ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: চট্টগ্রামে পাইকারি বাজারে দাম কমলেও খুচরায় চড়া ডিমের বাজার। ফলে পাইকারিতে দাম কমার সুফল পাচ্ছেন না সাধারণ ক্রেতারা।
ডিমের সবচেয়ে বড় আড়ত নগরের পাহাড়তলীতে। এই বাজারে দিনে গড়ে ২০ থেকে ২৫টি ট্রাকে করে ডিম আনা হয়। প্রতিটি ট্রাকে ১ লাখ ৪৪ হাজারটি ডিম থাকে। টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, পাবনা, রাজশাহী অঞ্চল থেকে এসব ডিম আনা হয়। পাহাড়তলীর বিভিন্ন আড়তে ডিমের সরবরাহ বেশ ভালো দেখা গেছে।
কয়েক মাস ধরে প্রতিটি লাল ডিম ১০ টাকা ৫০ পয়সা করে পাইকারিতে বিক্রি হয়েছে। তবে বর্তমানে ১ টাকা ২০ পয়সা কমে প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৯ টাকা ৩০ পয়সায়। কিন্তু পাইকারিতে দাম কমলেও এর সুফল মিলছে না খুচরা বাজারে। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১ টাকায়।
চট্টগ্রাম ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল শুক্কুর বলেন, ‘রোজার মাসে ডিমের চাহিদা তুলনামূলক কম থাকে। ফলে আমাদের পাইকারি বাজারে পণ্যটির দাম কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে আমরা ১০০ লাল ডিম ৯৩০ টাকা ও সাদা ডিম ৮৫০ টাকায় বিক্রি করছি। সামনে আরও কমার সম্ভাবনা আছে। তাই খুচরা বাজারেও ডিমের দাম কমবে।’
নগরের হালিশহরের ঈদগা এলাকায় আল মদিনা স্টোরের মালিক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘পাইকারি বাজার থেকে ডিম কিনে আনতে খরচ বেশি পড়ছে। তার ওপর ডিম আনতে গিয়ে অনেক সময় ডিম ভেঙে যায়, নষ্ট হয়। সে জন্য আমাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হয়, না হলে লোকসান গুনতে হয়। আমরা তো লোকসান দিয়ে ব্যবসা করতে পারি না।’
এদিকে গত ২০ ফেব্রুয়ারি ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। ১ মার্চ থেকে নতুন দর কার্যকর হয়। বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাঁচ লিটার বোতলজাত তেল এবং খোলা তেল লিটারপ্রতি সরকার নির্ধারিত দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে কারসাজি চলছে এক লিটার বোতলজাত তেলের দরে। সরকার নির্ধারিত দর অনুযায়ী, খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার বোতলজাত ভোজ্যতেল ১৬৩ টাকা, পাঁচ লিটার বোতলজাত ভোজ্যতেল ৮০০ টাকা ও খোলা তেল লিটারপ্রতি ১৪৯ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। তবে ১৬৩ টাকার পরিবর্তে বর্তমানে এক লিটার বোতলজাত ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়।
নগরের কর্ণফুলী বাজারে আল নুর ট্রেডার্সের মালিক মোহাম্মদ জয়নাল বলেন, ‘কোম্পানিগুলো যে দর নির্ধারণ করে দিচ্ছে আমরা সে দরে ভোজ্যতেল বিক্রি করছি। আমাদের কারসাজি করার সুযোগ নেই।’
অপরদিকে, চট্টগ্রামের বৃহত্তর ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে সরবরাহ বাড়ায় কমতে শুরু করেছে দেশি পেঁয়াজের দাম। তবে নতুন করে ক্রেতাদের ভোগাচ্ছে রসুনের বাজার দর।
খাতুনগঞ্জে দুই দিন আগেও প্রতি কেজি মেহেরপুরী পেঁয়াজ ৯৫ টাকা ও হালি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৯১ টাকায়। বর্তমানে এসব পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে চোরাই পথে আসা ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কমেনি। আগের মতো ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে নতুন করে আর বাড়েনি আদার দাম। বর্তমানে প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। তবে এক দিনের ব্যবধানে রসুনের দাম বেড়েছে কেজিতে ৬ টাকা। বর্তমানে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের খাতুনগঞ্জে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বেশ ভালো। আমরা চেয়েছিলাম ভারত থেকে পেঁয়াজ আসুক। কিন্তু এখন আর ভারত থেকে পেঁয়াজ আনা লাগবে না। আমাদের দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় দামও আগের তুলনায় অনেক কমেছে। আগামী দুই মাস দেশি পেঁয়াজ দিয়ে চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। তবে রসুনের আমদানি কমায় পাইকারিতে সরবরাহও কমে গেছে। তাই রসুনের দাম বেড়েছে।’
এদিকে, খাতুনগঞ্জে দফায় দফায় বাড়ছে চিনির দাম। গত বছর এ সময়ে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) চিনি বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ৪০০ টাকায়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পাইকারিতে প্রতি মণ চিনি বিক্রি হয়েছিল ৪ হাজার ৯০০ টাকায়। গত ১০ মার্চ পণ্যটির দাম বেড়ে হয়েছিল ৪ হাজার ৯৩৫ টাকা। বর্তমানে প্রতি মণ চিনি বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ২০ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের চিনির আড়তদার শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘টেরিবাজার দিয়ে এখন পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করতে পারছে না। বিভিন্ন জায়গা ঘুরে আসায় ট্রাকচালকরা বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন। তাই দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে চিনির সরবরাহ ভালো। চিনির দাম বাড়ার আর সম্ভাবনা নেই।’
কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘রোজার আগের দিন ইফতারে প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম হুট করে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এক পিস লেবু ২০ টাকা, ভাবা যায় না। লাল শুকনা মরিচ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়। গত বছর তা অর্ধেক দামে বিক্রি হয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তারা সারা বছরের লাভ এ মাসে করতে চান। পর্যাপ্ত বাজার মরিটরিংয়ের অভাব রয়েছে। ব্যবসায়ীরা যে যার মতো ব্যবসা করছেন। তাই বর্তমানে ভোগ্যপণ্যের বাজার দর লাগামছাড়া।