ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: সারা বছরের তুলনায় রমজান এলেই বেড়ে যায় মৌসুমিসহ সব ধরনের ফলের চাহিদা। ইফতারের টেবিলে রোজাদাররা দেশি-বিদেশি ফল রাখতে চান। তাই ইফতারের মেন্যুতে নিয়মিত আইটেম হিসেবেই দেখা যায়- খেজুর, কলা, তরমুজ, পেঁপে, আনারস, বেল, আঙুর, আপেল, কমলা, বরই, আনারসহ বিভিন্ন ফল।
সম্প্রতি বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে গেছে ফলের দামও। এর প্রভাব পড়তে যাচ্ছে মধ্য ও নিম্নবিত্তসহ নিম্নআয়ের মানুষের ইফতারির প্লেটে।
রোজার প্রথম দিন এবং দ্বিতীয় দিন রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন ফলের আড়ত ও দোকান ঘুরে এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্রই চোখে পড়েছে।
এ জন্য ইফতারি থেকে আইটেম কমাতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। নগরীর শালবাগান বাজারে কেনাকাটা করতে আসা গৃহিনী আসমা খাতুন বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় সংসার খরচ চালাতেই হিমশিম খাচ্ছি। তাই ইফতারির আয়োজন আগের মতো থাকছে না। শুধুমাত্র খেজুর আর ছোলা-মুড়ি দিয়ে ইফতারির পরিকল্পনা করেছি। এবারের ইফতারিতে কোনো ফল রাখা সম্ভব হবে না।
একজন সরকারি চাকরিজীবী বলেন, এবারের ইফতারিতে বেশ কয়েকটি আইটেম বাদ দিতে হবে। প্রতি বছর ইফতারের মেন্যুতে ফল, খেজুর, জিলাপী ও রুহ আফজা রাখার চেষ্টা করি। এবার এসব দিয়ে নিয়মিত ইফতার করা হবে না। এগুলো আর আমাদের মতো মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নেই।
তিনি বলেন, এক কেজি ফল কিনতে গেলে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দিতে হচ্ছে। খেজুরের দামও গত বছরের চেয়ে অনেক বেড়েছে। জিলাপীর কেজি ৩০০ টাকা। এ জন্য এগুলো এবারের ইফতারিতে রাখবো না।
সাহেব বাজারে পণ্য কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী মামুনুর রহমান বলেন, গত বছর যেখানে ৭০ টাকা দিয়ে ছোলা কিনেছি, এবার ৯০ টাকা দাম চাচ্ছে। গত বছর ১১০ টাকায় বিক্রি হওয়া প্রতি কেজি চিনি কিনতে হচ্ছে ১৪০ টাকায়। এক কেজি আটা ৪০ টাকা থেকে ৫৫ টাকা হয়েছে। সয়াবিন তেলের দামেও আগুন। প্রতি লিটার কিনতে হয়েছে ১৭০ টাকা। আর ফলের বাজারে তো যাওয়ারই উপায় নেই। প্রতি কেজি আপেল কিনতে ৩০০ টাকা গুনতে হয়। অন্যান্য ফলের দামও অনেক। এমন অবস্থা হলে ইফতারিতে এসব পণ্য রাখবো কীভাবে?
রিকশাচালক আশরাফ বলেন, সব জিনিসের দাম যেভাবে বেড়েছে ডাল-ভাতের জোগাড় করতেই কষ্ট হচ্ছে। ইফতারি নিয়ে আমাদের মতো গরিব মানুষের কোনো ভাবনা থাকে না। আগের বছর ছোলা-মুড়ি কিনে ইফতারি করেছি। এবার হয়তো এগুলো দিয়ে ইফতারি করা সম্ভব হবে না। আমাদের মতো মানুষের ভাত খেয়েই ইফতারি করতে হবে।
বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক শামসুর রহমান বলেন, প্রতি বছর রমজান শুরুর সপ্তাহখানেক আগে ১ মাসের বাজার একবারে করলেও এবার এখনো পর্যন্ত করতে পারিনি। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় সংসার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। এবার ইফতারিতে খেজুরের সঙ্গে ছোলা আর শরবত রাখার চিন্তা করেছি। অন্যবার ফল রাখতাম। এবার সেটি সম্ভব হচ্ছে না।
দেখা গেছে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বাজারে বিদেশি ফলের দাম কেজিতে ১০০-১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। দেশি ফলের দামও ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি।
নগরীর ফল ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশি-বিদেশি সব ধরনের ফল বিক্রি করেন তারা। তাদের মতে, অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় এবার ফলের দাম বেশি। বিদেশি যেকোনো ফল গত বছরের তুলনায় এবার কেজিতে ২০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। দেশি ফলের মধ্যে তরমুজ ছাড়া অন্য ফলের দাম কেজিতে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
‘রোজার মাসে প্রতি বছরই ফলের চাহিদা বেড়ে যায়’ উল্লেখ করে তারা আরও বলেন, গরিব-ধনী সবাই ইফতারে ফল খেতে চায়। তবে এবার দাম বেশি হওয়ায় গরিব মানুষ ফল কেনার সুযোগ তেমন পাচ্ছে না। এতে আমাদের ব্যবসা কমে গেছে এমন নয়। ধনী ও মধ্যবিত্তের এক শ্রেণির ক্রেতা ঠিকই পর্যাপ্ত ফল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
এছাড়াও খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, পবিত্র রমজানের প্রথম দিন এবং দ্বিতীয় দিন রাজশাহীতে গেল কয়েক বছরের তুলনায় ইফতার সামগ্রীর দাম অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে গত বছরের চেয়ে এবার ইফতারি কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে প্রায় দ্বিগুন টাকা।
রাজশাহী মহানগরীর কুমারপাড়া এলাকার ইফতারী ব্যবসায়ী জুয়েল রানা বলেন, বুট, পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি ও জিলাপিসহ বিভিন্ন ইফতার পণ্যের দাম এবার গত বছরের চেয়ে বেশি। প্রায় প্রতিটি পণ্যের মূল্য রমজান শুরু হওয়ার আগে যা ছিল রমজানের প্রথম দিনেই সেই সব পণ্যের মূল্য বেড়েছে। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে বেশি দামেই স্বাদ ও সাধ্যের সমন্বয় ঘটানোর চেষ্টা ক্ররেছি।
কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন বলেন, ইফতারির সব প্রকার পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। শুধু ইফতারি নয়, সব ভোগ্যপণ্যের দাম আজ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। সরকারকে রমজান মাস উপলক্ষে ইফতারিসহ সব পণ্যের দাম মনিটরিংয়ের অনুরোধ জানাচ্ছি।