ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত কর্তৃক দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে অভিযান পরিচালনা করে অমর মজুমদার নামক ব্যবসায়ী কর্তৃক ১৩০০ টাকায় এলাচ আমদানির পর ৩৯০০ টাকায় বিক্রির ঘটনা উদঘাটনের পর কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্তের বিষয়ে নেতিবাচক প্রচারণা করা হয়েছে। এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে এ ধরনের নেতিবাচক প্রচারণা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী সংগঠন কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রামের নেতৃবৃন্দ।
এ ধরনের নেতিবাচক প্রচারণা বিষয়টি নিত্যপণ্য ও ভোগ্যপণ্যের বাজার তদারকিতে অতিমুনাফা, মজুতদারি ও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।
মঙ্গলবার চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্তের বিষয়ে নেতিবাচক প্রচারণায় ক্ষোভ প্রকাশ করে গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান প্রমুখ।
বিবৃতিতে ক্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার খাত ছিলো নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখা। পরবর্তীতে মন্ত্রিসভা গঠন এবং সরকারের বিভিন্ন সভা, সেমিনার এমনকি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক সম্মেলন, র্যাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বার বার নিত্যপণ্যের বাজার সহনীয় রাখতে সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা প্রদান করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের কর্তা ব্যক্তিদের নানা নির্দেশনা প্রদান করলেও মাঠ পর্যায়ে তার প্রতিফলন সেভাবে পরিলক্ষিত হয়নি। যার কারণে রমজানের আগের দিন পাঁচ টাকার লেবু ২০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। খাতুনগঞ্জে ১৩০০ টাকায় আমদানিকৃত এলাচ বাজারে ৩৯০০ টাকায় বিক্রির মতো হাজারো ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। আমদানিকারক অমর মজুমদারের মতো হাজার হাজার অসাধু ব্যবসায়ী লক্ষ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। পুরো দেশজুড়ে অতিমুনাফার প্রতিযোগিতার মহোৎসব চলছে। খাতুনগঞ্জে বিনা রশিদে বিক্রি ও ডিও ব্যবসার পরিবর্তে এখন স্লিপ ব্যবসার মতো নিষিদ্ধ জুয়াড়ি ব্যবসারও প্রসার ঘটেছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্তের সাহসী ভূমিকার কারণে যেভাবে খাতুনগঞ্জে এলাচের ঘটনা, চিনির ক্রয়-বিক্রয় রশিদ না থাকা, রেয়াজউদ্দীন বাজারে কোল্ডস্টোরেজে ১০০ টন খেজুর মজুদ এবং পরবর্তীতে হাজারী গলিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ইনসুলিন বিক্রির ঘটনাসহ নানা চাঞ্চল্যকর ঘটনার উদযাটন সম্ভব হয়েছে। জেলা প্রশাসন যদি এ ধরনের অভিযান পরিচালনা না করতেন তাহলে এ ধরনের ঘটনা জাতির কাছে উপস্থাপন হতো না। তাই ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্তের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণার কারণে সিন্ডিকেট ও মজুদদাররা আরও বেপরোয়া হয়ে এ ধরনের অভিযানগুলো বন্ধ করার জন্য সরকার ও প্রশাসনকে নানা ভাবে চাপ প্রয়োগ করবে। যা ব্যবসায়ীদেরকে ‘সোমালিয়ার জলদস্যুর মতো মানুষকে জিম্মি করে জনগণের পকেট কাটার উৎসবকে’ বিপুল ভাবে উৎসাহিত করবে।
নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরেই পবিত্র মাহে রমজানে বাজার তদারকিতে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে, সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম চেম্বার, ক্যাব চট্টগ্রাম, দোকান মালিক সমিতি ও সরকারের ভোক্তা-অধিকার, বিএসটিআই, কৃষি বিপণন, মৎস্য অধিদপ্তর ও সাংবাদিক প্রতিনিধি নিয়ে সমন্বিত বাজার তদারকির মডেল চলমান থাকলেও ব্যবসায়ীদের চাপের কারণে এবারই এ ধরনের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। যার কারণে চট্টগ্রামের নিত্যপণ্য ও ভোগ্যপণ্যের বাজারে ব্যবসায়ীরা তাদের মতো করে জনগণকে জিম্মি করে অতিমুনাফা করে জনগণের পকেট কাটছে, প্রশাসন ও অন্যান্য বাজার তদারকি সংশ্লিষ্ট দপ্তর সেখানে কার্যত নিরব দর্শক। যার কারণে পবিত্র মাহে রমজান সাধারণ মানুষের জন্য নাজাতের মাস না হয়ে দুর্ভোগের মাসে পরিণত হয়েছে।