ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সফল গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে দেশের মানুষ যখন চরম সংকটে তখন অসাধু ও মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা যেন নানা অজুহাতে মানুষের কাছ থেকে অতিমুনাফা ও নিত্যপণ্য নিয়ে কারসাজি না করেন সে বিষয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম ও ক্যাব যুব গ্রুপের নেতৃবৃন্দ।
বৃহস্পতিবার নগরীর ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বৃহৎ বাজার বহদ্দারহাট সিটি করপোরেশন কাঁচা বাজারে দেশের সংকট ও ক্রান্তিকালীন সময়ে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে ও সিন্ডিকেট কারসাজি বন্ধের দাবিতে বাজারভিত্তিক প্রচারণা কর্মসূচিতে নেতৃবৃন্দ
এ আহবান জানান।
ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম মহনগরের সভাপতি আবু হানিফ নোমানের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম জাহাঙ্গীর, ক্যাব চান্দগাও থানা সভাপতি মোহাম্মদ জানে আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রহমান, ক্যাব যুব গ্রুপের রাসেল উদ্দীন, তানিয়া সুলতানা, এমদাদুল ইসলাম, মুহাম্মদ ওমর ফারুব, মোহাম্মদ করিমুল ইসলাম, নাফিসা নবী, ইসমত জাহান, আহনাফ সুলাইমান, আবু সাঈদ মোঃ নোমান, নাসির উদ্দীন, রিদওয়ানুল হক হ্দয় প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, নানা অজুহাতে ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্য ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে অস্থির করে রেখেছেন। আর সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজন অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নানা সুবিধা নিয়ে নিরব থেকেছেন এবং অনেক জায়গায় ব্যবসায়ীদের সুরে কথা বলেছেন। আবার পদে পদে ব্যবসায়ীরাও চাঁদাবাজি, আমদানিকারক ও করপোরেট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বেশি দামে ক্রয়সহ ব্যবসার খরচ বেশি বলে প্রচার করে মানুষের পকেট কেটেছেন। আবার অনেক জায়গায় ভোক্তা অধিদপ্তরের বাজার তদারকিতে বাঁধা প্রদান করেছেন।
ফলে নিত্যপণ্য ও ওষুধের বাজারে ভোক্তারা বিগত ১৫ বছর অনেকটাই জিম্মি ছিলেন। আর এ সুযোগে বিগত সরকারের কিছু সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীরা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ ও সিন্ডিকেট করে পুরো দেশের মানুষের পকেট কেটে দেশে বিদেশে পাঁচার করেছেন। আবার অনেকে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মিডিয়া ও অন্যান্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখল করে নিজেদের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছেন। যার কারণে ছাত্র-জনতার কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় ব্যবসায়ীরা বিগত সরকারকে অকুণ্ঠ সমর্থন পুনর্ব্যাক্ত করেছিলেন যাতে তাদের এই অবৈধ মুনাফায় যেন কোন ছেদ না পড়েন।
ক্যাব নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন, আইন প্রয়োগে শিথিলতা ও স্থানীয় প্রশাসনের আশ্রয়-প্রশ্রয়ের কারণে কোরবানীর ঈদের পর থেকে চাল, আলু, কাঁচা মরিচ, পেয়াঁজ, শাক-সবজিসহ নিত্যপণ্যের মূল্য সাধারণের ক্রয়-ক্ষমতাকে বৃদ্ধাঙ্গগুলি দেখিয়ে যাচ্ছেন। আর যারা এগুলো দেখার দায়িত্বে তারা দেখেনি বা কোন অভিযোগ পাই নাই এভাবে নানা অজুহাতে বিষয়টিকে পাশ কাটানোর কারণে ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে ভোক্তাদের পকেট কাটছে। আবার আইন প্রয়োগে চেহারা ও রাজনৈতিক পরিচয় দেখে ব্যবস্থা নেবার কারণে আইনের স্বাভাবিক গতি বার বার ব্যহত হয়েছে। যার কারণে প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় প্রশাসনকে বার বার বাজার তদারকি জোরদারে নির্দেশনা দিলেও সেগুলো কাগজে কলমেই থেকে গেছে।
তারা বলেন, গুটি কয়েক করপোরেট গ্রুপের কাছে পুরো নিত্যপণ্যের বাজার ছেড়ে দিয়েছিলো বিগত সরকার। ছাত্র-জনতার এ আন্দোলনকে সফল করতে হলে এ সমস্ত করপোরেট গ্রুপগুলো বিগত সরকারের আমলে কি পরিমাণ অর্থ লুটপাট করেছেন তার অনুসন্ধান ও তাদের অবৈধ সম্পদের পরিসংখ্যান জাতির কাছে উপস্থাপন করে ওই সম্পদ রাষ্ট্র মেরামতে বিনিয়োগ করা দরকার। মানুষরূপী এ সমস্ত মূল্য সন্ত্রাসীরা সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবে পৃষ্ঠপোষকতায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অংশীদারিত্ব বাড়িয়েছেন। তারা রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ মাদ্রাসায় অনুদান দিয়ে বাহবা কুড়িয়ে কুডিয়ে সাদা মনের মানুষ বলে প্রচার করেছেন। অথচ তাদের আয়ের উৎস কি কেউ জানার চেষ্টা করেনি। এ কারণে তারা একবার জনগণের পকেট কাটার জন্য খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন ব্যবসায় লগ্নি করেন। আবার দলীয় এমপি, নেতা হবার জন্য আরেকবার লগ্নি করেন। তাদেরকে আশ্রয় প্রশ্রয় না দিলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা এভাবে জাতির জন্য বিষফোড়া হয়ে হতে পারতো না।