সংকটের অজুহাতে সবজির বাজারে অস্বস্তি

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: খুলনার ডুমুরিয়ার বাজারে সরবরাহ সংকটের অজুহাতে শাক-সবজিসহ নিত্যপণ্যের বাজারে দামের বড় উল্লম্ফন ঘটেছে। নিত্যপণ্যের এই বাড়তি দামের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। নিম্নআয়ের মানুষ শুধু নয়, মধ্যবিত্তরাও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

নানা ভাবে ব্যয় কাটছাঁট করেও সাধারণ মানুষ পেরে উঠছেন না। কারণ জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়লেও সেভাবে আয় বাড়েনি।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও এখনো বাজার অস্থির। যদিও গত দু-তিন দিনের ব্যবধানে ডিমসহ কয়েকটি পণ্যের দাম কিছুটা কমেছে। তবে সার্বিক ভাবে এর প্রভাব বাজারে পড়েনি।

ডুমুরিয়া খুচরা বাজারে এখনো বেশির ভাগ সবজি প্রতি কেজি ৭০/৮০ টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ঢেঁড়স ও পটলের মতো সবজিও ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে। চাল, পেঁয়াজ, ডিম, মুরগি, মাছ ও ভোজ্যতেল থেকে শুরু করে এমন কোনো নিত্যপণ্য নেই, যার দামে স্বস্তি আছে।

শুক্রবার পাইকারি ডুমুরিয়া বাজার ও খুচরা খর্নিয়া কাঁচাবাজার, আঠারো মাইল ও টিপনা নতুন রাস্তা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখনো বাজারগুলোতে চড়া দামেই বেশির ভাগ সবজি ও মুরগি বিক্রি হচ্ছে।

তবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিম, কাঁচা মরিচসহ কয়েকটি সবজির দাম কিছুটা কমে বিক্রি হতে দেখা গেছে। খুচরায় প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম কয়েক দিন আগে দাম বেড়ে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এখন কমে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চুকনগর বাজারে খুচরায় ডিম ডজন ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে বাজারে আমদানি করা ও দেশি উভয় ধরনের কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে।

সরবরাহ সংকটের অজুহাতে কয়েক দিন আগে খুলনা বাজারে কাঁচা মরিচের কেজি ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। তবে দাম কমে এখন খুচরায় ৩২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এ কয়টি পণ্যের দাম কমা ছাড়া বাকি সব সবজি এখনো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে। গোল বেগুন মানভেদে কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, লম্বা বেগুন ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, ঢেঁড়স, পটল মানভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, বরবটি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, চিচিঙ্গা-ধুন্দল ৮০ টাকা, আলু ৬০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা কেজি এবং প্রতি পিস লম্বা লাউ ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির দামে কেজিপ্রতি পার্থক্য দেখা গেছে ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত।

শুক্রবার ডুমুরিয়ায় বাজারে খুচরায় প্রতি কেজি করলা ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা, ঢেঁড়স ও পটল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, গোল বেগুন মানভেদে ১০০ থেকে ১২০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা, লম্বা লাউ প্রতি পিস ৬০ টাকা, টমেটো ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি বিক্রি হয়।

বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে সবজির চড়া দামের কারণ সরবরাহ ঘাটতি ও বার বার হাত বদল। উৎপাদন পর্যায়ের চেয়ে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে দাম কয়েক গুন বাড়ছে।

সবজি বিক্রেতা শেখ মোনজাত বলেন, বাজারে সবজির সরবরাহে সংকট আছে। এ কারণে দাম তেমন কমছে না। তবে কাঁচা মরিচ ও টমেটোর দাম অনেকটাই কমেছে। বাজারে সরবরাহ বাড়লে সবজির দাম কমতে থাকবে।

পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দামে বড় পার্থক্যের কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবহন ভাড়া প্রায় ২৫ শতাংশ পণ্য পঁচে যাওয়া এবং ইজারাদারদের বাড়তি টাকা দিতে গিয়ে খরচ বেড়ে যায়। এ কারণে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দামে বড় ব্যবধান তৈরি হয়।

খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখনো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে মুরগি। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ২১০ টাকা এবং সোনালি মুরগি কেজি ২৯০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকা, দেশি রসুন ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা এবং আমদানি করা রসুন ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারের মুরগি বিক্রেতা মোমিনুল ইসলাম বলেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় মুরগির সরবরাহ কিছুটা কম। যার কারণে দাম বাড়তি।

এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকার উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ঋণের সুদহার বাড়ানোসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। চলমান ডলার সংকটের মধ্যেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে জোর দেওয়া হয়েছে। পেঁয়াজ, আলু, ডিম, চিনি ও ভোজ্যতেল আমদানিতে শুল্ক কমানো হয়েছে। ভারত থেকে ডিম আমদানি শুরু হয়েছে। ডিম ও মুরগির দাম বেঁধে দেওয়া, চাঁদাবাজি রোধে নানা উদ্যোগ, টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি বাড়ানো এবং পণ্য উৎপাদন ও সরবররাহ নিশ্চিত করতে সহযোগিতাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তারপরও বাজারে স্বস্তি ফিরছে না।

বাজারের বিশ্লেষকরা বলছেন, সড়ক ও বাজারে চাঁদাবাজিসহ ব্যবসায়ীদের অসাধু সিন্ডিকেট আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সরকারবিরোধী এই চক্রের কারণে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমছে না। পুরানো অসাধু সিন্ডিকেট বাজারে আগের কৌশলে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। এতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে ভোক্তা সাধারণের।

বাজারে শীতের আগাম সবজি উঠতে শুরু করায় দাম কমতে শুরু করেছে। ১৫ দিন আগে লাগাতার বৃষ্টি ও বন্যার প্রভাবে সবজির দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়। তবে এখন বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলায় মাঠে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজি। বাজারেও উঠতে শুরু করেছে এই আগাম সবজি। এ জন্য দাম কমতে শুরু করেছে। পটল, বেগুন, কপিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজির দাম ১৫ দিনের ব্যবধানে বেশ কমেছে। পাইকারি বাজারে প্রতি মণ ২০০ থেকে ৫০০ টাকা কমেছে প্রতিটি সবজির দাম।

কৃষকরা বলছেন, বাজারে শীতের আগাম সবজি আসতে শুরু করায় দাম কমছে। বৃষ্টি বন্যার কারণে অনেক ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে হাটে সবজির আমদানি কম। আমদানি না থাকায় এবং কৃষকের ক্ষতি কিছুটা পোষাতে দামও বাড়তি। নতুন সবজি বাজারে এলে দাম কমবে।