ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে বিপর্যস্ত জনজীবন। বিশেষ করে বৃষ্টির অজুহাতে রাজশাহীর বাজারে বেড়েছে মাছ, মুরগি ও সব ধরনের সবজির দাম। বৃষ্টিতে সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ার ফলে বেড়ে যায় সব ধরনের কাঁচা বাজারের দাম। গরুর মাংসের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও বেড়েছে মাছ ও মুরগির দামও।
রোববার মহানগরীর সাহেববাজার, সাগরপাড়া, নিউমার্কেট ও শালবাগান ঘুরে দেখা যায়, বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে পাওয়া যাচ্ছে না কোনো কিছুই। এ সপ্তাহে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়, গত সপ্তাহে ছিল ৪৫ টাকা। যেখানে সরকার নির্ধারিত আলুর দাম ৩৬ টাকা। এ সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়, গত সপ্তাহে ছিল ৮০ টাকা। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৭০ টাকায়, গত সপ্তাহে ছিল ৬০ টাকা। যেখানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে সরকার।
এছাড়া, সব সবজির দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা। এ সপ্তাহে পটল ৫০-৬০ টাকা কেজি, লাউ ৫০ থেকে টাকা, কচু ৮০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৬০ টাকা, কাঁকরোল ৮০, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০, করোলা ৫০, শসা ৬০ টাকা, বরবটি ৬০, সজনে ৬০, ঝিঙে ৬০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা, ফুলকপি ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি আদা ২৪০, রসুন দেশি ২৬০, ভারতীয় ২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
সবজি বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টির কারণে পণ্যের সরবরাহ একেবারেই কমে গেছে। সরবরাহ কম থাকার কারণে আড়ৎদাররা দাম বাড়িয়েছেন। সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজের দাম। তবে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
মহানগরীর মাস্টারপাড়ার পাইকারি বিক্রেতা জনি মিয়া বলেন, বৃষ্টির কারণে মোকাম থেকে আমরা প্রয়োজনমতো পণ্য পাইনি। যেটুকু পেয়েছি তাও বাড়তি দামে নিতে হয়েছে। তাই আমাদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হয়েছে।
খুচরা সবজি ব্যবসায়ী সেকেন্দার আলী বলেন, বৃষ্টির কারণে আড়ৎদাররা প্রতিটি সবজির দাম বাড়িয়েছে। আমাদের বেশি দামে কিনে স্বল্প লাভে বিক্রি করতে হচ্ছে।
রাজশাহীর সাহেব বাজারে আসা ক্রেতা মোস্তাক হোসেন বলেন, সব জিনিসের দামই বেড়েছে। কোনো কিছুই আর কম নেই। ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। আলু-পেঁয়াজসহ সব কিছুরই দাম বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, এতো দাম খাবো কী? আমাদের তো আর আয় বাড়ছে না। এখন যদি বৃষ্টির কারণে দাম বাড়ে, নির্ধারিত দর করার পরও তবে তো আমাদের কিছু করার নেই। সরকারি সংস্থার মাধ্যমে বাজার তদারকি করতে হবে। তা না হলে আমাদের মতো পরিবারে বাজার করাই কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে।
এদিকে, এ সপ্তাহে বেড়েছে মাছের দাম। প্রতি কেজি পাঙাস মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, কাতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা, সিলভার কার্প ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কই প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা, দেশি কই ৬৫০ টাকা, বড় তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা, ছোট তেলাপিয়া ২০০।
এছাড়াও, ইলিশ বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে ৫০০ থেকে ১৬০০ টাকায়। বাগদা চিংড়ি ৯০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ১২০০ টাকা, চিংড়ি মাঝারি ১৩০০ টাকা, বোয়াল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা, টেংরা ৬০০ টাকা কেজি, প্রতি কেজি পাবদা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা, শিং মাছ বিক্রি হচ্ছে কেজি ৬০০ টাকায়।
এ সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা দরে। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৯০ টাকা কেজি দরে। দেশি মুরগি বিক্রি হয়েছে ৪৫০ টাকা কেজিতে। হাঁস বিক্রি হয় ৪৫০ টাকা কেজিতে। এই সপ্তাহে মুরগির লাল ডিম ৪৮ টাকা হালি, সাদা ডিম ৪৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা, খাসির মাংস এক হাজার টাকা।
রাজশাহী জেলা বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা অফ্রিন হোসেন বলেন, রাজশাহীতে ভারী বৃষ্টিতে বাজারে সরবারহ নেই। তাই সবজি, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ এসব কিছুর দাম বেড়েছে। মূলত সরবারহ না থাকায় দাম বেড়েছে। আমরা মনিটরিং করছি। আমরা আশা করছি, সব কিছুর দাম আবারও স্বাভাবিক হবে।