ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: শরীয়তপুরে একটি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় দুই নবজাতকের মৃত্যু অপরটিতে ডিগ্রিবিহীন চিকিৎসক দিয়েই অপারেশন চালানোর অভিযোগে প্রতিষ্ঠান দুটিকে সাময়িক ভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় সিভিল সার্জন আবদুল হাদী মো. শাহ পরান এ তথ্য জানান।
সিভিল সার্জন অফিস ও ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অমান্য করে শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন ঢালী ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতাল এবং গরীবে নেওয়াজ হাসপাতাল অ্যান্ড ক্লিনিক চিকিৎসা প্রদান করে আসছিল। এর মধ্যে ঢালী ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গত সোমবার (০৪ মার্চ) নাগেরপাড়া ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান আজাদের স্ত্রী নাদিয়া বেগম প্রসব বেদনা নিয়ে ভর্তি হন। রাতে ডিপ্লোমাধারী চিকিৎসক দিয়েই অ্যানেসথেসিয়া (চেতনানাশক ওষুধ) প্রয়োগ করে নাদিয়ার অপারেশন করা হয়। অপারেশনের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া নবজাতক জন্মের পর থেকেই শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। নবজাতকের শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা করেন হাসপাতালটির নার্স ও ডিগ্রিবিহীন চিকিৎসক। চিকিৎসা করতে গিয়ে তারা ৩০ মিনিটের বেশি সময় ধরে নবজাতকের বুকে সিবিসি প্রয়োগ করতে থাকেন। অতিরিক্ত সিবিসি প্রয়োগের কারণে বাচ্চার বুক নীল হয়ে এলে তড়িঘড়ি করে নবজাতককে জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন তারা। কিন্তু জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথেই শিশুটির মৃত্যু হয়।
হাসপাতালটিতে এর আগের দিন রোববার (০৩ মার্চ) গোসাইরহাট ইউনিয়নের খাট্রা গ্রামের আল আমিন মাঝির স্ত্রী রেখা আক্তারের সিজারের পর সদ্য নবজাতক মারা যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। একই অভিযোগ উঠেছে গরীবে নেওয়াজ হাসপাতাল অ্যান্ড ক্লিনিকের বিরুদ্ধেও। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার হাসপাতাল দুটি সাময়িক ভাবে বন্ধ করেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এছাড়া গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটিকে আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ভুল অপারেশন ও চিকিৎসায় মারা যাওয়া নবজাতকের নানা মো. আবু তাহের বলেন, আমি তাদেরকে সিজার করতে নিষেধ করেছিলাম। কারণ, এর আগে আমার এক আত্মীয়ের নবজাতক ভুল চিকিৎসায় এই হাসপাতালে মারা গিয়েছিল। কিন্তু তারা আমার কথা শোনেনি। ডিগ্রিবিহীন চিকিৎসক দিয়ে অপারেশন করলে নবজাতক তো মারা যাবেই। টাকার জন্য ওরা এভাবে মানুষকে মেরে ফেলে। আমার নাতি মারা গেছে। আমি সঠিক বিচার চাই।
শিশুটির বাবা হাবিবুর রহমান আজাদ বলেন, আমার সন্তান সিজারের পরও ভালো ছিল। কান্নার শব্দ আমরা শুনেছি। তারা আমার সন্তানকে আমার কাছে না দিয়ে তার নরম বুকের মধ্যে অনবরত চাপ দিতে থাকে। আধা ঘণ্টা চেপে জখম করে বলে আমরা এখানে কিছু করতে পারব না। আপনারা ওকে আইসিইউতে নিয়ে যান। এরপর আমার সন্তানকে অন্য হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যায়। আমি বিচার চাই।
হাসপাতাল দুটি সাময়িক ভাবে বন্ধ করার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সিভিল সার্জন ডা. আবদুল হাদী মো. শাহ পরান বলেন, গোসাইরহাটে দুটি বেসরকারি হাসপাতাল সাময়িক ভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছি। এর মধ্যে ঢালী ডিজিটাল ডায়গনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে নিয়ম বহির্ভূত কর্মকাণ্ডে দুটি নবজাতক মারা গেছে। নবজাতকের মৃত্যু ও ডিগ্রিবিহীন চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা প্রদান করার বিষয়টি তদন্ত করার জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।