ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: রাজশাহীতে হাটে-বাজারে পাইকারিতে প্রতি কেজি যেই ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকায়। সেই ঢেঁড়স ব্যবসায়ীরা ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি করছেন ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজিতে। একহাত বদলে প্রতি কেজি ঢেঁড়সের দাম বাড়ছে ১২ থেকে ১৫ টাকা। যার সবই পাচ্ছেন বিক্রেতারা। এমন অবস্থায় দাম না পেয়ে হতাশ চাষিরা।
চাষিদের অভিযোগ, চার হাজার টাকায় প্রতি কেজি ঢেঁড়সের বীজ কিনে জমিতে বপন করতে হয়েছে। এছাড়া কিটনাশক, সার, সেচসহ আরও বিভিন্ন খরচ হয় জমি থেকে ঢেঁড়স তোলা শুরু হওয়া পর্যন্ত। কিন্তু সেই অনুপাতে বাজারে দাম পাওয়া যাচ্ছে না।
সরেজমিনে বুধবার রাজশাহীর পবা উপজেলার খড়খড়ি সবজির হাটে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। এই হাটে প্রতিদিন ঢেঁড়স বিক্রি করেন, বুধপাড়া, পশ্চিম বধুপাড়া, মৌলভী বুধপাড়া, কুখুন্ডি, পবার পাড়ীলা, মেহেরচন্ডী, রামচন্দ্রপুর, মল্লিকপুরসহ আশপাশের গ্রামের অন্তত ৩০-৪০ জন চাষি।
চাষি ও কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক বিঘা জমিতে ঢেঁড়স চাষ করলে একদিন পর পর আহরণ করতে হয়। না হলে এই সবজিটা খাওয়ার উপযোগী থাকে না। এই সবজি চাষে কৃষকের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ রয়েছে কারণ প্রায় প্রতিদিন অল্প হলেও বিক্রি করে টাকা পাওয়া যায়। চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ঢেঁড়সের চাষ হয়েছে ১০০ হেক্টরের বেশি জমিতে। রাজশাহীতে কৃষি অফিসের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ২৫০ হেক্টর জমিতে চাষ।
ঢেঁড়স জমিতে দ্রুত বাড়ে। এই সবজিটি দিনের ব্যবধানে বাজারজাত করতে হয়। ফলে অন্য সব সবজির তুলনায় চাষিরা দ্রুত টাকা পায়। সেই আশায় প্রতি বছর রাজশাহীতে ঢেঁড়সের চাষ বাড়ে। তবে আবাদ বাড়লেও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির ফলে বাজারে বেড়েছে ঢেঁড়সের উৎপাদন খরচ।
পবার রামচন্দ্রপুরে এক বিঘা জমিতে ঢেঁড়সের চাষ করেছেন মো. এমাজউদ্দিন। তার দাবি, কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর ঢেঁড়সের চাষে তার খচর বেশি হয়েছে। সেই হিসেবে তার উৎপাদিত ঢেঁড়সের দামও বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু তা না হয়ে উল্টো তাকে বিক্রি করতে হচ্ছে প্রতি কেজি ৫ টাকা দরে।
তিনি বলেন, এবার ঢেঁড়সের বীজের কেজি ছিল ৪ হাজার ১০০ টাকা। আমি শান্তা জাতের একটি ঢেঁড়সের চাষ করেছি। জমি চাষ, সেচ, শ্রমিক খাটানো, কীটনাশক প্রয়োগ সব কিছুতেই টাকার কারবার। চাষের সময় মনে করেছিলাম ঢেঁড়স জমি থেকে তোলা শুরু হলে ঘর থেকে আর টাকা লাগবে না। কিন্তু সেটা তো হলো না। এক বিঘা জমিতে ঢেঁড়সের চাষ করতে গেলে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ। এই খরচ চলে ঢেঁড়স উত্তোলনের আগ পর্যন্ত। কিন্তু এবার হাটে ঢেঁড়সের দাম নেই। এ বছর যারা ঢেঁড়স চাষ করছেন তাদের খরচের টাকাই উঠবে না।
অপর চাষি হাসান আলী বলেন, রমজান মাস থেকে ঢেঁড়সের দাম নেই। ১২ রমজানের দিকে ঢেঁড়স পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৫ কেজি (পাল্লা) ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। কিন্তু সেই ঢেঁড়সের বাজার এখন নেমেছে ২৫ টাকা পাল্লায়। অর্থাৎ ২০০ টাকা মণ দরে ঢেঁড়স কেনা-বেচা হচ্ছে। কিন্তু এই ঢেঁড়স আবার ভ্যান গাড়ি বা সবজি বিক্রেতার কাছে কিনতে গেলে প্রতি কেজির জন্য দিতে হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টাকা।
তিনি আরও বলেন, রোববার ঢেঁড়স হাটে নিয়ে বিক্রি করতে পারিনি। চার-পাঁচ টাকার ওপরে কেউ দাম বলছে না। রাগ করে ঢেঁড়স বিক্রি করিনি। নিয়ে গিয়ে বড় ভাইয়ের গরুকে দিয়েছি। তার একদিন পরে ঢেঁড়স তুলে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়েছি। তাদেরও গরু আছে। এছাড়া হাটে বিক্রি করতে নিয়ে গেলে খাজনা ও মাপার জন্য আলাদা টাকা দিতে হয়।
সজিবুর রহমান নামের এক ঢেঁড়স বিক্রেতা বলেন, জমি থেকে ঢেঁড়স তুলতে যে নারী শ্রমিক লাগে তাদের পারিশ্রমিকও উঠছে না। তাদের প্রত্যেককে ৬০ থেকে ৭০ টাকা দিতে হয়। এক বিঘা জমির ঢেঁড়স তুলতে কমপক্ষে চারজন নারী শ্রমিক লাগে। বর্তমানে এক বিঘা জমিতে দেড় থেকে দুই মণ ঢেঁড়স হচ্ছে। এই ঢেঁড়স বিক্রি করে শ্রমিকের টাকাই উঠছে না।
খুচরা ঢেঁড়স ক্রেতা শামসুল ইসলাম বলেন, চাষি ও ভোক্তা সবাই ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি। চাষি হাজার হাজার টাকা খরচ করে ঢেঁড়স চাষ করছে। কিন্তু বিক্রি করতে গিয়ে টাকা পাচ্ছে না। আবার সেই ঢেঁড়স ব্যবসায়ীরা চাষিদের থেকে কিনে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করে কেজিতে কয়েকগুণ টাকা লুটে নিচ্ছে। আমরা এই হাটে না এলে বিষয়টা জানতে পারতাম না। চাষিদের ঢেঁড়স হাত বদলে ব্যবসায়ীরা কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি করছেন।
অপরদিকে, মহানগরীর সাহেব বাজারের মাস্টারপাড়ার চিত্র অনেকটাই কাছাকাছি। তবে তুলনামূলক পবার খড়খড়ি বাইপাসের চেয়ে কিছুটা হলেও বেশি দামে ঢেঁড়স বিক্রি করতে পারে চাষিরা। মাস্টারপাড়ায় ঢেঁড়স বিক্রেতা মানিক হোসেন বলেন, খড়খড়ি বাইপাসের তুলনায় অনেক ভালো।