ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: ক্রয়-বিক্রয় ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান কার্যক্রম হলেও নানা স্তরে নানা ধরনের চাঁদাবাজি, খরচের পাল্লা ভারী করে নিত্যপণ্যের বাজারে মূল্যবৃদ্ধির নানা খাত-উপখাত সৃষ্টি করে একটি মহল সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। নিত্যপণ্যের বাজারে কমিশন এজেন্টস প্রথার মতো যুগ যুগ ধরে চলমান চাঁদাবাজির মতো ঘটনার কারণে কোনো প্রকার বিনিয়োগ ছাড়াই একটি পক্ষ শুধুমাত্র তাদের আড়তে পণ্য রেখে বিক্রি করতে গিয়ে কেজি প্রতি ৬.২৫ টাকা মুনাফা আদায় করছেন, যার পুরো দায় নিতে হচ্ছে দেশের ভোক্তাদের। যে কারণে বগুড়ায় ২০ টাকার বেগুন ঢাকার বাজারে ১০০ টাকায় কিনতে বাধ্য হতে হচ্ছে ভোক্তারা।
কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সহ জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও কমিশন এজেন্টস প্রথা, ডিও/স্লিপ প্রথার মতো অবৈধ চর্চার কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে একটি চক্র বিপুল অংক হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে দাবি করছে। আর এই চক্রটি একটা সময় আমদানিকৃত পেয়াঁজ নিয়ে সক্রিয় হলেও তাদের পদাংক অনুসরণ করে বর্তমানে আলু, মসলা, সবজিসহ নিত্যপণ্যের অনেকগুলো জায়গায় বিনিয়োগ ছাড়াই বিপুল অংক হাতিয়ে নিচ্ছে।
এই কমিশন এজেন্টস ও স্লিপ প্রথা চলমান থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্যে কারসাজি বন্ধ, মধ্যস্বত্তভোগীদের অপতৎপরতা বন্ধ করা যাবে না। তাই অবিলম্বে দেশ সংস্কারের অংশ হিসেবে কমিশন এজেন্টস ও ডিও/স্লিপ প্রথার মতো বিষয়গুলো বন্ধ করে মধ্যস্বত্তভোগীদের অপতৎপরতা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন ক্যাব চট্টগ্রামের নেতৃবৃন্দ।
মঙ্গলবার চট্টগ্রাম নগরীর ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার রেয়াজউদ্দীন আড়তদার কল্যাণ সমিতির কার্যালয়ে কমিশন এজেন্টস প্রথা বন্ধে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় এসব দাবি জানানো হয়।
সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব রশিদ আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ভোক্তা অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজউল্যাহ।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক শিবলীর সঞ্চালনায় মুখ্য আলোচক ছিলেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন।
আলোচনায় অংশ নেন- সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন মাহরাফ, ভোক্তা অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলার সহকারী পরিচালক নাসরীন আক্তান, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস, যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম জাহাঙ্গীর, ক্যাব সদরঘাটের সভাপতি শাহীন চৌধুরী, ক্যাব চান্দগাও থানা সভাপতি মোহাম্মদ জানে আলম, ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি আবু হানিফ নোমান, ক্যাব যুব গ্রুপের রাসেল উদ্দীন, রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি সভাপতি ইলিয়াছ ভূঁইয়া, রেয়াজউদ্দীন বাজার আড়তদার কল্যাণ সমিতির উপদেষ্টা মোহাম্মদ তারেক, সহ-সভাপতি আলহাজ্ব কামাল উদ্দীন, আবু তৈয়ব, ক্যাব পাঁচলাইশের সভাপতি সায়মা হক, আবদুল আওয়াল, ক্যাব সদরঘাটের মোস্তফা কামাল, সদরঘাট থানা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি সুবল দাস প্রমুখ।
সভায় সমিতির নেতৃবৃন্দ ব্রিটিশ আমল থেকে চলমান এজেন্টস প্রথা বহাল রাখার নানা যুক্তি দেখালেও এই যুক্তির পক্ষে জোরালো কোনো প্রমাণ ও আইনগত ভিত্তি দেখাতে পারেন নি। তারা বেপারী ও কৃষকের কাছ থেকে ক্রয়কৃত পণ্যের রশিদ সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দেন। একইসাথে কৃষিপণ্যের জন্য অগ্রিম দাদন দিয়ে থাকেন বলে দাবি করেন।
তবে মূল্য নির্ধারণে তাদের হাত নেই জানিয়ে তারা বলেন, চাহিদা ও যোগানে ভিত্তিতে বাজারে দাম নির্ধারিত হয়।
কিন্তু ক্যাব ও ভোক্তা অধিদপ্তর কর্তৃক বাজার পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়- আড়তদাররা এক একটা সময় এক এক ধরনের ভূমিকা পালন করেন। দাম বাড়লেই তারা পণ্যের মালিক হয়ে যান, আবার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন বাজারে অভিযান চালালে তারা শুধুমাত্র গুদাম ভাড়ার অংশ পান বলে দাবি করেন। আর সব দোষ চাপান বেপারী ও কৃষকের ঘাড়ে।
তাই আড়তদার ও কমিশন এজেন্টস এই দ্বৈত ভূমিকার কারণে বাজার অস্থির হয়ে উঠে। বাজারে পণ্যের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা সরবরাহ কমিয়ে দেন। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে অবিলম্বে ব্যবসা-বাণিজ্যে সংস্কার করে মধ্যস্বত্তভোগীদের অপতৎপরতা বন্ধ করে অবিলম্বে কমিশন এজেন্টস ও স্লিপ প্রথার মতো ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। কোনো প্রকার ক্রয়-বিক্রয় রশিদ ছাড়া কোনো পণ্য বিক্রি করা যাবে না।
একইসঙ্গে কৃষকদের মাঝে দাদন বা অগ্রিম টাকা দিয়ে পণ্য কেনা বন্ধ করতে হবে। কৃষকদের মাঝে ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সহজ শর্তে ঋণের পর্যাপ্ত যোগান নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই এ ধরনের ফটকা ও জোয়াড়ির মতো কার্যক্রম বন্ধ করে ব্যবসা-বাণিজ্যে শৃংখলা ফেরানো সম্ভব হবে।
সভায় আরও বলা হয়, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যত্থান পরবর্তী সময়ে সবগুলো পণ্যের দাম কম ছিলো। ওই সময়টিতে স্থানীয় চাঁদাবাজি না থাকাকে বড় কারণ দেখানো হলেও কয়েকদিন যেতে না যেতেই আবার চাল, আলু, কাঁচা মরিচ, পেয়াঁজ, শাক-সবজিসহ সবগুলো নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে। তাই ছাত্র-জনতার এই গণঅভ্যত্থানকে সফল করতে বড় করপোরেট হাউসগুলোর একতরফা আধিপত্য বিস্তার বন্ধসহ বিগত সরকারের আমলে তারা কি পরিমাণ অর্থ লুপাট করেছেন তার অনুসন্ধান ও তাদের অবৈধ রাষ্ট্র মেরামতে বিনিয়োগ করার দাবি জানান।