রাজধানীর অন্যতম পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজারে প্রতি রাতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক আসে। কিন্তু পরিবহন ধর্মঘটের কারণে গত দুই-তিন দিন স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ ট্রাক কম এসেছে। এতে বাজারে সবজির সরবরাহ কিছুটা কমেছে।
তবে এ বাজারের কাঁচামালের আড়তদার সমিতি ও ট্রাক মালিকরা জানান, সরবরাহ কম হলেও সবজির দামে খুব বেশি তারতম্য হয়নি। কারণ গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ক্রেতাও তুলনামূলক কম। তবে পরিবহন ভাড়া বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সব পণ্যের দাম আরেক দফা বাড়বে বলে মনে করেন তারা।
গতকাল রোববার কারওয়ান বাজারে সবজির আড়তগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেসব বড় আড়তে প্রতি রাতে দুই থেকে তিনটি সবজির গাড়ি আসত, সেখানে একটি বা দুটির বেশি আসেনি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুটি আড়তের সবজি নিয়ে এসেছে একটি গাড়ি।
ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানোর পর ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে শুক্রবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পণ্যবাহী যানবাহন বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন মালিক ও শ্রমিকরা। ধর্মঘটের প্রথম তিন দিন রাস্তায় পণ্যবাহী পরিবহনের সংখ্যা অনেক কম দেখা গেছে। গণপরিহন বন্ধ থাকায় সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েন মানুষ। গুরুত্বপূর্ণ কাজে যারা বের হয়েছেন, তাদের গুনতে হয়েছে কয়েকগুণ ভাড়া। এ কারণে হাট-বাজারেও ক্রেতার সংখ্যা ছিল অনেক কম।
কারওয়ান বাজারের ক্ষুদ্র কাঁচামাল আড়ত ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতির ওমর ফারুক বলেন, এখানে চারশর বেশি কাঁচামালের আড়ত রয়েছে। প্রত্যেক আড়তে অন্তত একটা গাড়ি আসে। কোনো কোনোটিতে দুটি গাড়িও আসে। সেই হিসাবে প্রতি রাতে ৪০০ থেকে ৫০০ ট্রাক ঢোকে এই বাজারে। এ ছাড়া ফলের ও মাছের আড়তেও আসে শ’খানেক গাড়ি। কিন্তু এখন আসছে প্রায় ৩০০ গাড়ি। অর্থাৎ আগের চেয়ে ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ কম গাড়ি আসছে।
কারওয়ান বাজারের নির্ধারিত আড়ত ছাড়াও মার্কেটের আশপাশে এবং রাস্তায় প্রতি রাতে শত শত অস্থায়ী আড়ত বসে বলে জানান মো. রিপন নামের এক আড়তদার। তিনি বলেন, সেসব হিসাবে ধরলে কমপক্ষে ৬০০ থেকে ৭০০ আড়ত রয়েছে। প্রতিটিতে অন্তত একটি ট্রাক আসে। সেই হিসাবে ৬০০ থেকে ৭০০ পণ্যবাহী ট্রাক এলেও গত দু’দিন ধরে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে।
পাইকারিতে সরবরাহ কম থাকায় বিক্রি কমেছে খুচরা পর্যায়েও। খুচরা সবজি বিক্রেতা ইদ্রিস আলী বলেন, দৈনিক ছয় থেকে সাত হাজার টাকার সবজি বিক্রি করতেন তিনি। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে ক্রেতা কম আসায় তার বেচা-বিক্রি তিন থেকে চার হাজার টাকায় নেমে এসেছে। এ কারণে দোকানে সবজি রাখা কমিয়েছেন তিনি। নিত্যপণ্যের বাজারে এখন পর্যন্ত জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি। কারওয়ান বাজারের ইয়াসিন জেনারেল স্টোরের মালিক সমকালকে বলেন, পরিবহন ধর্মঘটের আগে যেসব মালপত্র নিয়ে এসেছি, সেগুলোই বিক্রি করছি। নতুন করে কোনো পণ্য আনা হয়নি। গত দু’দিনে ট্রাক ভাড়া বাড়ছে। এখন যে কোনো পণ্য কিনতে গেলে খরচ বেশি পড়বে। ফলে খুচরা পর্যায়েও বেশি দামে বিক্রি করতে হবে।
তেজগাঁওয়ের ট্রাক স্টেশনের কয়েকজন ট্রাক মালিক জানান, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে রাস্তায় তাদের খরচ বাড়ছে। ফলে বাধ্য হয়ে তারা গাড়ি বন্ধ রেখেছেন। গোলাম রাব্বানী নামের একজন ট্রাক মালিক বলেন, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যেতে প্রতিটি ট্রাকে (ছোট, মাঝারি ও বড়) ৬০ থেকে ১৩০ লিটার ডিজেলের প্রয়োজন হয়। গড়ে ১০০ লিটার ধরা হলেও আগের চেয়ে ১৫০০ টাকা খরচ বাড়ছে। তারা বলেন, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এবং দেশের উত্তরাঞ্চলে আট হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত গাড়ি ভাড়া হয়। এখন এর সঙ্গে অতিরিক্ত ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা বেশি চাইলে গ্রাহকের ওপর চাপ বাড়বে। অন্যদিকে তাদের ট্রিপের সংখ্যাও কমে যাবে। এতদিন কম দূরত্বে অল্পস্বল্প মালপত্রের যেসব ট্রিপ পাওয়া যেত, এখন সেগুলো কমে যাবে।
ছোট-বড় মিলিয়ে সাতটি ট্রাক রয়েছে বাহার উদ্দিনের। তিনি বলেন, সব গাড়ি এখন বসা রয়েছে। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লে বাংলাদেশেও বাড়বে। কিন্তু এক লাফে ১৫ টাকা বাড়ানো একেবারেই অযৌক্তিক হয়েছে। হঠাৎ করে প্রতিটি গাড়িতে তেলের খরচ বেড়ে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা হয়ে গেছে। এই টাকা গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করা কঠিন হয়ে পড়বে।
এদিকে জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্য এবং যমুনা ও মুক্তারপুর সেতুর বাড়তি টোল প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির মালিক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি আবুল কাশেম। তিনি বলেন, দেশের সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলো পণ্য পরিবহন যানের ওপর যে টোল নেয়, তা বন্ধ করা না হলে ধর্মঘট চলবে।