কমেছে। এছাড়া শীতের সবজির সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় দামও পড়তির দিকে।

এছাড়াও, ভোক্তা স্বার্থে আট দফা দাবি জানিয়েছে ক্যাব। দাবিগুলো হলো- অসাধু, দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, নিত্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, বাজার অভিযান বৃদ্ধি করতে হবে, টিসিবির ট্রাকসেল বাড়াতে হবে, খোলা বাজারে ভোজ্যতেল বিক্রেতাদের কঠোর ভাবে আইনের আওতায় আনতে হবে, ভোক্তা স্বার্থ দেখার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে আলাদা বিভাগ বা কনজুমারস মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে, সরকার এক কোটি পরিবারকে কার্ডের মাধ্যমে নিত্যপণ্য দিচ্ছে- এর সংখ্যা দেড় কোটি করতে হবে, আইনে নিষিদ্ধ থাকা বাজারে খোলাভোজ্য তেল (ড্রামে) বিক্রেতাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা ক্যাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ বিপ্লব সরকার, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. কাজী হাসেম, জেলা ক্যাবের সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা সানাউল্লাহ খান, সদস্য আবুল বাশার মজুমদার প্রমুখ।