ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: আগাম জাতের ধান কাটা প্রায় শেষ, তবে নতুন করে আলু চাষ শুরু হয়েছে। এই সপ্তাহের মধ্যে পুরো দমে শুরু হবে আলু লাগানোর কাজ। এরই আগেই জয়পুরহাটের কালাইয়ে সিন্ডিকেটের কব্জায় আলু বীজ ও সার।
উপজেলার মৌসুম শুরুর আগেই বীজ আলু ও সার কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। ফলে স্থানীয় বাজারে আলু বীজের কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে। ডিলার ও ব্যবসায়ীদের কাছে বার বার ধর্ণা দিয়েও বীজ মিলছে না।
চাহিদা অনুযায়ী মানসম্মত বীজ না পাওয়ায় তাদের মাঝে হাহাকার শুরু হয়েছে। এভাবে কারসাজির মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে তাঁরা টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এ অবস্থায় আলু চাষ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, পর্যাপ্ত জোগান থাকলেও বেশির ভাগ ব্যবসায়ী তাদের দোকান ও গুদামে বীজ আলু ও সার রাখছেন না। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে মণপ্রতি আলু ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা বেশি রেখে অজ্ঞাত স্থান থেকে কৃষকের কাছে বীজ আলু পৌঁছে দিচ্ছেন তারা।
তবে বেশি দামে বীজ আলু ও সার বিক্রির অভিযোগ পেয়ে উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে।
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে লোক দেখানো জরিমানা ছাড়া তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। বীজ আলুর সংকটের অজুহাতে মৌসুমী ব্যবসায়ীরাও খাবার উপযোগী আলু বিভিন্ন কোম্পানির মোড়কে প্যাকেটজাত করছেন। এসব নিম্নমানের বীজ আলু কিনে কৃষকদের প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা আছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলায় সরকারি বিএডিসির আলু বীজ বাজারে এলেও চাহিদা কিছুটা কম। তাই ভাল ফলন পাওয়ার আশায় বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক সিড এ- এগ্রো আলু এবং ওয়ান এগ্রো বীজের দিকে কৃষক ঝুঁকে পড়েছেন। কিন্তু বাজারে ওইসব কোম্পানির বীজ পাওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয় সিন্ডিকেটের কব্জায় চলে গেছে আলুর বীজ ও সার। তাই ডিলার ও ব্যবসায়ীদের দোকানে ঘুরেও আলুর বীজ ও সার পাচ্ছেন না চাষিরা। তবে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দিলেই মিলছে তাদের কাঙ্খিত আলু বীজ ও সার।
এদিকে, বীজ আলুর সংকটের অজুহাতে মৌসুমী ব্যবসায়ীরাও খাবার উপযোগী আলু বিভিন্ন কোম্পানির মোড়কে প্যাকেটজাত করছেন। এসব নিম্নমানের বীজ আলু কিনে কৃষকদের প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের বিয়ালার এলাকার আলু চাষি মিজানুর, মনোয়ার, হেলালসহ অনেকেই জানান, ব্র্যাকের আলুর জন্য ৫ থেকে ৭ দিন খুচরা দোকানে ঘুরেও আলু পাইনি। ওই বীজ আলু কেউই নির্ধারিত দামে কিনতে পারেননি। এই এলাকায় গোপনে ব্র্যাকের বীজ আলু ৪ হাজার ৮০০ থেকে ৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ভোরে ও রাতে ভ্যানযোগে বীজ আলু পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এবার বীজ আলুর ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করছেন।
উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের দোধাইল এলাকার কৃষক বিনয়, দুলাল হোসেন ও একলাপাড়া বুলু মিয়া, সোবহানসহ অনেকেই জানান, এলাকার আলু ও সার ডিলাররা সিন্ডিকেট করে আলু প্রতি বস্তায় ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা বেশি করে বিক্রি করছেন। এছাড়াও সার কিছুটা সংকট দেখিয়ে মানভেদে আলুর প্রতি বস্তায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি করে বিক্রি করছেন। এরপরও চাহিদা অনুযায়ী মিলছে না আলুর বীজ ও সার। এতে তাদের বীজ ও সার বেশি দামে ক্রয় করে চাষ করতে হচ্ছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলার বৈইরাগীহাটের সাব-ডিলার শাহজান জানান, এলাকার চাহিদা অনুযায়ী বর্তমানে বীজ আলু ও সার সরবরাহ কিছুটা কম। তবে দুই/একদিনের মধ্যে চাহিদামতো বীজ আলু ও সার সরবরাহ হবে। সরকার নির্ধারিত দামে সার ও আলুর বীজ বিক্রি করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অরুণ চন্দ্র রায় জানান, এখনো আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ শেষ হয়নি। এ কারণে পুরোদমে আলুর চাষ শুরু হয়নি। চলতি মৌসুমে এই উপজেলায় ১০ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। বর্তমান বাজারে যে পরিমাণ বীজ আলু ও সারের সরবরাহ আছে, তাতে কোনো সংকট থাকার কথা নয়। আমরা সার ও বীজ আলুর বাজার সব সময় তদারক করছি। উপজেলা প্রশাসন বাজার তদারকিতে সহযোগিতা করছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শামিমা আক্তার জাহান জানান, উপজেলায় নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে বীজ আলু বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। উপজেলায় প্রতিটি হাট-বাজার তদারকি করা হচ্ছে। আমরা প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে বীজ আলুর মূল্য স্থিতিশীল রাখার অভিযান অব্যাহত রেখেছি। এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য এলাকার কৃষকরা যেন সঠিক দামে বীজ কিনতে পারেন।