ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান স্থানীয় জনগণের দ্বারা পরিচালিত হবে এবং স্থানীয় জনদুর্ভোগ ও সমস্যা সমাধানে মূখ্য ভুমিকা পালন করবে এ বিধিবিধান সংবিধানে লেখা থাকলেও যখন যে দল ক্ষমতায় এসেছে, তারা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করেছে। বিগত ০৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলে তারাও সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করে তাদের স্থানে সরকারি কর্মকর্তাদের খন্ডকালীন নিয়োগ প্রদান করেছেন।
ফলে বিগত সরকারগুলোর মতো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণে ছেড়ে দিয়ে তাদের ক্ষমতাকে আরও জোরদার করার মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের স্বশাসিত উদ্যোগকে বাধাগ্রস্থ করা হয়েছে বলে মনে করছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের জাতীয় প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও নগর কমিটির নেতৃবৃন্দ।
বুধবার গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিনা ভোটে এবং অনেক স্থানে লোক দেখানো প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো গঠিত হলেও ঢালাও ভাবে সরকারি কর্মকর্তাদেরকে খন্ডকালীন ও প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে এর প্রতিকার সম্ভব নয়। প্রশাসক নিয়োগ স্বল্পকালীন হলেও সরকারি কর্মকর্তাগণ এমনিতেই তাদের দায়িত্ব ভাড়ে জর্জরিত সেখানে স্থানীয় জনগণের দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে জনপ্রতিনিধিত্বশীল ও নির্দলীয় চরিত্র ফিরিয়ে আনতে ওই এলাকার স্থানীয় দল নিরপেক্ষ সমাজকর্মী, শিক্ষক, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের পক্ষ থেকে পূর্ণকালীন প্রশাসক নিয়োগ প্রদানের বিকল্প নেই।
ঢালাও ভাবে জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ না করে যেসব জনপ্রতিনিধি কার্যক্রম পরিচালায় সক্ষম তাদেরকে দিয়ে পরিচালনা করা এবং যারা পলাতক তাদের স্থলে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে প্রয়োজনীয় স্থানে কো-অপ্ট করার বিধান প্রবর্তন করে কার্যক্রম পরিচালনা করলে স্থানীয় সরকারের চরিত্র ও অবয়ব ঠিক থাকতো। এছাড়াও স্থানীয় জনগণ নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হতো না।
দলীয় ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচন হবার কারণে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাই ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হতেন। আবার ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আইন সংশোধন করে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার কারণে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর বহুদলীয় চরিত্র বিলুপ্ত হয়। আর ক্ষমতাসীন দলের নেতারাই স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন, সে কারণে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয় সংস্থায় পরিণত হয়।
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে বিভাগীয় শহরের সিটি করপোরেশনসমূহে বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তাদের বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভাগীয় শহরের সিটি করপোরেশনের জনসংখ্যা অনেক বেশি, এই বিপুল সংখ্যক মানুষের নাগরিক সেবা প্রদান খন্ডকালীন প্রশাসকের পক্ষে কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। অন্যদিকে সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভাগুলোকে যেভাবে আমলা নির্ভর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে, তাতে এগুলো আর জনপ্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠানের চরিত্রে থাকছে না। তাই স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবশ্যই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন ব্যবস্থাকে সংস্কার করে প্রকৃত জনপ্রতিনিধিত্বশীল ও নির্দলীয় চরিত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের প্রেসিডেন্ট জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা প্রেসিডেন্ট আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি চৌধুরী কে এন এম রিয়াদ, ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আবু হানিফ নোমান প্রমুখ।