ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: বগুড়ায় জেলার বিভিন্ন আলু ব্যবসায়ী, হিমাগার মালিক সমিতির সদস্য, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ অংশীজনের অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষ করতোয়ায় আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
এতে সভাপতিত্ব করেন জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুল ইসলাম।
ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মূলত চিনি ও ভোজ্য তেলের মূল্য নির্ধারণ করে। সাধারণত কৃষি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ হয় কৃষি বিপণন আইন অনুযায়ী। সরকার সে অনুযায়ী আলু-পেঁয়াজের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে।
তিনি ব্যবসায়ীদের সরকার নির্ধারিত মূল্যে ব্যবসা পরিচালনা করতে এবং মুনাফা করতে অনুরোধ জানান।
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘হিমাগার মালিকদের দায়িত্ব আছে। সে জায়গা থেকে ব্রোকার, ফড়িয়া ব্যবসায়ী এবং আলু সংরক্ষণকারীদের নৈতিকতার সঙ্গে ব্যবসা নিশ্চিত করতে হবে। কৃষকদের দোহাই দিয়ে বাজার অস্থিতিশীল করা যাবে না। ভারতের কলকাতায় খুচরা পর্যায়ে আজ ১৪ রুপি প্রতি কেজি আলু বিক্রয় হচ্ছে। কোনো অবস্থায়ই দেশে আলু ৫০ টাকা হতে পারে না। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে আলু ক্রয়-বিক্রয় নিশ্চিত করতে হবে এবং পাকা রশিদ নিশ্চিত করতে হবে। সরকার ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে চায়।
তিনি বলেন, কোনো কোল্ড স্টোরেজ থেকে সরকার নির্ধারিত ২৭ টাকা মূল্যে আলু বিক্রয় না করলে উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা হবে এবং বিক্রয়লব্ধ অর্থ সংশ্লিষ্ট কোল্ড স্টোরেজের মালিকের মাধ্যমে আলু যার নামে মজুদ ছিল তার নিকট পৌঁছে দেওয়া হবে।
বগুড়া হিমাগার মালিক সমিতির সভাপতি হোসনে আরা বলেন, কোল্ড স্টোরেজ থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যে আলু বিক্রয় নিশ্চিত করতে হবে। তবে খুচরা পর্যায়ে নির্ধারিত মূল্যে আলু বিক্রয় নিশ্চিতে তিনি প্রশাসনের সর্বাত্মক সহযোগিতা চান।
বগুড়া হিমাগার মালিক সমিতির সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, সমিতির সকল সদস্যরা কোল্ড স্টোরেজে মূল্যের ব্যানার লাগিয়ে দেবেন এবং সরকার নির্ধারিত মূল্যে আলু বিক্রয় নিশ্চিত করবেন।
পাইকারি আলু ব্যবসায়ী পরিমল প্রসাদ বলেন, আলু ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোনো রশিদ পান না। তিনি পাকা রশিদ প্রাপ্তিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান।
আলোচনায় সিনিয়র সাংবাদিক আক্তার হোসেন বলেন, ভোক্তা-অধিদপ্তরের জনবল বাড়াতে হবে যাতে বাজার তদারকি বাড়ানো সম্ভব হয়।
পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, আমরা সবাই মিলে একটি ভালো পরিবেশ তৈরি করতে চাই। মজুতদার আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে এবং ভোক্তা-অধিকার আইনে অসাধু ব্যবসায়ীদের কঠোর শাস্তির যে বিধান আছে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে আমরা বদ্ধপরিকর।
জেলা প্রশাসক বলেন, বগুড়া জেলায় এ বছর প্রায় ১২ লক্ষ ২৪ হাজার মে. টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। বগুড়া জেলা কৃষি পণ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কাজেই বগুড়া জেলা থেকে বেশি দামে আলু বিক্রয় করার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। প্রতিটি কোল্ড স্টোরেজে সরকার নির্ধারিত মূল্য উল্লেখ করে ব্যানার টাঙ্গাতে হবে এবং পাকা রশিদ ছাড়া কোনো কোল্ড স্টোরেজ থেকে আলু বের হবে না।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. আফসানা ইয়াসমিন, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটবৃন্দ, সিভিল সার্জন ডা. শফিউল আজম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, সিনিয়র জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা, এনএসআই প্রতিনিধি, বাংলাদেশ প্রতিযোগীতা কমিশনের প্রতিনিধি, ভোক্তা অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক, জেলা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সহ-সভাপতি মাহফুজুর রহমান রাজ, জেলা ক্যাবের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, বগুড়া প্রেস ক্লাব সভাপতি মাহমুদুল আলম নয়ন, কোল্ড স্টোরেজ মালিকবৃন্দ, আলুর পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
-এসআর