জ্বালানি সংকট উত্তরণে গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: চট্টগ্রামে জ্বালানি সংকট উত্তরণে গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর একটি রেস্টেুরেন্ট বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইএসডিই বাংলাদেশ, ক্লিন ও বাংলাদেশ বৈদেশিক দেনা কর্মজোট আয়োজিত বৈঠকে অংশগ্রহণ করে কনজুমারস রাইটস মিডিয়া এলায়েন্সের সদস্যরা।

বৈঠকে বিদেশ নির্ভর জ্বীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর এলএনজি ভিত্তিক জ্বালানি পরিকল্পনা বাদ দিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নির্ভর মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, অবিলম্বে কয়লাসহ জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করা, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী জলবায়ু-বিপদাপন্নদের জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশকে সহায়তা করা, ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।

জ্বালানি অধিকার সপ্তাহ ২০২৩ উপলক্ষে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেন, পেট্রোল, ডিজেল, কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাসসহ জীবাশ্ম জ্বালানিতেই কার্বন বিদ্যমান এবং তা পুড়িয়ে শক্তি উৎপাদন করলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হবেই। এই কার্বন-ডাই-অক্সাইডই পৃথিবীর গড় উষ্ণতা বাড়িয়ে দিয়েছে, পাশাপাশি বায়ুমন্ডলে অবস্থিত ওজন স্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এই পরিস্থিতি চলমান থাকলে যতক্ষণ না নিঃসরণ বন্ধ হয়, ততক্ষণ পৃথিবীর তাপমাত্রা ৩, ৪ বা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে। এটি আমাদের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।

কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এবং সৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে দুই মেরুতে থাকা বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি করছে। ফলে কার্বনের এই নিঃসরণ যদি কমিয়ে আনা না যায়, তাহলে ২০৫০ সালের মধ্যে বছরে একবার করে ৩০ কোটি মানুষ বসবাসের বিশাল এলাকা সমুদ্রের পানিতে তলিয়ে যাবে। তাই দেশের অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত দিক বিবেচনায় এলএনজি টার্মিনাল ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে এবং মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা অনুসারে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে অর্থায়ন, নিজস্ব স্থায়ীত্ব, জ্বালানি স্বাধীনতা এবং জ্বালানি সুরক্ষিত করা এবং সবুজ জ্বালানি রপ্তানিকারক দেশে উপনীত হওয়া, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ ও সহযোগিতার মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ, ২০৫০ সালের মধ্যে শতভাগ পর্যন্ত নবায়নযোগ্য শক্তিতে পৌঁছানোর দাবি জানানো হয়।

বাংলাদেশ এখন এক সংকটাপন্ন অবস্থানের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বছরে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার লাগছে। ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর শুধু জ্বালানি আমদানিতে ২০ থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। এর মধ্যে ২৫০ কোটি ঘনফুট এলএনজি আমদানিতে লাগবে বছরে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার। বছরে ২ দশমিক ৫ কোটি টন কয়লা আনতে খরচ হবে পাঁচ বিলিয়ন ডলার। বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল এবং নিউক্লিয়ার জ্বালানি আমদানিতে লাগবে ৯ বিলিয়ন ডলার। এর বাইরে বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ ও দেশে উত্তোলিত গ্যাস কিনতে বছরে চার থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে। জুলাই পর্যন্ত পেট্রোবাংলার কাছে শেভরনের পাওনা ২৮ কোটি ডলার। এলএনজি আমদানি খাতে বকেয়া প্রায় ১০ কোটি ডলার। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সরকারের কাছে প্রায় ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার পাবে। বিপিসির কাছে জ্বালানি তেল সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর পাওনা ১০ দশমিক ৬ কোটি ডলার।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় বাংলাদেশকে আর ডলার সংকটের দিকে ঠেলে না দেবার দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২০৪১ সালের মধ্যে ১৭০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। যেখানে ২০১৩ সালে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিলো ১৩৯ কোটি ডলার, ২০২২ সালে সেটা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১১৫ কোটি ডলারে। দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৮২ শতাংশই গ্যাস, কয়লা ও ডিজেল ভিত্তিক এবং এর অধিকাংশই আমদানি নির্ভর। পিডিবিকে ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদ্যুৎকেন্দ্র ভাড়া দিতে হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি। গত ১৫ বছরে ১৩ বার বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। এর মধ্যে এ বছরের প্রথম তিন মাসে বাড়ানো হয় তিন বার। অন্যদিকে বসে বসে কেন্দ্র ভাড়া পাচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রতিদিন জাতীয় গ্রিডে আমদানি করা ৭৪৬ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। স্পট মার্কেটে দাম বাড়ায় সেটির আমদানি সীমিত করেছে সরকার। আশংকার বিষয় হলো এ বছরই এলএনজি আমদানি করতে সরকারকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। যদিও পুরোপুরি এলএনজি নির্ভর বেসরকারি খাতের চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শেষের দিকে রয়েছে, সে সব কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পেট্রোবাংলা। সেই গ্যাস কোথা থেকে আসবে সেটা পরিষ্কার নয়।

আইএসডিই বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ও ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে ও ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরীর সঞ্চালনায় সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এম নাসিরুল হক, সাধারণ সম্পাদক এম শামসুল ইসলাম, কনজুমারস রাইটস মিডিয়া এলায়েন্সের সভাপতি ও দেশটিভির ব্যুরো প্রধান আলমগীর সবুজ, সদস্য সচিব ভোরের কাগজের প্রীতম দাস, দৈনিক পূর্বদেশের এম এ হোসেন, বাংলানিউজ২৪ডটকমের আল রহমান, ডেইলী স্টারের এফ এম মিজানুর রহমান, টিভিএসের ওমর ফারুক, সুপ্রভাত বাংলাদেশের শুভ্রজিৎ বড়ুয়া, আজকের পত্রিকার জমির উদ্দীন, বাংলাদেশ প্রতিদিনের রেজা মুজাম্মেল, সিভয়েস২৪ এর শারমিন রিমা প্রমুখ।