কাজী হাফিজুর রহমান: ‘বাজার পরিস্থিতি ও নিরপাদ খাদ্য’ বিষয়ে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) নড়াইল জেলা শাখার উদ্যোগে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান।
নড়াইল জেলা ক্যাবের সভাপতি ম ম শফিউর রহমান শফিউল্লাহ’র সভাপতিত্বে সভায় আলোচক ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জুবায়ের হোসেন চৌধুরী ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শামীম হাসান।
সভা পরিচালনা করেন ও ধারণাপত্র তুলে ধরেন ক্যাব জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কাজী হাফিজুর রহমান। এ সময় ভোক্তার স্বার্থে ৮টি সুপারিশ ও ৫টি দাবি তুলে ধরা হয়।
এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার সঞ্জয় ঘোষ, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক লায়লা আফরোজ, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা আদ্দা আন সিনা, অতিরিক্ত পিপি ও সাংবাদিক তারিকুজ্জামান লিটু, সাংবাদিক আজিজুর রহমান, নারী সংগঠক ও উদ্যোক্তা কোহিনুর আক্তার, শিক্ষিকা সুলতানা বেগম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নড়াইলের আহ্বায়ক তমাল প্রমুখ।
প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান বলেন, বর্তমান সময়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকারমূলক। এ কারণে আজকের এই সভাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে জেলাব্যাপী বাজার তাদরকি চলমান থাকবে। প্রতিটি উপজেলার ইউএনওকে নির্দেশ দেওয়া হবে বাজার ইজারাদারদের নিয়ে বসার জন্য এবং সেখানে কঠোর ভাবে বলে দেওয়া প্রতিটি দোকানে যেন মূল্য তালিকা প্রদর্শন নিশ্চিত করা হয়।
তিনি বলেন, সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যোগান স্বাভাবিক রাখতে স্থানীয় পর্যায়ে উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়া তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ইউনিয়নে ইউনিয়নে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সচেতনতা কর্মসূচি জোরদার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যার যার জায়গা থেকে আমাদের প্রত্যেককেই ভূমিকা রাখতে হবে।
মতবিনিময়ে উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে দ্রব্যমূল্যের সমন্বয়হীনতা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন ও সুপারিশ উঠে আসে। যেমন নড়াইল শহরের ভিতর একই পণ্যের দাম একেক বাজারে একেক রকম কেন; বাজারগুলোতে যেসব পশু জবাই হয় সেসব সুস্থ সবল ও স্বাস্থ্যসম্মত কি না সে বিষয়ে নিয়মিত তদারকি আছে কি না; ভ্রাম্যমাণ আদালতে শুধু আর্থিক জরিমানার বাইরে কারাদণ্ড দেয়া যায় কি না; বাজার অস্থিতিশীল করে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্টকারী বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; টিসিবি’র ট্রাকসেল সরবরাহ নিশ্চিত করা ও টিসিবি কার্ডের বন্টন সুষ্ঠু ভাবে করা ইত্যাদি।
এছাড়াও, ক্যাবের পক্ষ থেকে ভোক্তাদের স্বার্থে বিভিন্ন সুপারিশ ও দাবি মতবিনিময়ে তুলে ধরা হয়। যেমন- অসাধু দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে; নিত্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে; বাজার অভিযান/মনিটরিং বৃদ্ধি করতে হবে; টিসিবির ট্রাক সেল বাড়াতে হবে; খোলা বাজারে ভোজ্যতেল বিক্রেতাদের কঠোর ভাবে আইনের আওতায় আনতে হবে; ভোক্তা স্বার্থ দেখার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে আলাদা বিভাগ বা কনজুমারস মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে; সরকার ১ কোটি পরিবারকে কার্ডের মাধ্যমে নিত্যপণ্য দিচ্ছে এর সংখ্যা দেড় কোটি করতে হবে; আইনে নিষিদ্ধ থাকা বাজারে খোলা ভোজ্যতেল (ড্রামে) বিক্রেতাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- নিরাপদ খাবার পেতে আইন কঠোর ভাবে প্রয়োগ করতে হবে; ভেজাল বা মানহীন খাদ্য সরবরাহ করে যাতে কেউ পার না পায়, শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; খাদ্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রতিটি মানুষের অধিকার; অধিকার নিশ্চিত হলে মানুষ নিরাপদ খাদ্য গ্রহণের সুযোগ পাবে; সুস্থ-সবল জনগোষ্ঠীর জন্য নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নেই।