ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: এ সপ্তাহে ডিম, পরের সপ্তাহে কাঁচা মরিচ, আরেক সপ্তাহে চিনি, সয়াবিন তেল এভাবে পুরো বছর জুড়ে কিছু অসাধু ও অতিমুনাফালোভী ব্যবসায়ী কৃত্রিম কারসাজি ও নিত্যনতুন অজুহাত দিয়ে নিত্যপণ্যের বাজারে ক্রেতা-ভোক্তাদেরকে জিম্মি করে পকেট কাটছে। আর ভোক্তা কিছু হায় হতাশ করে সরকারকে দোষারোপ করছেন এবং নিবোধ বালকের মতো নিরবে এই জিম্মি দশায় খাদ্য কেনা ও খাদ্য তালিকায় কাটছাড় করে কোনো ভাবে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছেন।
অথচ ব্যবসায়ীরা যেভাবে অনৈতিক ভাবে মানুষের পকেট কাটছে সেখানে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো ভোক্তারা যদি তাদের কণ্ঠস্বর জোরদার করে প্রতিবাদ মুখর হওয়া, দাম বাড়লে ওই পণ্য কেনা কমাতে পারতো, তাহলে বিগত কয়েক বছর আগের পেয়াঁজের কারসাজির মতো বিক্রি না করে টনকে টন যেভাবে পঁচে গিয়েছিলো তার মতো দশা হতো। তাই এখন প্রয়োজন নিত্যপণ্য নিয়ে কারসাজি করলে ভোক্তাদের সম্মিলিত প্রতিরোধ ও পণ্য বর্জনের মতো কঠিন পদক্ষেপ। আর এই কাজে নেতৃত্ব দিতে পারে দেশের তরুণ সমাজ।
কারণ আজকে যারা কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তারাই আগামী দিনগুলোতে পরিবার, সমাজ ও দেশের দায়িত্বভার নেবে।
শনিবার চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাটস্থ ভোজন বাড়ি রেস্টুরেন্টের কনফারেন্স হলে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম মহানগরের উদ্যোগে আয়োজিত নিরাপদ খাদ্য ও ভোক্তা-অধিকার আইন নিয়ে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় অতিথি ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক ফয়েজ উল্যাহ, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়েনের সাবেক সভাপতি এম নাসিরুল হক, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব চান্দগাঁও থানা সভাপতি মোহম্মদ জানে আলম, সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল ফারুকী, ক্যাব পাঁচলাইশের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম জাহাঙ্গীর।
ক্যাব যুব গ্রুপের চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি আবু হানিফ নোমানের সঞ্চালনায় কর্মশালায় নিরাপদ খাদ্য নিয়ে অধিবেশ পরিচালনা করেন জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফারহানুল ইসলাম ও জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান।
আলোচনায় অংশ নেন ক্যাব যুব গ্রুপের ইব্রাহিম ফারুক, মিনা আকতার, ইমদাদুল ইসলাম, ওমর করিম, মুহাম্মদ রায়হান, তানিয়া সুলতানা, খালেদ সাইফুল্লাহ, দিসরাতুল মুনতাহা, ফাতিন, বাবলু বড়ুয়া, ফয়েজ সাদ, ফাতিন মাহমুদ, মো. রায়হান, ইয়াসিন আরাফাত, সাফার আহমদ, আরাফাত হোসেন,মহারাজ চৌধুরী ও আবরুল করিম নিহাল প্রমুখ।
কর্মশালায় ক্যাব যুব গ্রুপের ৭২ জন সদস্য/সদস্য অংশ নেন।
কর্মঅধিবেশনে জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফারহানুল ইসলাম নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে ভোক্তা ও বিক্রেতাদের করণীয় নিয়ে ও জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান পণ্য ও সেবা কিনে প্রতারিত হলে করণীয় বিষয়ে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন। একইসঙ্গে ভোক্তা-অধিকার নিয়ে প্রতারিত হলে ১৬১২১ ও খাদ্যে ভেজাল হলে ১৬১৫৫ হট নাম্বারে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ জানান। এছাড়াও ওয়েটসাইট ও ইমেইলেও প্রতিকার প্রাপ্তিতে অভিযোগ জানানো এবং প্রয়োজনে ক্যাবের মাধ্যমে অভিযোগ জানানোর কথা বলা হয়।
বক্তারা আরও বলেন, বর্তমানে তরুণ সমাজ সোস্যাল মিডিয়া, গেম নিয়ে আসক্তির কারণে ভোক্তাদের প্রতিনিয়ত অবিচার, হয়রানি ও প্রতারণাসহ মুনাফাখোর ও খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণকারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিরোধ গড়ে না উঠায় মূল্য সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ড করোনা ও ডেঙ্গু থেকেও প্রকট হয়ে উঠেছে। একশ্রেণীর মানুষ টাকা, মুনাফা মুনাফা বলে পুরো সময় জিকির জিকির করে মানুষের জীবনকে চরম হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। তাই প্রতিটি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি পাড়া মহল্লায় তরুণদের ক্যাব যুব গ্রুপের আওতায় সংগঠিত হয়ে অসাধু ব্যবসায়ী ও মুনাফাখোর, সিন্ডিকেটদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
সব ধরনের খাদ্যপণ্যে অতি মুনাফা যেন জাতীয় মহামারী রোগে পরিণত হয়েছে। দাম বাড়ার তালিকায় নেই এমন পণ্য নেই। আর দেশের ১৮ কোটি মানুষ এ সমস্ত অন্যায়, অবিচারকে নিরবে মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীসহ মূল্য সন্ত্রাসীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। আবার সরকার তাদেরকে মন্ত্রী, এমপি ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা বানিয়ে পুরস্কৃত করছেন। তাই এখন সময় এসেছে এ সমস্ত অনিয়ম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার।