ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরবর্তী সংঘর্ষ-সহিংস অস্থিরতায় টানা ১০ দিন ইন্টারনেট সংযোগ পুরোপুরি বন্ধ থাকার পর ধীরগতির ইন্টারনেট চালু হলেও অনলাইনকেন্দ্রিক সব ধরনের কার্যক্রমই বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। যার কারণে বিদ্যুত, গ্যাস ও ওয়াসার মতো জরুরি পরিসেবার বিল পরিশোধে গ্রাহকদেরকে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশে যেখানে মানুষের সব ধরনের কার্যক্রমই যেখানে ইন্টারনেট নির্ভর, সেখানে এভাবে ইন্টারনেট সংযোগকে ধীরগতির করে রাখার অর্থ দেশের সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকারকে খর্ব করার সামিল। এই দৃষ্টান্ত সাধারণ ছাত্র ও তরুণদের প্রতি আইন-শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর মতো অমানবিক ও অগণতান্ত্রিক আচরণের সামিল। তাই দীর্ঘ সময় ধরে ইন্টারনেট বন্ধ ও ধীরগতি করে রেখে মানুষের মৌলিক অধিকার গুরুতর লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধসহ অনতিবিলম্বে আর কোনো অজুহাত ও সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত স্বাভাবিক গতির নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট চালু করে দেশের সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, দৈনন্দিন কার্যক্রমসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল করার দাবি জানিয়েছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের জাতীয় প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও নগর কমিটির।
দীর্ঘ সময় ইন্টারনেট বন্ধ ও ধীরগতির ইন্টারনেট থাকায় জনভোগান্তি বন্ধের দাবিতে বুধবার গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ এসব দাবি জানান।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের প্রেসিডেন্ট জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা প্রেসিডেন্ট আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি চৌধুরী কে এন এম রিয়াদ, ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আবু হানিফ নোমান প্রমুখ।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, পুরো বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও উন্নয়নের কারণে বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাপক বিকাশ ঘটায় নিরবচ্ছিন্ন ও গতি সম্পন্ন ইন্টারনেট সংযোগ এখন মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকারে পরিণত হয়েছে। ইন্টারনেট সেবা বন্ধ ও ধীরগতির করে রেখে সরকার সেই অধিকার খর্ব করতে পারে না। সরকারের এই আচরণ পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য ও অগণতান্ত্রিক।
১০ দিন পর সরকার চাপের মুখে ইন্টারনেট চালু করলেও তা এখনো কোনো কাজেই আসছে না। অন্যদিকে সরকার ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ করার পর ইন্টারনেট সেবাদাতাদের বিভিন্ন সরঞ্জাম স্থাপন করা ডেটা সেন্টারে আগুন দেওয়ার বিষয়টি সামনে আনলেও পরে দেখা গেল, সেই ভবনে কোনো আগুনই লাগেনি। আর সেই দোহাই দিয়ে টানা ১০ দিন ইন্টারনেট বন্ধ ছিলো। তাছাড়া ওই ডেটা সেন্টার থেকে দেশজুড়ে মোট ব্যান্ডউইডথ চাহিদার ২০ শতাংশের মতো সরবরাহ করা হয়।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ ক্ষোভপ্রকাশ করে বলেন, দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দরাও প্রধানমন্ত্রীর সাথে মতবিনিময়ের সময় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য বিশেষ করে আমদানি-রূপ্তানি বাণিজ্যের ব্যাপক ক্ষতির বিষয়টি সামনে আনলেও পরিস্থিতির সে উন্নতি হয়নি। তারই ধারাবাহিতায় প্রযুক্তি খাতে অনলাইন ব্যবসা ও ফ্রিল্যান্সিং কার্যক্রমে বড় ধরনের ধস নেমেছে। যদিও পোশাক খাত ও রেমিট্যান্সের পাশাপাশি এক দশকে বাংলাদেশের তরুণরা ফ্রিল্যান্সিং করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছেন। ইন্টারনেট সেবার বেহাল দশা সেই খাতকে হাতে ধরে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। ডেটা সেন্টার পুড়ে গিয়ে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়েছে, এ কথায় বিদেশি ক্রেতারা বিশ্বাস ও আস্থা রাখতে পারছে না।
নেতৃবৃন্দ বলেন, এখন ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেট চালু করা হলেও তা এতটাই ধীরগতির তা দিয়ে সেই অর্থে কোনো কাজেই আসছে না। কোভিড পরিস্থিতিতে অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কেন্দ্র করে ঘরে ঘরে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরি হয়, সেই অনলাইনভিত্তিক উদ্যাক্তা ও ভোক্তা শ্রেণি পুরোটাই বিচ্ছিন্ন। একই সাথে মোবাইল অপারেরটরা ৫ জিবি ডাটা বোনাস দেবার নাম করে গ্রাহকদের সাথে উপহাস করছেন। যেখানে মোবাইল ডাটার গতি নাই, নেটওয়ার্ক কাজ করছে না, সেখানে ৫ জিবি বোনাস না দিয়ে গতি ও মানসম্পন্ন মোবাইল নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করাই জরুরি। আর বেসরকারি অপারেটরদের কাছে অভিযোগ জানানোর বিষয়টি একেবারেই অবান্তর।